গাছ-বাড়ি থেকে গাছ-হোটেল
২৬ নভেম্বর ২০১৪জার্মানির একেবারে পুব কোণায়, পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে জঙ্গলের মধ্যে একটা গ্রাম, যেন কোনো ফ্যান্টাসি ফিল্মের দৃশ্যপট! গাছের সঙ্গে লাগোয়া ন'টি কাঠের বাড়ি, যে গুলোতে সিঁড়ি কিংবা মই দিয়ে চড়তে হয়৷ এটাই হল ‘গাছ-বাড়ির হোটেল' যার পোশাকি নাম সংস্কৃতি-দ্বীপ তপোবন৷
ড্রেসডেন শহর থেকে আগত দুই বান্ধবী, লিজা কিয়র্স্টেন এবং পাউলিনা উর্সিনস এখানে গাছের মাথায় রাত কাটাতে চান৷ এই রূপকথার কাঠের বাড়িগুলোর মতো দেখতে হোটেলে এক রাতের ভাড়া ১৮০ ইউরো কিংবা তার বেশি হতে পারে৷
প্রত্যেকটি গাছ-বাড়ি কোনো একটি বিষয় ও রূপকথার কোনো কাল্পনিক চরিত্রকে নিয়ে সৃষ্টি৷ আরামের উপকরণ সব বাদ দেওয়া হয়েছে: এখানে না আছে কলের জল, না বিদ্যুৎ, না হিটিং৷ টেলিভিশন, ইন্টারনেট কিংবা রুম সার্ভিসও অনুপস্থিত৷ তবে ও সব বাদ দিয়ে থাকতে রাজি হলে, চারতলা উঁচু থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন ভরানো যাবে৷
‘ট্রি হোটেল'
২০০৫ সালে ইয়ুর্গেন ব্যার্গমান এই ‘ট্রি হোটেল'-টি তৈরি করেন৷ ইয়ুর্গেন হলেন শিল্পী৷ গাছ-বাড়ির বেশ কয়েকটি তৈরি হয়েছে তাঁর নিজের নকশায়৷ জার্মান পর্যটন পুরস্কার বিজয়ী ইয়ুর্গেন ব্যার্গমান বলেন: ‘‘আমি ছোটবেলায় এই ধরনের সব গাছ-বাড়ি দেখে বড় হয়েছি৷ আমি নিজেও বস্তুত একটি গাছ-বাড়িতে থাকি, আমার অফিসও একটি গাছ-বাড়িতে৷ আমার অতিথিদেরও আমি সে সুযোগ দিতে চাই৷''
এখান থেকে দু'শো কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে রাজধানী বার্লিন: সেখানে পাওয়া যাবে হালফ্যাশনের গাছ-বাড়ি৷ চার মিটার উচ্চতায়; বাড়ির দেয়াল অ্যালুমিনিয়ামের পাতে মোড়া৷ বাড়ি দু'টি ভাড়া নেওয়া যায়; ভাড়া পড়ে সপ্তাহে ৮০০ ইউরো কিংবা তার বেশি৷ শোবার ঘর, বসবার ঘর আর স্নানের ঘর মিলিয়ে প্রায় ৩০০ স্কোয়্যার ফুট৷ গাছ-বাড়ি দু'টির মালিক কলিয়া স্টেগেমান তাঁর শৈশবের স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি কিশোর এ ধরনের একটি গাছ-বাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখে বলে আমার ধারণা৷ আমার ক্ষেত্রে সেটা আমার বয়সের অনুপাতে এই চেহারা নিয়েছে৷ আসলে এটা খেলা, অরণ্য প্রকৃতি, জানার কৌতূহল, এ সব মিলিয়ে একটা কিছু৷ হয়ত নতুন কিছু পরীক্ষা করে দেখার আনন্দ; আবার আরামপ্রদ, প্রথাগত বাড়ি তৈরি করার আত্মপ্রসাদটাও রয়েছে৷''
ডিজাইনার গাছ-বাড়ি
সুইডেনের বোডেন পৌর এলাকাটি মেরুবৃত্তের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে৷ কেন্ট ও ব্রিটা লিন্ডভাল ২০১০ সালে এখানে তাঁদের ‘ট্রি হোটেল'-টি খোলেন৷ কেন্ট লিন্ডভাল বলেছেন: ‘‘গাছের মগডালে এ সব জিনিস করাটা একটা মজার ব্যাপার....এখানে আমাদের চারপাশে একটিই বস্তু আছে: একগাদা গাছ৷ কাজেই আমাদের তা নিয়েই কিছু একটা করতে হয়েছে৷''
মাটি থেকে ছ'মিটার উঁচুতে ছ'টি ডিজাইনার গাছ-বাড়ি – প্রত্যেকটি বাড়ি একক ও অনন্য; প্রতিটি বাড়িই ভিন্ন ভিন্ন স্থপতির নকশা অনুযায়ী তৈরি৷ কটেজ-গুলো ১৬০ থেকে ৫৬০ স্কোয়্যার ফুট৷ আসবাবপত্র যথাসম্ভব কম – কিন্তু দামি৷ দু'জনের থাকার এক রাত্তিরের ভাড়া ৫০০ ইউরো কিংবা তার বেশি৷ কেন্ট লিন্ডভাল জানালেন: ‘‘আমরা চেয়েছিলাম একটা ডিজাইনার পরিবেশ প্রেজেন্ট করতে৷ ট্রি হাউসে থাকার অভিজ্ঞতাকে আনন্দদায়ক, সুন্দর একটা কিছু হতে হবে৷''
যে বাড়ি বাতাসে দোলে
ফেরা যাক জার্মানির গাছ-বাড়ি হোটেলে৷ লিজা কিয়র্স্টেন ও তাঁর বান্ধবী হোটেল-সংলগ্ন অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দিনটা কাটিয়েছেন৷ লিজা কিয়র্স্টেন বলেন: ‘‘একটা সাধারণ হোটেলে তো সবসময়েই ঘর নেওয়া যায়, সব জায়গাতেই৷ অবশ্যই সেখানে আরাম অনেক বেশি৷ কিন্তু এখানে আছে অ্যাডভেঞ্চার, নতুন সব অভিজ্ঞতা৷ আমরা একটা জঙ্গলের মধ্যে রয়েছি – এমনকি বাড়িটাও দোলে! সেটাই তো একটা দারুণ ব্যাপার৷''
গাছ-বাড়ি হোটেলগুলো পরস্পরের থেকে যতই অন্যরকম হোক না কেন, একটি বিষয়ে তারা এক: সন্ধ্যায় বাতাসের শব্দ আর পাতার মর্মরে অতিথিদের চোখে ঘুম নেমে আসতে বাধ্য৷