নোংরা জলের সেচ দেওয়ার বিপদ
২২ জুলাই ২০১৭সারা বিশ্বে পায়খানা, স্নানের ঘর ও নালা-নর্দমা থেকে আসা নোংরা জল দিয়ে যে পরিমাণ চাষের জমিতে সেচ দেওয়া হয়, তার আয়তন প্রায় জার্মানির সমান, অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি হেক্টার, বলে ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স' জরিপে জানানো হয়েছে৷
যারা এ ধরনের জমিতে ফলানো শাকসবজি বা ফলমূল খান, তাদের নানা ধরনের প্যারাসাইট ও ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণুর সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি রয়েছে৷ চীন, ভারত, পাকিস্তান, মেক্সিকো ও ইরানের বড় বড় শহরগুলির প্রায় ৯০ কোটি বাসিন্দা এই ঝুঁকির মুখে রয়েছেন, বলে গবেষকদের হিসাবনিকাশে দেখা যাচ্ছে৷
এই সব দেশের বড় শহরগুলিতে ময়লা জল পরিশোধনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আশপাশের চাষিরা সেই অপরিশুদ্ধ নোংরা জল তাদের খেতখামারে সেচের কাজে ব্যবহার করছেন৷ অংশত তারা এর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন নন, আবার অনেক ক্ষেত্রে চাষিরা পরিকল্পিতভাবে পয়ঃপ্রণালির অপরিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছেন, কেননা সেই পানি জমিতে সার দেওয়ার কাজও করে থাকে, অর্থাৎ চাষিদের আলাদা করে সার কিনতে হয় না৷ ডয়চে ভেলেকে এ কথা জানিয়েছেন পাই ড্রেকসেল, যিনি শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক পানি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পগুলির দায়িত্বে রয়েছেন এবং নোংরা জলের সেচ সংক্রান্ত জরিপটিতেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ বিশ্বের অনেক এলাকায় চাষিদের পক্ষে সেচের জন্য বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব নয়, বলে জানালেন ড্রেকসেল৷ ইতিপূর্বে তিনি ঘানায় ১১ বছর কাজ করেছেন: দৃশ্যত সেখানে শহর বা শহরতলির চাষিদের সেচের জন্য নোংরা জল ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই৷
অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাষিদের কাছে পানি পানিই৷ সারা বিশ্বে ব্যবহৃত পানির মাত্র ১০ শতাংশ পরিশোধন করা হয়; বৃষ্টির জলের সঙ্গে সেই অপরিশুদ্ধ পানি নদী, নালাতে গিয়ে পড়ে ও পানীয় জলের সঙ্গে মিশে পুনরায় মানুষের ব্যবহারযোগ্য বলে পরিগণিত হয়৷ ‘‘কিন্তু পান বা সেচের জন্য যা অনুমোদিত, তার অনেক বেশি পরিমাণ রোগজীবাণু সেই পানিতে থেকে যায়'', বলে জানালেন ড্রেকসেল: বিশেষ করে কলেরা ও অন্যান্য পেটের রোগের জীবাণু, যা থেকে বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের বিপদ ঘটতে পারে৷
শাকসবজি ধুয়ে নিতে ভুলবেন না!
ঘানার মতো দেশে – এবং শুধু সেখানেই নয় – ছোট-বড় শহরের চারপাশে খামারচাষিরা সবজির চাষ করে থাকেন৷ এর একটি কারণ হলো, রোজের বাজার হিসেবে কাঁচা সবজি টাটকা থাকা প্রয়োজন; শহরের উপকণ্ঠ থেকে বাজারের দূরত্ব কম ও পরিবহণ সহজসাধ্য৷ দ্বিতীয়ত, শহরের মানুষরাই কেনা শাকসবজির উপর বেশি নির্ভর, কাজেই বাণিজ্যিক সুবিধাও রয়েছে৷ মুশকিল এই যে, সবজির চাষে দানাশস্য উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি পানি লাগে৷ যে কারণে ঘানায় দশ লাখ নগরবাসী বস্তুত নোংরা জলের সংস্পর্শে আসা শাকসবজি খেয়ে থাকেন, বলে জানালেন ড্রেকসেল৷
সারা বিশ্বে আজ তিন কোটি হেক্টার জমিতে নোংরা জলের সেচ দিয়ে চাষ করা হচ্ছে, কাজেই সমস্যাটা শুধু ঘানার নয়৷ বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মানুষ নোংরা জল দিয়ে চাষ করা খাদ্য খাচ্ছে, বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন ডাব্লিুএইচও-র অনুমান৷ একটি পন্থা হলো, খাবার আগে শাকসবজি ভালো করে ফুটিয়ে নেওয়া বা জলে ধুয়ে নেওয়া৷
নোংরা জলে চাষ যখন একমাত্র বিকল্প
‘‘নোংরা জল হলো পানির একমাত্র উৎস, যা জনসংখ্যা ও পানির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে'', স্মরণ করিয়ে দিলেন ড্রেকসেল৷ অপরদিকে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে বছরে যে পরিমাণ নোংরা জল সৃষ্টি হয়, তার পরিমাণ পৃথিবীর সব নদ-নদীর জলধারার ছয় গুণ৷
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস স্কট ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, সেচের জন্য নোংরা জলের ব্যবহার করাটা যে শুধু খারাপ হতে হবে, তেমন কোনো কথা নেই৷ তাঁর মতে, এই পন্থায় অসংখ্য ছোট খামারচাষি জীবিকা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন ও বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ছে৷ এছাড়া যে বর্জ্য পদার্থ প্রাকৃতিক জলাধারগুলিকে দূষিত করত, সেগুলি সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ কিন্তু আরও বড় কথা, নোংরা জলের সেচ ছাড়া বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য সাধন করতে পারবে না, বলে স্কটের অভিমত৷
অপরদিকে নোংরা জলের সেচ প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ ও উন্নতিসাধন প্রয়োজন, বলে স্কট মনে করেন: যেমন খামারেই জল পরিশোধনের ব্যবস্থা রাখা; খামারে কাজ করার সময় চাষিদের জন্য বিশেষ পোশাকের ব্যবস্থা করা; বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা – কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, রান্নাঘরে শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে নেওয়া এবং কাঁচা বা না-ধোয়া ফল ও শাকসবজি না খাওয়া৷
ব্রিগিটে অস্টেরাথ/এসি
বন্ধু, এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