1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিনির প্রাকৃতিক বিকল্পের সন্ধান

১ এপ্রিল ২০১৯

মিষ্টির প্রতি দুর্বলতা অনেকেরই আছে৷ আবার বেশি মিষ্টি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়৷ চিনির বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম সুইটনারের চল বাড়লেও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা তাই প্রকৃত প্রাকৃতিক বিকল্পের খোঁজ করছেন৷

https://p.dw.com/p/3G0Ky
ছবি: HR

জার্মানির ব্রেন লিমিটেড নামের বায়ো-ইকোনমি কোম্পানির গবেষকরা এমন এক পদার্থের খোঁজ করছেন, যা চিনির মতো মিষ্টি হলেও তার উৎস প্রাকৃতিক হতে হবে৷ সেই সঙ্গে আরেকটি কড়া শর্ত পূরণ করতে হবে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি ড. কাটিয়া রিডেল বলেন, ‘‘আমরা এমন সুইটনার সৃষ্টি করতে চাই, যার স্বাদ হবে একেবারে চিনির মতো অথবা তা মিষ্টির স্বাদ বাড়িয়ে দেবে৷ ফলে কম চিনি সত্ত্বেও স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকবে৷'' 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃত্রিম সুইটনারের মধ্যে আসল মিষ্টির স্বাদ পাওয়া যায় না৷ এমনই এক বিকল্প হলো অ্যাসপার্টাম৷ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সেই পদার্থকে নিরাপদ হিসেবে ছাড়পত্র দিলেও সমালোচকরা তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে দেন৷ তাঁদের মতে, মাথাব্যথা বা দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷

সুইটনার রক্তে শর্করার মাত্রার উপরও প্রভাব রাখতে পারে৷ এমনকি মিষ্টি খাবার ইচ্ছাও বাড়িয়ে দিতে পারে৷ ফলে মানুষ বাস্তবে আরও বেশি মিষ্টি খেয়ে ফেলে৷ তখন দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ওজন কমার বদলে আরও বেড়ে যেতে পারে৷

ইইউ-অনুমোদিত সব সুইটনারই কৃত্রিম পদার্থ দিয়ে তৈরি৷ স্টেভিয়া তার একমাত্র ব্যতিক্রম৷ ২০১১ সালে প্রথম প্রাকৃতিক সুইটনার হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল৷ কিন্তু সীমিত কিছু ক্ষেত্রেই সেটি প্রয়োগ করা সম্ভব৷ ড. রিডেল বলেন, ‘‘সব পণ্যের সঙ্গে স্টেভিয়া ভালোভাবে খাপ খায় না৷ যেমন দুগ্ধজাত পণ্যে স্টেভিয়ার প্রয়োগ বেশি দেখা যায় না, কারণ সে ক্ষেত্রে স্বাদ পাওয়া যায় না৷ আমরা স্টেভিয়ার চেয়েও ভালো সুইটনারের সন্ধান করছি৷''

সেই লক্ষ্য পূরণ করতে গবেষকরা প্রকৃতির মধ্যে কর্নুকোপিয়া নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ করছেন৷ এই কোম্পানি একটি ডিপ ফ্রিজকে সিন্দুক হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে৷ বিভিন্ন গাছপালা ও ছত্রাক থেকে নিষ্কাশিত কোষের নমুনা ও কম্পাউন্ড তাতে রাখা আছে৷ সেটি বিশাল এক সংরক্ষণাগার৷ বহু বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত নমুনা সেখানে রাখা আছে৷ 

এই সব নুমনা থেকেই ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত মানের সুইটনার সৃষ্টি হবে৷ ড. কাটিয়া রিডেল বলেন, ‘‘এটা অনেকটা পরিচিত জীবের মধ্যেই গোপন সম্পদ খোঁজার মতো অভিজ্ঞতা৷ আমরা রেউচিনি বা চিলি পেপারের মতো সাধারণ গাছপালা এবং সেগুলির উপাদান পরীক্ষা করে দেখি, তার মধ্যে মিষ্টি স্বাদ রয়েছে কিনা৷

এই গবেষণা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল৷ কিন্তু কৃত্রিম জিব বা স্বাদ মাপার যন্ত্র ছাড়া সেই কাজ কার্যত অসম্ভব বলা চলে৷ ড. রিডেল বলেন, ‘‘এই জিব দিয়ে, এই কৃত্রিম কোষের সাহায্যে আমরা হাজার হাজার পদার্থের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করতে পারি৷ সেগুলির স্বাদ মিষ্টি না তিক্ত, অত্যন্ত কম সময়ে তা জানতে পারি৷''

তবে কৃত্রিম জিব একা কোনো কিছু বাছাই করতে পারে না৷ একমাত্র আসল জিবের সাহায্যে সূক্ষ্ম স্বাদের পার্থক্য শনাক্ত করা সম্ভব৷ ড. কাটিয়া রিডেল বলেন, ‘‘কিছু সুইটনার অত্যন্ত দ্রবণীয়৷ সেগুলি পানীয়ের জন্য আদর্শ৷ অন্য অনেক সুইটনার তেমন দ্রবণীয় না হলেও সেগুলির স্বাদ খুব ভালো৷ ক্যান্ডি বার বা চুইয়িং গামে তা কাজে লাগানো যেতে পারে৷''

ব্রেন কোম্পানি এর মধ্যে ৬০টি সম্ভাবনাময় সুইটনার আবিষ্কার করেছে, যা বিভিন্ন ধরনের পণ্যে প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ গবেষকরা সেগুলি খাদ্য প্রস্তুতকারকদের হাতে তুলে দিয়েছেন, যাতে তাঁরা আরও গবেষণা চালাতে পারেন৷

প্রতিবেদন: নিনা খ্মিলেভস্কি/এসবি