চীনের শহরগুলোতে বাড়ছে মানুষের ভিড়
২১ জানুয়ারি ২০১২এতোকাল গ্রামাঞ্চলেই ছিলো চীনের বেশির ভাগ মানুষের বাস৷ কিন্তু হিসেবটা এবার পাল্টে গেলো৷ গ্রাম নয়, শহরাঞ্চলেই বতর্মান চীনের অধিকাংশ জনগণের বসবাস৷ চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো গতো মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে৷
চীনের জনসংখ্যা এক'শ পঁয়ত্রিশ কোটি৷ এতো লোকের এই বিশাল দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে একান্ন শতাংশ বা ৬৯ কোটি মানুষ বতর্মানে নগরের বাসিন্দা৷ চীনের ইতিহাসে এই প্রথম বারের মত গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেলো নগরবাসী জনতার হার৷
কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতির মানুষেরা খুব দ্রুত তাদের পেশার পরিবর্তন করছে৷ কম সময়ে অধিক মুনাফার আশায় তারা শহরে আসছে৷ বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার এই আধিক্য নগরের ওপর চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷
চীনের নানকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের, জনসংখ্যা ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান লি জিয়ামিন বলেন, নগরায়ণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখান থেকে আর কখনোই পেছনে ফিরে যাওয়া যায় না৷ একবার এই ঝোঁক শুরু হলে এটি কেবল বাড়তেই থাকে৷
এই যে, চীনে নগরবাসী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তা আর কখনোই কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন লি৷ তাঁর মতে, আগামী ২০ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে চীনে নগরবাসী মানুষের হার দাঁড়াবে ৭৫ শতাংশে৷
শহরমুখী মানুষের স্রোত ক্রমাগত বাড়ছেই৷ নিজের আবাস পরিবর্তনকারী এসব মানুষের সিংহভাগই শ্রমজীবী৷ চীনের জাতীয় গণনা সংস্থা গত মে মাসে জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে আরো অন্তত এক কোটি মানুষ কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে এবং নতুন কাজের খোজেঁ তারা গ্রাম ছেড়ে আসবে শহরে৷
বাড়তি মানুষের এতো চাপ সামলাতে গিয়ে স্থানীয় সম্পদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে৷ মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পানি, বিদ্যুত ও পরিবহন বিভাগ৷ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে৷ অধিক জনসংখ্যার কারণে একদিকে সম্পদের বিলি-বন্টনে সমস্যা হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা ও বিশঙ্খলা৷
গ্রাম থেকে শহরে আসা শ্রমজীবী মানুষেরা শহরের স্থায়ী ও পুরোনো বাসিন্দাদের মত সমান সুযোগ সুবিধা পায় না৷ শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় শ্রণীর নাগরীকের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকে৷ কিন্তু সামাজিক এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা৷ ফলে সংঘাতের সম্ভাবনাও বাড়ছে৷
অতিরিক্ত মানুষের ভার বইতে না পেরে বড় নগরগুলো এবার নজর দিয়েছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকে৷ জনসংখ্যার আধিক্য কমানোর জন্য ইতোমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং এবং সাংহাই৷ তবে ছোট শহরগুলো এখনো সে রকম কিছু করে নি৷ বরং সেগুলো এখনো মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছে নগরে ছুটে আসার জন্য৷ আর মানুষও নিজের গ্রাম ছেড়ে, ফসলের মাঠ ছেড়ে ধেয়ে আসছে আলোঝলমল নগরের দিকে৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক