জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপাকে জার্মান দ্বীপ
৭ জানুয়ারি ২০১৯ইউরোপেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ প্রকট হচ্ছে৷ জার্মানির একটি দ্বীপ শীঘ্রই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে তাই যথাযথ উদ্যোগের আশায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালতে হাজির হয়েছে দ্বীপের এক পরিবার৷
ঝড়ো হেমন্তের বদলে লাঙ্গেউগের আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল৷ নভেম্বর মাসেও খালি পায়ে সমুদ্রতটে হাঁটা তাই এখন স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তবে নর্থ সি'র লাঙ্গেউগ দ্বীপে এমন অবস্থা আগে ছিল না৷ সর্বশেষ গ্রীষ্মে সেখানে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছিল৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেখানে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷ আর ঝড় জলোচ্ছ্বাসও ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে৷
লাঙ্গেউগের এক রেস্তোরাঁ মালিক এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী যা শুনছি,বিশেষ করে জলবায়ু গবেষক এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা থেকে যা জানতে পারছি, তাতে আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি, কেননা, এমন নয় যে, আমার রেস্তোরাঁ শুধু হারিয়ে যাবে, পুরো দ্বীপই তলিয়ে যাবে৷''
সমুদ্রতটের একেবারে পাশেই মিশায়েল রেক্টেনভাল্ডের রেস্তোরাঁ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় শুরুর দিকেই তাঁর রেস্তোরাঁ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েরাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয়তায় তিনি হতাশ৷ এই বিষয়ে তাই ইইউ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি৷ রেক্টেনভাল্ড বলেন, ‘‘১৯৫০ সাল থেকে এখন অবধি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বিশ সেন্টিমিটার বেড়েছে৷ তার অর্থ হচ্ছে, ঝড়ে জলোচ্ছ্বাস এখন আগের চেয়ে উঁচু৷ ফলে আমাদের ঝুঁকি বাড়ছে৷ আমাদের মিঠাপানির আধার এখানে, উঁচু বালিয়াড়ির ঠিক পরেই৷ নর্থ সি যদি এই বালিয়াড়ি উপচে যায়, তাহলে মিঠাপানির আধারে সমুদ্রের নোনাজল মিশে যাবে৷''
লাঙ্গেউগে ইতোমধ্যে পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মে তা তীব্র হয়৷ দ্বীপটিতে বাসিন্দা মাত্র দু'হাজার৷ তবে দু' লাখের বেশি মানুষ এখানে ছুটি কাটাতে আসেন এবং তাঁরা অনেক পানি ব্যবহার করেন৷ দ্বীপটিতে প্রাকৃতিক পানির আধার এখানে, বালিয়াড়ির ঠিক নীচে৷ বালির নীচে বৃষ্টির পানি জমা হয়৷ এখানে কুয়া রয়েছে, আর সেটাই দ্বীপের মিঠাপানির একমাত্র উৎস৷ এখন সমুদ্র ক্রমশ এই আধারের কাছে আসায় মিঠাপানির আধার ছোট হয়ে আসছে৷
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ইইউ'র উচিত কঠোর জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা৷ আর রেক্টেনভাল্ড পরিবার হচ্ছে দশটি পরিবারের একটি, যারা ইইউ'র বিরুদ্ধে জনগণের জলবায়ু মামলায় অংশ নিচ্ছেন৷ বাকিরা ইউরোপের অন্যান্য দেশ, কেনিয়া এবং ফিজি থেকে এসেছে৷
ইউরোপের আদালত তাঁদের মামলা গ্রহণ করেছে৷ ফলে শুনানি শুরু করা যাবে৷ বাদির এক্ষেত্রে কোনো খরচ নেই৷ বিভিন্ন দাতারা মামলার খরচ জোগাচ্ছে৷ মিশায়েল রেক্টেনভাল্ড বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা ভালো কিছুর ব্যাপারে আশাবাদী৷ প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, এটা নিয়ে গণমাধ্যমে কিছুটা হৈচৈ হবে এবং শুধুমাত্র সেটাই হবে প্রাপ্তি৷ কিন্তু তারা মামলাটি গ্রহণ করেছে৷ এবং এখন আমি ভাবছি, সত্যিই কিছু একটা হতে যাচ্ছে৷ ভালো কোনো প্রাপ্তি হলে তা চমৎকার ব্যাপার হবে, কিন্তু কে জানে কী হবে৷''
আইনি সিদ্ধান্ত যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো, কেননা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে৷ লাঙ্গেউগের বাসিন্দাদের হাতে সময় বেশি নেই৷
প্রতিবেদন: আক্সেল রোভোল্ট/এআই