1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাপান

৬ মার্চ ২০১২

জাপানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক বছর হতে চললো৷ প্রথমে ভূমিকম্প, এরপর সুনামি এবং সর্বশেষে পরমাণু কেন্দ্রে বিস্ফোরণ, সব মিলিয়ে এক মহা দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিলো জাপান৷ সেই ক্ষত এখনও শুকোয়নি৷ বহু মানুষ এখনও ঘরছাড়া৷

https://p.dw.com/p/14FZP
ছবি: picture alliance / abaca

গত বছরের ১১ মার্চ এক ভয়াবহ দুর্যোগ লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিলো জাপানের বিস্তীর্ণ এলাকা৷ প্রথমে আঘাত হানে নয় মাত্রার প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প৷ ধ্বসে পড়ে বাড়ি ঘর, ফাটল ধরে সেতু আর সড়কগুলোতে৷ ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতেই উপকূলে আছড়ে পড়ে সুনামি৷ সুনামির শক্তিশালী ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা৷ এই ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ৪১ মিটার পর্যন্ত! ভূমিকম্প আর সুনামির আঘাতে জাপান যখন টলোমলো, তখন আসে আরেক মহাবিপর্যয়৷ সুনামির ঢেউয়ের আঘাতে ফুকুশিমার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দেয়াল ভেঙ্গে যায়৷ ভেতরে ঘটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ৷ বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্র আর ভেতর থেকে পরমাণু তেজষ্ক্রিয়তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে৷ ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল বিপর্যয় যেন চোখের সামনে আবারও ভেসে ওঠে৷ স্মরণকালের শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি আর পরমাণু তেজষ্ক্রিয়তা, হিরোশিমা আর নাগাসাকির পর এত বড় দুর্যোগের সামনে আর কখনো পড়েনি জাপানিরা৷ মার্চের সেই দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ বাড়ি ঘর হারিয়ে আশ্রয়চ্যুত হয়েছে লক্ষ লক্ষ জাপানি৷ এখনও অন্তত তিন লক্ষ মানুষ বাস করছে আশ্রয় শিবিরে৷

Japan Erdbeben und Tsunami Fukushima Fähre auf dem Dach in Otsuchi
ছবিই প্রমাণ করে সুনামির ভয়াবহতাছবি: Hiroto Nomoto/AP/dapd

পরমাণু তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার পর ফুকুশিমা ও তার আশেপাশের এলাকার সব মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি অংশ পড়েছিলো সেখানকার ফুটাবা নামে ছোট্ট একটি শহরের মধ্যে৷ সেখানকার সাড়ে ছয় হাজার অধিবাসীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তাদের একজন সুজুকি৷ ৮০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন বাস করেন উত্তর টোকিও'র কাজো এলাকার একটি জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে৷ নিজের বাড়ি ছেড়ে তার আশ্রয় হয়েছে এখন ৫০ বর্গমিটার আয়তনের একটি কক্ষে৷ তার মত আরও প্রায় ৫০০ মানুষ রয়েছে এই আশ্রয় কেন্দ্রের৷ তাদের সকলেই সুজুকির মত বয়স্ক৷ সুজুকি বলেন, ‘‘আমি এখানে একা থাকি৷ আমার পরিবার এখন তোচিগিতে থাকে; আমার মেয়ে, তার স্বামী ও বাচ্চা৷ আমরা এখানে একসঙ্গে এসেছিলাম৷ কিন্তু আমার নাতনির পড়াশোনার জন্য পরে তারা তোচিগিতে আমার জামাইয়ের বাড়িতে চলে গেছে৷''

Japan Erdbeben und Tsunami Fukushima Evakuierung von Einwohner
সব হারিয়ে ফেলাদের একজনছবি: dapd

ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জাপানের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে৷ কয়েক মাসের চেষ্টায় ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিতে যে ক্ষতি হয়েছিলো তা বন্ধ করতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু তেজষ্ক্রিয়তার ভয় এখনও রয়ে গেছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র সারাতে গিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে জাপানের সরকার৷ তবে নিজেদের আন্তরিক চেষ্টাতে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে জাপানিরা৷ জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোদা জানিয়েছেন, এই ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কারো একার ওপর দেওয়া ঠিক হবে না৷ এই দায় দায়িত্ব সকলকেই ভাগ করে নিতে হবে৷ এই ক্ষতি থেকে শিক্ষা নিতেও জাপানিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ জাপানের এই পরমাণু বিপর্যের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও৷ অনেক দেশ এখন পরমাণু জ্বালানি থেকে সরে আসার কথা জোরেশোরে ভাবছে৷ জার্মানি ইতিমধ্যে সেই ঘোষণাও দিয়ে ফেলেছে৷

জাপানে এখন চলছে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভয়াবহতম বিপর্যয় ঠেকাতে এখন সকলেই কাজ করে যাচ্ছে৷ তবে ফুকুশিমার আশেপাশের এলাকাতে এখনও রয়ে গেছে তেজষ্ক্রিয়তা৷ যতদিন এই তেজষ্ক্রিয়তা থাকবে ততদিন সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত রাখা হবে৷ ফলে সুজুকির মত আরও অনেকে হয়তো আর কখনো নিজের ভিটামাটির দেখা আর পাবেন না৷ যদিও তারা এখনও সেই আশাতেই দিন গুনছে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য