জলড্র্যাগনের বছর
২৩ জানুয়ারি ২০১২ডাইনোসরের মতো বিরাট এক প্রাণী৷ বিশাল তার ডানা৷ নখগুলো লম্বা আর ভীষণ ধারালো৷ লেজটাও কাঁটাওয়ালা৷ মুখ ভরা সব বড় বড় দাঁত৷ টকটকে লাল রঙের দীর্ঘ এক জিব বের করে হাসছে সে৷ আর তার চোখ ফুঁড়ে বেরোচ্ছে নীলাভ আগুন৷
বলুন তো, কোন প্রাণী এটি? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, ড্র্যাগন৷ ড্র্যাগনের কথাই বলছি৷ বাংলাদেশে এই ড্র্যাগন নিয়ে শুধু শিশুরাই মাতামাতি করে৷ তবে চীনাদের বেলায় গল্পটি কিন্তু একেবারেই আলাদা৷ ছেলে-বুড়ো যেই হোক, ড্র্যাগনকে নিয়ে তাদের যেন আহ্লাদের শেষ নেই৷ এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে৷
চীনের হাজার বছরের রূপকথা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোত হয়ে মিশে আছে কল্পনার প্রাণী ড্র্যাগন৷ ড্র্যাগনকে তাই চীনারা ভাবে নিজের দেশের প্রতিকৃতি বা চিহ্ন৷ চীনাদের নতুন বর্ষবরণ উৎসব শুরু হচ্ছে সোমবার৷ আর এই বছরটিকে পালন করা হচ্ছে ড্র্যাগন বছর হিসেবে৷
ড্র্যাগন বৎসর পালন চীনাদের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়৷ আগে আরো বহুবার এই উৎসব তারা করেছে৷ এবার নববর্ষ এবং ড্র্যাগন বৎসর পালন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট বাজারে ছেড়েছে চীন৷ শুধু কি তাই, চীনাদের দোকানে দোকানে, রাস্তায় রাস্তায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম ড্র্যাগনের বাহারি সব প্রতিকৃতি৷
চীনাদের জ্যোতিষ শাস্ত্রে ধাতু, কাঠ, আগুন, মাটি ও জল এই পাঁচটি মৌল বিভাজন আছে৷ শাস্ত্রানুযায়ী, চীনাদের এ বছরটা হলো ওয়াটার ড্র্যাগন বা জলড্র্যাগনের বছর৷ প্রতি ষাট বছর পর পর এই জলড্র্যাগনের বছরটি ফিরে ফিরে আসে৷ ফলে একবারের বেশি দু'বার এই জলড্র্যাগন বছরকে স্বাগত জানানোর সুযোগ জীবনে কেউ সাধারণত পায় না৷
ড্র্যাগন বছরের এ উৎসবকে উদযাপনের জন্য চীনাদের ঘরে ঘরে চলছে ধুন্ধুমার আয়োজন৷ দিল খোলা হয়ে চীনারা কেনাকাটা করছে৷ ড্র্যাগনের প্রতিকৃতি থেকে শুরু করে মণ্ডা-মিঠাই সবই বিকোচ্ছে বাজারে৷ এই সুযোগে ব্যবসাও চলছে ভালো৷ তাই বণিকেরাও খুশি৷
চীনারা বিশ্বাস করে, চীনের শান্তি, সমৃদ্ধি, ঐশ্বর্য, ক্ষমতা, বৈভব ও সৌভাগ্যের প্রতীক এই ড্র্যাগন৷ তাই বিশ্ববাসীদের উদ্দেশ্যে চীনারা বলছে, যে, ড্রাগনের লাল জিব আর আগুনঝরা চোখ দেখে ভয় পাবার কিছু নেই৷ বড়ো আদুরে আর লক্ষ্মী প্রাণী এই ড্র্যাগন কারোর ক্ষতি কখনো করে না৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন