আপিল করবে দু’পক্ষই
১৫ জুলাই ২০১৩যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে – একথা উল্লেখ করে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল বলেছে, তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তবে আযমের বয়স এবং অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে তাকে আমৃত্যু কারাগরে রাখার জন্য ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷
রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, গোলাম আযম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই সংগঠনের প্রধান ছিলেন৷ তার নির্দেশে এবং পরিকল্পনাতেই একাত্তরে বাংলাদেশে হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধগুলি সংঘটিত হয়৷
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, আদালত বলেছে তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের৷ তাই তার মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল৷ কিন্তু বয়স বিবেচনা করে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে৷ কিন্তু একাত্তরে তারা বয়স বা নারী, পুরুষ অথবা শিশু বিবেচনা করেনি৷ তারা নির্বিচারে হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, করেছে লুটতরাজ৷ তাই গোলাম আযমেরও বয়স বিবেচনায় নেয়া অধ্যাপক মামুনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ তবে বিশ্বের অনেক দেশে বয়স বিবেচনায় অপরাধীকে আমৃত্যু কারাগারে রাখার ঘটনা আছে৷ সে দিক থেকে দেখতে গেলে, এই রায়কে অগ্রহণযোগ্য মনে করেন না তিনি৷ তবে সার্বিক পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শাস্তি কর্যকর হতে বছরের পর বছর লেগে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷
বীরাঙ্গনা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী অবশ্য এই রায়ে পুরোপুরি হতাশ৷ তিনি মনে করেন, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো শাস্তি নেই গোলাম আযমের জন্য৷ তিনি বলেন, গোলাম আযম একাত্তরে মানবতাবিরোধী সব রকম অপরাধের মূল নায়ক৷ কোনো বিবেচনাতেই তার মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর সুযোগ নেই৷ তিনি বলেন, এরপর তো তাকে চিকিত্সার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হবে৷ তাই তাঁর কথায়, দেশের মানুষ এই রায় মানবে না৷
এদিকে গোলাম আযমের আইনজীবীদের একজন তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই রায় ন্যায়ভ্রষ্ট এবং আবেগতাড়িত৷ তাই এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ এছাড়া তিনি আদালতের রায়ে একাত্তরে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলারও সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন, আদালত তার আওতার বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করেছে৷
ওদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকার এই রায়ে সন্তুষ্ট৷ আদালত স্বাধীনভাবে রায় দিয়েছে৷ তিনি এ রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন৷ প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, তারা মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিলেন৷ এক্ষেত্রে রায়ের ‘কপি' পেলে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি৷
অন্যদিকে গণজাগারণ মঞ্চ স্বাভাবিকভাবেই এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ তারা শাহবাগে ইতিমধ্যেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে৷