‘জিনহাই বিপ্লব’এর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের অভিষেক হয়
১০ অক্টোবর ২০১১এই বিপ্লবের মাধ্যমে চীনে প্রায় দুই হাজার বছরের সাম্রাজ্যবাদের পতন হয়েছিল৷ আর সূচনা হয়েছিল আজকের গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের৷
বিপ্লবের শুরু হয়েছিল উহান শহরে৷ সেখানেই প্রথম সাম্রাজ্যবাদের সেবক সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের গুলি বিনিময় হয়৷ এরপর সেটা শেষ হয় পরের বছর অর্থাৎ ১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, তৎকালীন ‘কিং রাজবংশ'এর শেষ রাজা পুয়ি'র সিংহাসন ত্যাগের মাধ্যমে৷
সেসময় বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও জনগণের জীবিকা৷ বিপ্লবী নেতা সুন ইয়াত-সেন'এর জাতীয়তাবাদী দল এই বিপ্লবকে সফল করেছিল৷
কিন্তু খুব বেশিদিন জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় থাকতে পারেনি৷ আজকের চীনের কথা ভাবলেই যেখানে কমিউনিজমের চিত্র ভেসে আসে সেটার শুরু হয়েছে এই জাতীয়তাবাদী শক্তিকে হটিয়েই৷ সেটা ছিল ১৯৪৯ সাল৷ সেসময় কমিউনিস্ট পার্টির অগ্রবর্তী সেনাদের ভয়ে ক্ষমতায় থাকা তখনকার জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে আজকের তাইওয়ানে চলে যান৷
ফলে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা কমিউনিস্ট সরকার জাতীয়তাবাদীদের জিনহাই বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান ততটা জাঁকজমকের সঙ্গে করতে রাজি নয় ঠিক যতটা করা হয়েছিল এবছরেরই জুলাইতে, কমিউনিস্ট পার্টির ৯০ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে৷ জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব নিয়ে শুরু হওয়া বিপ্লবের সঙ্গে বর্তমানের কমিউনিজমের যে পার্থক্য সে বিষয়টা যেন সামনে চলে না আসে সেজন্যই সরকারের এই অবস্থান বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ফলে একাডেমিক পর্যায়ে কিছু কিছু অনুষ্ঠান করতে দেয়া হচ্ছেনা বলে বার্তা সংস্থাগুলো খবর দিচ্ছে৷
চীনের রাজনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উইলি লাম বলছেন, বিপ্লব সফল করতে মানুষের শক্তির কথা হয়তো বলা হবে, কিন্তু গণতন্ত্র নিয়ে কোনো কথা হবেনা৷ বরং এর চেয়ে, জনগণের সম্পদ ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপার পাওয়ার হিসেবে চীনের বেড়ে ওঠার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা হবে৷
জিনহাই বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে শনিবার এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চীন৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও৷ ছিলেন ৮৫ বছর বয়স্ক সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন, যার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছুদিন আগে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল৷
অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জিনতাও বলেন, সাম্রাজ্যবাদের উৎখাতের পর চীনের ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে যে, একটা জাতির অর্থনৈতিক উন্নতি ও রাজনৈতিক মতৈক্যের জন্য একদলীয় শাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে একীভূত হওয়ারও আহ্বান জানান৷
তবে বেইজিং নিজেকে জিনহাই বিপ্লবের নেতা সুন ইয়াত-সেন'এর উত্তরাধিকারী মনে করে এবং আজকের চীনে জনগণের যে অর্থনৈতিক উন্নতি সেটা জিনহাই বিপ্লবেরই ফল বলে মনে করা হয়৷
শতবর্ষ উপলক্ষ্যে চীনের সরকারি সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতাতে বিপ্লব সম্পর্কে বিভিন্ন লেখা ছাপা হয়েছে৷ তবে সেগুলোকে গণতন্ত্রের কোনো উল্লেখ নেই৷ এছাড়া বিখ্যাত অভিনেতা জ্যাকি চেন ‘১৯১১' নামে একটি ইতিহাসভিত্তিক ছবি তৈরি করেছেন৷ তবে সেখানেও গণতন্ত্রকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে৷
উহান শহর, যেখানে বিপ্লবের শুরু, সেখানে একটি জাদুঘরও খোলা হয়েছে৷
তবে চীনের সবাই যে জিনহাই বিপ্লব নিয়ে উচ্ছ্বসিত তা নয়৷ যেমন কিন ইয়ংমিন৷ ১৯৯৮ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলায় তাকে জেলে ভরা হয়েছিল৷ সম্প্রতি তিনি মুক্তি পেয়েছেন৷ তিনি বলছেন বিপ্লবের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার বদলে এসেছে স্বৈরতন্ত্র৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম