‘খবরি’-র পিছু ধাওয়া করেই লাদেন খতম অভিযান
৩ মে ২০১১চার বছর ধরে একটি সূত্রের পিছনে ধাওয়া করেছেন গোয়েন্দারা
চার বছর আগে ৯/১১-র সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধরা পড়া এক সন্দেহভাজন জঙ্গিকে জেরা করতে গিয়ে গোয়েন্দারা প্রথম খবর পেয়ে যান ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ আর বিশ্বাসভাজন এক ‘খবরি'-র সম্পর্কে৷ জেরার মুখে ওই জঙ্গি জানায়, পাকিস্তানে ওসামার ঘনিষ্ঠ যারা আছে, তাদের মধ্যে এই ব্যক্তিই অন্যতম৷ বিন লাদেনের যাবতীয় খবরাখবর বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছে দেওয়াটাই সেই খবরি-র কাজ৷ বিশ্বের সম্পূর্ণ অন্য প্রান্তে গুয়ান্তানামোয় আটক এক জঙ্গির কাছে পাওয়া সেই খবর আর সেই ‘খবরি'-র চেহারার বর্ণনাটুকুকে সম্বল করে শুরু হয় তাকে খোঁজার পালা৷ দুই বছর পরে তার সন্ধান মেলে৷ এবার শুরু হয় তাকে অনুসরণ করা৷ সেই অনুসরণেরই সুফল মিলল এতদিন পরে৷
কী জানা গিয়েছিল
পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের যে বাড়িটায় টেলিফোন, ইন্টারনেট ছাড়া বাস করত ওই খবরি, তার অত অর্থ থাকার কথা নয় অমন একটা ভীষণভাবে পাহারা দেওয়া বাড়িতে থাকার মত৷ বাড়িটিতে তারা দুই ভাই সপরিবারে থাকলেও আরেকটি তৃতীয় পরিবারের ছবি তুলে ফেলে স্যাটেলাইট ক্যামেরা৷ সিআইএ প্রধানের সন্দেহের শুরু সেখান থেকে৷ এবারে সেই তৃতীয় পরিবারের সদস্যদের ছবি মেলাতে গিয়ে বিন লাদেনকে পাওয়া যায়৷ বারবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই অকস্মাৎ হানার৷ গত মার্চ থেকে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে এই নিয়ে একের পর এক বৈঠকে বসে সিআইএ৷ তিনি ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ২৯ এপ্রিল৷ আর তারপরেই তো, মার্কিন নেভির বিশেষ বাহিনীর বন্দুকের পাল্লায় চলে এল আল কায়েদার সুপ্রিমো, দুনিয়ার সেরা মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল ওসামা বিন লাদেন৷ খোদ পাকিস্তানের রাজধানীর কাছে, সেনা অ্যাকাডেমির ৮০০ মিটারের ভিতরে৷ তারপরের ৪০ মিনিটের ঘটনা সকলেই জানেন৷
জাতিসংঘ, জার্মান চ্যান্সেলর আর বারাক ওবামা
বিন লাদেনকে হত্যার খবরটাকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের মন্তব্য, এ আসলে একটা সংকটজনক বিজয়৷ কারণ, সন্ত্রাসবাদীরা পাল্টা হামলা চালাতে পারে৷ নিউ ইয়র্কের গ্রাউন্ড জিরোতে কোন শোকসভা নয়, ওসামা হত্যার আনন্দ করতে আজও সমাবেশ হওয়ার কথা৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সোমবার বিকেলেই ফোন করেছিলেন বারাক ওবামাকে৷ বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের মস্তবড় ধাক্বা দেওয়া গেছে৷ অভিনন্দন৷ কিন্তু লড়াই শেষ হয়ে যায়নি৷' লড়াই শেষ হয়নি একথা বলেছেন সিআইএ-র প্রধান প্যানেটও৷ তাঁর ধারণা, আল কায়েদা পাল্টা হামলা চালাবেই৷ আর এই হত্যাকান্ডের ফলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক জমি লাভ যাঁর হল, সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতে, ওসামা বিন লাদেনকে খতম করতে পারার পর দুনিয়াটা বাস করার জন্য একটু বেশি নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে৷
প্রতিবেদন : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম