ঘুস দিয়ে চাকরিপ্রাপ্তদের ‘পক্ষে’ কেন মমতা?
১৫ মার্চ ২০২৩মঙ্গলবার রাতে আলিপুর আদালতে অরবিন্দ ঘোষের মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ''কথায় কথায় চাকরি খাবেন না। চাকরি গেলে খাবে কী?'' তিনি বলেন, ''আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে আমার গালে চড় মারুন। কিছু মনে করব না। কথায় কথায় তিন-চার হাজার চাকরি চলে যাচ্ছে। তাদের সংসার আছে। মা-বাবা আছে। তাদের চলবে কী করে?''
মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়িতে দুইজনের আত্মহত্যার প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, ''যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। কিন্তু খাওয়ার অধিকারটুকু কেড়ে নেবেন না। ছেলেমেয়েগুলো যেন ভিক্টিমাইজ না হয়।'' মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ''আমি ক্ষমতায় এসে সিপিএমের একজনেরও চাকরি কেড়ে নিইনি।''
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন, তার এখন নিজেরই আদালতে গিয়ে সওয়াল করতে ইচ্ছে করে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, এ সবই তার ব্যক্তিগত মতামত।
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, দুর্নীতিকরে যে সব শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও ডি কর্মীরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের চাকরি বাতিল করা হলো। এদের মধ্যে অনেকে খালি খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে। অনেকে কম নম্বর পেয়ে চাকরি পেয়েছে। যোগ্যতামান পার হওয়া ছাত্রছাত্রীরা এখন রাস্তায় বসে দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ জানাচ্ছে। আর অযোগ্যরা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝির চাকরি গেছে
এই চাকরি যাওয়ার তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইঝি বৃষ্টি মুখোপাধ্য়ায়ের নামও আছে বলে বিভিন্ন
সংবাদমাধ্যমের খবর। বৃষ্টি হলেন মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাইয়ের মেয়ে। তিনি কুসুম্বা গ্রামে থাকেন।
বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষ বঙ্গ টিভিকে বলেছেন, ''নিজের পরিবারকে তো আগে দেখতে হবে। পরকে সেবা করার আগে নিজের সেবা করতে হবে। তাই ভাইঝি চাকরি পেয়েছিলেন এবং সেই চাকরি গেছে। তার নিজের ভাইপোকে নিয়ে হাজারো অভিযোগ।''
কেয়া বলেছেন, ''তার ভাইয়ের বউ সমাজসেবা করে কোটি কোটি টাকা করেছেন। কী সমাজসেবা করলে কয়েক কোটি টাকা পাওয়া যায় আমার জানা নেই। নিন্দুকরা বলে কালীঘাট এলাকায় সব প্লট, বাড়ি সবই না কি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। আগে নিজের সেবা, তারপর পরের সেবা।''
তীব্র প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর কথার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণদের কথাই ভাবছেন। যোগ্যরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাদের কথা ভাবছেন না। যারা শূন্য পেয়েছে, তাদের চাকরিতে রাখার কথা ওঠে কী করে।''
সিপিএম জানিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে তারা তৃণমূল, যারা চাকরি পেয়েছে, তারা অযোগ্য এবং পয়সা দিয়ে চাকরি পেয়েছে।
''মুখ্যমন্ত্রী কেন এক পক্ষের কথা বলবেন?''
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী কেন এক পক্ষের হয়ে কথা বলবেন? বিচার চলছে। বিচারপতিরা কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তখন কেন মুখ্যমন্ত্রী সেই বিষয়ে মন্তব্য করবেন? কেনই বা নিজের ভাইঝির চাকরি যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর তিনি সোচ্চার হলেন?''
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল তখন মুখ্যমন্ত্রী কেন এই ধরনের কথা বললেন। ভারতীয় আইন তো বলে, কেউ অন্যায় করলে, আইন ভাঙলে শাস্তি পেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাহলে কী করে ওই কথা বললেন? কী শাস্তি হবে সেটাও তিনি বলে দেবেন!''
আদালত আবমাননার অভিয়োগ
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এই সব কথা বলে আদালত অবমাননা করেছেন। তখন বিচারপতি শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য জানান, বিষয়টি নিয়ে বিকাশ ভট্টাচার্য মামলা করতে পারেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাাজার)