1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষোভ-অনাস্থা থেকে অভ্যুত্থান, কোন পথে বাংলাদেশ?

 শরিফুল হাসান একজন কলাম লেখক, ও বিশ্লেষক৷
শরিফুল হাসান
১৭ আগস্ট ২০২৪

রাতারাতি যেন বদলে গেছে বাংলাদেশ!

https://p.dw.com/p/4jZQX
সরকার পতনে বাংলাদেশে এক দফার আন্দোলন
হামলা ও সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন খুব দ্রুতই পরিণত হয় সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনেছবি: Sazzad Hossain/DW

কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের আন্দোলন, গুলি, হত্যা, সরকার পতনের একদফা, কারফিউ, সহিংসতা, গণবিক্ষোভ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন, ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং সবশেষে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার; সবমিলিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে টালমাটাল বাংলাদেশ!

এত অল্প সময়ে যে এতকিছু ঘটতে পারে আজ থেকে ঠিক একমাস আগেও কয়জন ভাবতে পেরেছিল? এই যে ছাত্র-জনতার এত বড় অভ্যুত্থান হলো, তার পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ বোধহয় শেখ হাসিনার প্রতি অনাস্থা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে যে বিপুল বিজয় নিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন, মাত্র ১৫ বছরের মাথায় সেই শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও গণরোষে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়। তিনি এখন ভারতে রয়েছেন। মাঝখানে তিনদিন কার্যত কোনো ধরনের সরকার ছিল না বাংলাদেশে। এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করেন, ছাত্র-জনতা এখন সেই ইউনূসের উপর আস্থা রেখে সামনের দিনগুলোতে নতুন এক বাংলাদেশ চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের এত অনাস্থার কারণ কী?

আসলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেনতেনভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রেখে নিজেকে একনায়ক হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, যেটি ‘সাধারণ মানুষ' একেবারেই পছন্দ করেনি। এই সময়ে মানুষের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা ছিল না, ছিল না স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, হামলা, মামলা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে মানুষের মুখ রুদ্ধ করা হয়েছে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সত্যিকারের মনের কথা লেখার স্বাধীনতা হারিয়েছিল নাগরিকরা। কেউ প্রতিবাদ করলে পুলিশের নিপীড়ন চলতো। সবমিলিয়ে যেন পুলিশি এক রাষ্ট্র! 

এই যে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে আবু সাঈদরা বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিলো, সেটি কিন্তু হঠাৎ করে শুরু হয়নি। গত ১৫ বছরে সরকার যতই উন্নয়নের কথা প্রচার করুক, একদিকে বিপুল পরিমান শিক্ষিত বেকার এবং তাদের কর্মসংস্থানের অভাব, অন্যদিকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি- এসব কারণে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল। যেহেতু সেগুলো প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না, কিংবা ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না, ফলে সেই ক্ষোভ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। তরুণদের মধ্যে এইসব ক্ষোভের পাশাপাশি শেখ হাসিনার প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হয়েছিল এবং সেটা ২০১৮ সালেই চূড়ান্তভাবে বেড়েছিল। 

ছয় বছর আগে ২০১৮ সালের এই জুলাই- আগস্ট মাসেই তরুণরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। ওই বছরের ২৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয় ও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছাত্ররা কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত গণবিক্ষোভ করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীর অত্যাচার সে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে। সরকার আশ্বাস দিলেও ছাত্রদের দাবিগুলো পরে মানা হয়নি। তখন থেকেই ছাত্রদের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাস তৈরি হয়। এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ২০১৮ সালের সেই অনাস্থা ও অবিশ্বাসেরই ফল।

এবার যখন কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হলো, সরকার শুরুতে ছাত্রদের কোনো কথাই শোনেনি। তারা একদিকে আদালতের দোহাই দিয়ে সময়ক্ষেপন করতে চেয়েছে, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বরাবর ক্ষমতায় টিকে থাকা শেখ হাসিনার সরকার এবার শুরু থেকে একের পর এক ভুল করেছে। তারা তরুণদের ভাষা বুঝতেই পারেনি। বরং বরাবরের মতোই আন্দোলন দমাতে দাম্ভিকতা দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমকি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব মন্ত্রীর কথায় ছিল দাপট। এরপর ১৬ জুলাই যখন রংপুরে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদের বুকে বিনা কারণে গুলি চালালো পুলিশ, সেই ছবি দেখে সারা দেশে ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

অন্যদিকে সাধারণ জনতা তো আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল। ফলে ছাত্র-জনতার স্রোত একসঙ্গে মিলেছে রাজপথে। সেই ক্ষোভে পুড়েছে সরকারি বহু স্থাপনা। এরপর সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ দিলো। বন্ধ করা হলো ইন্টারনেট, ফেসবুক। এগুলো অবিশ্বাস ও সন্দেহ আরো বাড়িয়েছে। তৈরি হয়েছে নানা গুজব। কারফিউ শেষে সরকার ছাত্র হত্যার কথা না বলে কান্না শুরু করে সরকারি স্থাপনা নিয়ে, যেগুলো আরো বেশি অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই কোটার আন্দোলন আগস্টের শুরুতে রূপ নেয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে। সাধারণ জনগণ ততদিনে এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে, সব থানায় হামলা চালিয়েছে, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে পুলিশকে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন, পরবর্তী বিক্ষোভ ও সরকারের পতনের পর সহিংসতায় ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৫৮০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ২১৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। ৩২৬ জন নিহত হন ৪ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে। বাকি ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় ৭ থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই সময় ‘ক্ষুব্ধ জনতা' ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ হাসিনার পৈতৃক বাড়ি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরসহ রাষ্ট্রীয় বহু সম্পদ পুড়িয়ে দিয়েছে। 

আসলে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি।  নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনে সামরিক এরশাদ সরকারের পতনের পর নির্বাচনের মাধ্যমে বারবার ক্ষমতার পালাবদল হলেও সত্যিকারের গণতন্ত্র আর সুশাসন আসেনি। বরং যখন যে ক্ষমতায় গেছে, স্বৈরাচারী আচরণ করেছে। সবশেষ টানা ১৫ বছরের শাসনে শেখ হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।

এবার শিক্ষার্থীরা শুধু কোটা নয়, সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্তি চেয়েছে। তাই তারা এই আন্দোলনের নাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অবাক করার বিষয় হলো, যে তরুণ সমাজ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলো, যাদের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ মোবাইল, কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকার ‘অভিযোগ' ছিল, অভিযোগ ছিল তারা দেশ জাতি নিয়ে ভাবে না। কাজেই এই তরুণরা আন্দোলন করে গোটা দেশ বদলে দেবে- এমন ধারণা ছিল না বললেই চলে। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়. এবারের আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও দারুণ ভূমিকা রেখেছে।

তরুণ প্রজন্ম বলছে, তারা এমন বাংলাদেশ চায় যেখানে বৈষম্যের বদলে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। এই তরুণ প্রজন্ম জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর, যেখানে সাধারণ জনগণের কথা বলার, প্রতিবাদের ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থাকবে। এজন্য তারা বেছে নিয়েছেন নোবেলজয়ী ড.ইউনসূকে।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার তিন দিন পর বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়। তাঁর সঙ্গে যে ১৬ জন উপদেষ্টা রয়েছেন, সেখানে যেমন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আছেন, তেমনি ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় দুজন সমন্বয়কও রয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জনগণের আস্থা ফেরানো।

এই আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীরা শুধু যে সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছে, তাই নয়, পুলিশের প্রতিও তারা চরম অনাস্থা দেখিয়েছে। ফলে দেশের প্রায় সব থানায় আক্রমণ হয়েছে। পিটিয়ে, পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে পুলিশকে। ফলে নতুন সরকার গঠন হলেও শুরুতে পুলিশকে কাজে ফেরানো যায়নি। কারণ, পুলিশের মধ্যে কাজ করছিল ভীতি, আতঙ্ক। আবার দেশে তিনদিন সেই অর্থে কোনো সরকার ছিল না। সেই সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়েছে৷ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫২ জেলায় হিন্দুদের ওপর অন্তত ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বলতে গেলে সারাদেশে এখনো এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। সরকারি বহু সেবা বন্ধ। এমনকি এখনো ট্রেন চালু হয়নি। প্রশাসনে চরম অস্থিরতা বিরাজমান। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে চেয়ার হারানো ও চেয়ার দখলের লড়াই। এমনিক দেশের সর্বোচ্চ আদালতও বাদ পড়েনি সেই অনাস্থা থেকে। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। সরকারের পটপরিবর্তনে একপক্ষকে হটিয়ে আরেকপক্ষ চাঁদাবাজি ও দখলবাজির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন বলে খবর আসছে। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চলছে লড়াই-পাল্টা লড়াই। পরষ্পরের বিরুদ্ধে এমন আস্থাহীনতা বাংলাদেশ এর আগে এত তীব্রভাবে দেখেনি। এর রেষ পড়েছে ১৫ আগেস্টও। যারা ৩২ নম্বরে শোক জানাতে এসেছিলেন, তারা নানাভাবে বাঁধা ও হেনস্থার শিকার হয়েছেন।

