গুরুদ্বারকে মসজিদ বানানোর চেষ্টা, পাকিস্তানকে বার্তা ভারতের
২৮ জুলাই ২০২০ফের বিতর্কে জড়ালো ভারত-পাকিস্তান। বিতর্কের কারণ একটি শিখ সম্প্রদায়ের গুরুদ্বার (শিখদের পবিত্র স্থান বা মন্দির)। লাহোরে অবস্থিত ওই ঐতিহাসিক গুরুদ্বারটি প্রশাসন মসজিদে পরিণত করতে চাইছে বলে শোনা যাচ্ছে। তারই বিরোধিতা করে পাকিস্তান হাই কমিশনে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, ওই গুরুদ্বারটি ঐতিহাসিক। সেটিকে যাতে মসজিদে রুপান্তরিত করা না হয়, তার ব্যবস্থা নিক পাক সরকার। একই সঙ্গে পাকিস্তানের মাটিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
লাহোরের শহীদি আস্থান ভাই তারুজি গুরুদ্বারটি বাস্তবেই ঐতিহাসিক। ১৭৪৫ সালে ভাই তারু সিংহের চরম ত্যাগের কথা মাথায় রেখেই ওই গুরুদ্বারটি তৈরি হয়েছিল। অমৃতসরের বাসিন্দা ভাই তারু সিংহ মূলত কৃষিকাজ করতেন। সে সময় ভারতে মোগলরাজ। পাঞ্জাব অঞ্চলে মোগল তহসিলদারের অত্যাচার বাড়ায় শিখদের একটি দল বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় মোগলরা বহু শিখকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করছিল বলেও অভিযোগ।
এরই প্রতিবাদে মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন তারু সিংহ। ধরাও পড়ে যান। প্রবল নির্যাতন সত্ত্বেও ধর্মান্তরিত হতে রাজি হননি তিনি। এমনকী, তাঁর চুলও কেটে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। যা শিখদের পবিত্র বস্তু বলে মনে করা হয়। ১৭৪৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ভাই তারুজিকে মনে রেখেই লাহোরে তৈরি হয়েছিল শহীদি আস্থান ভাই তারুজি গুরুদ্বারটি। এখনও ভারত এবং পাকিস্তানের শিখ সম্প্রদায়ের কাছে ওই গুরুদ্বারটি অত্যন্ত পবিত্র। অভিযোগ, পাকিস্তান প্রশাসন ওই গুরুদ্বারটিই মসজিদে পরিণত করতে চাইছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক পাকিস্তানকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বেশ কিছু সংগঠনও পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে আর্জি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুন। শিখ সম্প্রদায় পরিচালিত আকালি দলের নেতা মননিজনদার সিংহ সিরসা ইমরান খানকে খোলা চিঠি লিখেছেন। পাকিস্তানে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরাও এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন।
পাকিস্তান প্রশাসন অবশ্য এখনও বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া দেয়নি। ভারতে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, শিখরা যে কারণে প্রতিবাদ করছেন তা সঙ্গত। তবে ভারত যে ভাবে পাকিস্তানকে এ বিষয়ে বার্তা দিয়েছে, তা বিতর্কিত। বাবরি মসজিদ-রামজন্মভূমি প্রশ্নে ভারত কখনওই প্রতিবেশী রাষ্ট্রদের নাক গলাতে দেয়নি। সব সময়ই বিষয়টি অভ্যন্তরীণ বলে দাবি করেছে। দেশের সংখ্যালঘুদের ভাবাবেগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। ফলে এখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলানো পাক সরকার কী চোখে দেখবে, তা ভেবে দেখতে হবে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)