পাল্টা তোপ দাগল চীন
৬ জুন ২০১৩এটাতে ঠিক ‘টিট ফর ট্যাট' বলা চলে না, কেননা চীনের পাল্টা চাল অনেকটা পাকা দাবাড়ুর মতো হলো৷ চীনে তৈরি সোলার প্যানেলের উপর বাড়তি শুল্ক বসলে লাভবান হবে জার্মানির মতো দেশ৷ অথচ জার্মানি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে বসে আছে যে, তারা সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রেও চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরোধী৷ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং-এর সাম্প্রতিক জার্মানি সফরে সেটা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
‘ঘোড়া সামলাও!
সৌরশক্তির ক্ষেত্রে একাধিক বড় জার্মান কোম্পানি – যেমন সোলার ওয়ার্ল্ড – ব্রাসেলসে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পিছনে ছিল৷ কিন্তু জার্মানি চীনে অন্যান্য বহু পণ্য রপ্তানি করে থাকে, যেমন রাসায়নিক৷ কাজেই সব মিলিয়ে চতুর্দিক বিবেচনা করেই বার্লিনকে তার অবস্থান ঠিক করতে হয়েছে৷ ওদিকে জার্মানি ইউরোপে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী; এছাড়া বেইজিং-এ বলা হয়ে থাকে যে, ব্রাসেলসকে দিয়ে যদি কোনো কাজ করিয়ে নিতে চাও, তাহলে আগে বার্লিনে যাও৷ কাজেই চীন তার পাল্টা চাল ভাবার সময় সন্তর্পণে উত্তর ইউরোপের দেশগুলিকে বাদ দিয়ে আগে দক্ষিণ ইউরোপকে এক হাত নিয়েছে৷
চীনে সুরা রপ্তানি করে থাকে প্রধানত ফ্রান্স ও ইটালি৷ তারাই এবার চিন্তায় পড়বে, জার্মানি নয়৷ জার্মানি তো ইতিমধ্যেই ব্রাসেলসে চাপ সৃষ্টি করে চীনা সোলার প্যানেলের উপর শাস্তিমূলক করের পরিমাণ কম করে এনেছে: আদতে যা ভাবা হয়েছিল, সেই গড়ে ৪৭ শতাংশের তুলনায় প্রাথমিকভাবে মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ৷ সব পক্ষই যে নিজের নিজের স্বার্থের কথা ভাবছে, তা যেমন স্পষ্ট, তেমনই স্বাভাবিক৷ আসল পরিস্থিতি তো কারো অজানা নয়৷ চীন থেকে যে সোলার প্যানেল বেচা হয়, তার দাম ধরা হয় অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদনের খরচের চেয়েও ৮০ শতাংশ নীচে: যাকে প্রাইস ডাম্পিং ছাড়া আর কিছু বলা চলে না৷ এবং এটা সম্ভব একমাত্র সরকারি ভরতুকি থাকলে৷
যত গর্জে তত বর্ষে না
তার ডাম্পিং-বিরোধী এবং ভরতুকি-বিরোধী নীতি অনুযায়ি ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো শুধু একটি দেশ কিংবা অর্থনীতি নয়৷ বৈঠকখানার রাজনীতি আর অন্দরমহলের রাজনীতির মধ্যেও ফারাক থাকে৷ কাজেই ইইউ-কে এমনভাবে এগোতে হচ্ছে যা-তে বেইজিং সেই অন্তর্নিহিত বার্তাটি পায়৷ বেইজিং-এরও একই মনোভাব, একই বার্তা৷ চীন বলছে: ভরতুকি তো আমরা একা দিই না; বাণিজ্য যুদ্ধেও আমাদের বিশেষ আগ্রহ নেই৷ অর্থাৎ এবার শুরু হবে আপোশের খোঁজ, যা-তে দু'পক্ষেরই মুখরক্ষা হয়৷
জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী ফিলিপ রোয়েসলার ইতিমধ্যেই একটি সতর্ক প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পুনরায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ডাক দিয়েছেন এবং ব্যাপকতর বাণিজ্য লড়াইয়ের বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ রোয়েসলার বলেছেন একটি ‘‘ন্যায্য নির্মাণকাঠামোর'' কথা – অর্থাৎ এমন একটি আপোশ যা-তে দু'পক্ষই লাভবান হয়৷ চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একদিকে যেমন তাদের আলাপ-আলোচনায় আগ্রহের কথা বলছে, অপরদিকে তেমন হুমকি দিচ্ছে, তারা নাকি দেশি সুরা শিল্পের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে; ইউরোপ থেকে ওয়াইন আমদানি সম্প্রতি অতি দ্রুত হারে বেড়েছে, ইত্যাদি৷
কথাটা সত্যি বৈ মিথ্যে নয়৷ চীন গতবছর ৪৩ কোটি লিটার ওয়াইন আমদানি করে, তার দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপ থেকে৷ চীনের শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ি এক ফ্রান্স থেকেই আসে ১৭ কোটি লিটার ওয়াইন৷ ওদিকে ২০১২ সালে ফ্রান্সের মোট সুরা রপ্তানির ৯ শতাংশ, যার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ইউরো, গেছে চীনে৷ কিন্তু চীনা সুরা প্রস্তুতকারকদের অভিযোগ দৃশ্যত স্পেন থেকে আমদানি করা অতি সস্তা ওয়াইনের কারণে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)