গুল্মলতা থেকে আসবাব
১৭ মার্চ ২০১৬ডিজাইনার ল্যাম্পশেড, দেখলেই বোঝা যায়: হালফ্যাশনের ডিজাইনারদের হাতে তৈরি৷ অথবা হয়ত একটা ডিজাইনার চেয়ার – কিন্তু এরও রহস্য আছে৷ এ সবই কেল্প বা সি-উইড, অর্থাৎ সামুদ্রিক গুল্মলতা থেকে তৈরি৷
এই গুল্ম আসে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেনের সমুদ্রসৈকত থেকে৷ এখানে যে সি-উইড সাগরের জলে ভেসে আসে, অধিকাংশ লোকের কাছে তা আবর্জনা ছাড়া আর কিছু নয়: সপসপে, হড়হড়ে, আধপচা কিছু একটা৷ ইয়োনাস এডভার্ড আর নিকোলাই স্টেনফাট থমসেন সেই সামুদ্রিক গুল্মকেই তাদের কাঁচামাল করে তুলেছেন৷ এডভার্ড বলেন, ‘‘সি-উইড এমন একটি বস্তু, যা দুনিয়ার সর্বত্র পাওয়া যায়, যা সবাই জোগাড় ও ব্যবহার করতে পারেন৷ ডেনমার্কের মানুষ সহজ-সরল ডিজাইন খুব পছন্দ করেন৷
আবার এমন কাঁচামাল ব্যবহার করা, যা দিয়ে নানা ধরনের কাজ করা যায়, সেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ – মানুষজনকে দেখানো যে, এই ধরনের কাঁচামাল আমাদের চারপাশে আর আমরা তা নানাভাবে ব্যবহারও করতে পারি৷''
নিজেদের স্টুডিওতে সি-উইড-কে প্রসেস করেন দুই শিল্পী৷ রং অনুযায়ী ভাগ করেন, তারপর ভেজা জামাকাপড়ের মতো বাতাসে শুকোতে দেন৷ শুকনো সি-উইড গুঁড়ো করা হয়৷ টাটকা কুড়নো গুল্ম ব্যবহার করার ফলে কোনো গন্ধ হয় না৷
‘মধ্যযুগীয় রসায়নশাস্ত্রের মতো'
রয়াল ডেনিশ অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর স্নাতক নিকোলাই স্টেনফাট থমসেন বলেন, ‘‘ডিজাইনার হিসেবে আমরা এখানে নতুন কিছু একটা করার চেষ্টা করছি; মধ্যযুগীয় রসায়নশাস্ত্রের মতো সি-উইড থেকে কাজের জিনিস তৈরির চেষ্টায় আছি; আবার ভাবছি, সে পদার্থ দিয়ে কি ধরনের আকার হবে বা কী ধরনের ডিজাইন করা যাবে৷''
সি-উইড, জল, আঠা আর কাগজের টুকরো মিশিয়ে এই পদার্থটি তৈরি করা হয়েছে – যা থেকে ল্যাম্পশেড বানানো সম্ভব৷ চীনেমাটির বাসনের মতোই তা চুল্লিতে পোড়াতে হবে৷ তার ফলে ঘন বাদামি থেকে হালকা সবুজ, সব ধরনের রং বেরিয়ে আসবে৷ দুই ডিজাইনার সি-উইড থেকে চেয়ারও সৃষ্টি করেছেন৷
সেই চেয়ার শুধুপ্রোটোটাইপ হলেও, ৮০ কিলো ওজনের মানুষের ভার বইতে পারে৷ এডভার্ড বলেন, ‘‘এখনো আমরা মূল পদার্থটার বিকাশ ঘটাতে, সেটাকে কিভাবে ব্যবহার করা যায়, তা ভেবে বার করতে ব্যস্ত৷ এটা শুধু চেয়ার তৈরির জন্যে ব্যবহার হবে, বলে আমার মনে হয় না৷ এটা এমন একটা বহুল প্রকৃতির পদার্থ হবে, যা কৃষি কিংবা বাড়ি তৈরির কাজেও ব্যবহার করা চলবে৷''
সামুদ্রিক গুল্মলতা থেকে আবার খুব ভালো সার হয়৷ তবে সে আরেক কাহিনি৷