ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩লাইপসিশে অবস্থিতি জার্মানির একটি সর্বোচ্চ আপিল আদালত বুধবার জানিয়েছে, মুসলমান মেয়েদেরও স্কুলে ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার ক্লাসে অংশ নিতে হবে৷ তবে মুসলিম রীতি মেনে ‘‘বুর্কিনি'' পরা যাবে৷ স্কুল শিক্ষকদের একটি বড় সংগঠন আদালতের এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, এর ফলে আরো স্বচ্ছভাবে পাঠদানের পরিকল্পনা নিশ্চিত করা যাবে৷
একই আদালত অপর এক রায়ে জার্মান ভাষা শিক্ষা ক্লাসে ‘‘ক্যারাবাট'' ছবি না দেখানোর আপিল বাতিল করে দিয়েছে৷ এই ছবিতে তথাকথিত ‘‘কালো জাদু'' দেখানো হয়েছে দাবি করে এক মা তাঁর সন্তানকে এটি দেখা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন৷
দুই ক্ষেত্রেই আপিল আদালত ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়মনীতির মধ্যে সমন্বয় করেছে৷
মরক্কো বংশোদ্ভূত ১৩ বছর বয়সি মেয়েটি ফ্রাংকফুর্টের বাসিন্দা৷ তার কথা হচ্ছে, ‘‘বুর্কিনি'' পরার পরও লজ্জা লাগে৷ আর ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার ক্লাসে অংশ নেয়াটা ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার লঙ্ঘন মনে করে সে৷ সাঁতার ক্লাসে ছেলেদের স্বল্প পোশাক পরার বিষয়েও আপত্তি তার৷
এই কিশোরী গণমাধ্যমকে বলেছে, ‘‘ আমি আমার স্কুলের একমাত্র মেয়ে যে হেডস্কার্ফ পরে৷'' আদালতে দায়ের করা মামলায় মেয়েটি ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার ক্লাসে অংশ নেয়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল৷ এর আগে হেসে রাজ্যের দু'টি নিম্ন আদালত এই মামলা খারিজ করে দিয়েছে৷
লাইপসিশের আপিল আদালতের প্রধান বিচারক ভ্যার্নার নয়মান বলেছেন, ‘‘মুখ, হাত এবং পা ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশ ঢেকে রাখা যায় এমন বিশেষ সাঁতারের পোশাক ‘‘বুর্কিনি'' মুসলিম রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে৷''
হেসের দু'টি আদালতের রায়ের সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করে লাইপসিশের প্যানেল জানিয়েছে, সাঁতারের পোশাক পরিহিত ছেলেদের দেখার ফলে মেয়েটির ধর্মীয় স্বাধীনতা খানিকটা বিঘ্ন হচ্ছে বটে, কিন্তু জার্মানির রাস্তাঘাটেও নিয়মিত ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত অসংখ্য মানুষ দেখা যায়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মে পোশাকের দিকে অনেকেই তেমন খেয়াল রাখে না৷
নয়মান মনে করেন, বহুত্ববাদী সমাজের স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যেক ধর্মের বিষয়গুলি আলাদাভাবে বিবেচনা করা সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘সেক্ষেত্রে পাঠদানে ব্যাপক বিভেদ সৃষ্টি হবে৷''
‘‘ক্যারাবাট'' ছবি নিয়ে তোলা আপত্তি খারিজ করে দিয়ে আদালত জানিয়েছে, সমাজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব স্কুলের৷
জার্মানির ১৪০,০০০ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকের সংগঠন ভিবিই জানিয়েছে, আদালতের এসব রায়ের ফলে স্কুলগুলো আরো নিশ্চিতভাবে তাদের পাঠদান পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে৷
এআই/ডিজি (কেএনএ, ইপিডি, ডিপিএ)