তবে এসব সংকটের বিপরীতে আশার ছবিও আছে। পুলিশ যখন কাজে ছিল না, ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্র-তরুণরা রাজপথের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে যেভাবে ময়লা,আবর্জনা পরিষ্কারের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, তাতে দেশবাসী মুগ্ধ। তবে সরকারকে দ্রুতই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সারাদেশের সব থানায় আক্রমণ হয়েছে। লুট হয়েছে বিপুল পরিমান অস্ত্র। এসব অস্ত্র উদ্ধার করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশ কাজে যোগ দিলেও তাদের ভেতরের আতঙ্ক কাটেনি। তাদের আস্থা ফেরাতে হবে। আবার সাধারণ মানুষ রোজ নিত্যনৈমিত্তিক গুজবে আছে। ফলে তারাও দ্বিধাগ্রস্ত। আতঙ্কে আছে সংখ্যালঘুরা। আসলে ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন নিজেকে নিরাপদ মনে করে, সরকারকে এখন সেই আস্থা ফেরাতে হবে।

কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করার পাশাপাশি সচল করতে হবে অর্থনীতির চাকাও। কারণ টানা প্রায় এক মাসের অস্থিরতায় দেশের সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। সহিংসতার মুখে গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। ব্যাংকগুলোতে এখনো অস্থিরতা চলছে। এগুলোও দ্রুত ঠিক করতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজার ঠিক রাখতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরও মানুষের অসন্তোষ তৈরি হবে। কাজেই সেখানেও আস্থা ফেরাতে হবে। কমাতে হবে মূল্যস্ফীতি।

বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরে, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। সবমিলিয়ে দেশে সুশাসন চায় তরুণ প্রজন্ম। তারা দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ চায়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে মত ও দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ পায়। এসব কাজের পাশাপাশি একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাটাও অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ

জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশজুড়ে যখন আন্দোলন চলছিল, তখন বিদেশে ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীরা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিতে ৮৪ বছর বয়সি নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে প্রস্তাব দেন। তাতে সায় দেন ড. ইউনূস। ফ্রান্সের প্যারিস থেকে ৮ আগস্ট দেশে ফিরে ওইদিন রাতেই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন তিনি।

দেশে ফিরেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, "আমাদের কাজ হলো সবাইকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন, তাদের রক্ষা করা এবং আমাদের একটা শৃঙ্খলায় ফিরে আসা উচিত।” নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, "আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত থাকেন, দেশের কোনো জায়গায় কারো ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।''

দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কিছু ঘটনায় তারা আতঙ্কে রয়েছেন। ১৩ আগস্ট দুপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জাতীয় উপাসনালয় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে ড. ইউনূস বলেছেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, বিভেদ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাই তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবাই এক পরিবার। পার্থক্য বা বিভেদ করার কোনো সুযোগ নাই।

দেখার বিষয় হলো, রাজনৈতিক দলগুলো গত ৫৩ বছরে যে বিভেদ আর সহিংসতার রাজনীতি করেছে, মানুষে মানুষে যে বিভক্তি ও অনাস্থা তৈরি হয়েছে পুলিশ থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, সেখান থেকে দেশকে কতটা এগিয়ে নিতে পারেন ড.মুহাম্মদ ইউনূস। তবে কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশের সামনে এ এক বিরাট সুযোগ। আর সে কারণেই বোধহয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা' হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘‘এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।''