1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্লান্তির সঙ্গে লড়তে হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটারদের

গৌতম হোড়
গৌতম হোড়
২৪ মে ২০২৪

ভারতে আইপিএল শেষ ২৬ মে। আর বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ ৫ জুন। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড।

https://p.dw.com/p/4gEsP
যুক্তরাষ্ট্রে নাসাউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন দুই পথচারী।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফির অন্যতাম দাবিদারছবি: Bruce Bennett/AFP/Getty Images

দীর্ঘদিন ধরে আইপিএল খেলার একটা সুবিধা ও অসুবিধা দুই-ই আছে। সুবিধা হলো, ভারতীয় ক্রিকেটাররা ম্যাচের মধ্যে আছেন। বিরাট কোহলি ফর্মে আছেন। যশপ্রীত বুমরাহ ভালো বল করেছেন। হার্দিক পান্ডিয়া তার বোলিংয়ের ছন্দ ফিরে পাচ্ছেন। তরুণ ক্রিকেটাররা চার-ছয়ের বন্যা বাইয়ে দিচ্ছেন। তারা মানসিক দিক থেকে চাঙ্গা।

কিন্তু এর পাশাপাশি একটা বড় অসুবিধাও আছে। আইপিএলে এই গরমের মধ্যে ২২ গজে নিজেদের নিংড়ে দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। অনেকগুলি ম্যাচে ২৫০ থেকে ২৭০ রান হয়েছে। আগে মনে করা হতো, দুইশ রান করলেই জয়ের নিশ্চয়তা পেয়ে যাওয়া। এই আইপিএল সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে। রানের পাহাড় হয়েছে। ক্রিকেটাররা অনেক বেশি খেটেছেন। তারা দক্ষতার শিখরে উঠতে চেয়েছেন। তাই তাদের শারীরিক ক্লান্তি স্বাভাবিক। আইপিএলের আগে পরপর কয়েকটা সিরিজও খেলেছেন ক্রিকেটাররা।

ফলে কিছুদিন বিশ্রাম তাদের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু সেই বিশ্রাম তারা পাচ্ছেন না। খাতায়-কলমে ভারত এই প্রতিযোগিতা জেতার অন্যতম দাবিদার। আইপিএলের আগে ও আইপিএলে তারা যা খেলেছে, তাতে টুর্নামেন্ট জয়ের আশা তারা জাগাতেও পেরেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথম প্রশ্ন এই ক্লান্তি নিয়েই। দীর্ঘদিন ধরে খেলে যাওয়া এবং আইপিএলে এতটা পরিশ্রম করার প্রভাব বিশ্বকাপে গিয়ে পড়বে না তো?

ভারতীয় দল

বিশ্বকাপের দলে আছেন রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্থ, সঞ্জু স্যামসন, শিবম দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, যজুবেন্দ্র চাহাল, আকাশদীপ সিং, জসপ্রীত বুমরাহ ও মহম্মদ সিরাজ।

শুভমন গিল, রিঙ্কু সিং, আবেশ খানের মতো ক্রিকেটাররা যেখানে রিজার্ভে থাকেন, সেই টিমের শক্তি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা, বিরাট কোহলি ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তিনিই এবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ রান করেছেন। ১৫ ইনিংসে ৭১৪ রান করেছেন, ছয় মেরেছেন ৩৭টি, একটা শতরান ও পাঁচটি অর্ধশতরান করেছেন। ফলে বিরাট ফর্মে আছেন। তার কাছ থেকে প্রত্যাশাও বেড়েছে।

সঞ্জু স্যামসন ৫২১ রান করেছেন। তিনি আইপিএলের সেরা ব্যাটারদের তালিকায় ছয় নম্বরে আছেন। প্রথম দশজন ব্যাটারের মধ্যে বিশ্বকাপের দলে থাকা আর কোনো ভারতীয় ক্রিকেটার নেই। রুতুরাজ গায়কোয়াড়, রিয়ান পরাগ, সাই সুদর্শন, অভিষেক শর্মারা আইপিএলে সেরা ব্যাটারদের তালিকায় প্রথম দশে থাকলেও টিমে ঢুকতে পারেননি। আইপিএলের সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বোলার হর্ষল প্যাটেল, তিন নম্বরে থাকা বরুণ চক্রবর্তী, পাঁচ নম্বরে থাকা টি নটরাজন কেউই সুযোগ পাননি। অথচ বলে সেরকম সফল না হয়েও অক্ষর প্যাটেল দলে আছেন। আহামরি না খেলেও ঋষভ পন্থ সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু কে এল রাহুল পাননি। আইপিএলে এত ভালো খেলার পুরস্কার তারা পেলেন না কেন? তাহলে তাদের কাছে কী ইনসেনটিভ থাকলো? দল ভালো খেললে এই সব প্রশ্ন উঠবে না, কিন্তু খারাপ খেললে তা উঠতে বাধ্য।

অধিনায়ক রোহিত শর্মা, সহ অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব এই আইপিএলে ভালো খেলতে পারেননি। তার উপর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে রোহিতকে সরিয়ে হার্দিককে অধিনায়ক করে দেয়া হয়। তার জের পুরো টিমের মধ্যে পড়ে। রোহিত নিজে তো বটেই, সূর্যকুমার, বুমরাহ-সহ অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই ঝামেলা ভারতীয় দলে পড়বে না তো? পড়লে তার ফল একেবারেই ভালো হবে না

তবে সূর্যকুমার, হার্দিক, রোহিতরা এতটাই অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান ক্রিকেটার, তারা একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তারা ফর্মে থাকলে কোনো রানই অসম্ভব বলে মনে হবে না। তিনশও নয়।

বোলারদের মধ্যে আইপিএলে এক নম্বরে আছেন হর্ষল প্যাটেল, তিনি দলে সুযোগ পাননি। দুই নম্বরে আছেন বুমরাহ, চার নম্বরে আকাশদীপ ও ছয় নম্বরে যজুবেন্দ্র চাহাল। চোট-আঘাত থেকে ফিরে আসার পর বুমরাহ আবার ভালো বল করছেন। তিনি যে কোনো ব্যাটারকে বিপাকে ফেলতে পারবেন। গতির পাশাপাশি বিপজ্জনক সুইং দিয়ে।  কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বোলার প্যাট কামিন্স ও স্টার্ক যেভাবে বল করেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে, তারাও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন।

অজানা পিচ

কোনো সন্দেহ নেই এই ভারতীয় দল টি২০ বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের কাছে হয়ত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তারাও চাইবেন ট্রফি হাতে দেশে ফিরতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এবার খেলাটা উপমহাদেশের পিচে হচ্ছে না। বিশেষ করে ভারতের শুরুর দিকের ম্যাচগুলো হচ্ছে অ্যামেরিকার অজানা পিচে। সেই পিচ কেমন ব্যবহার করবে, তা-ও কেউ জানেন না। ক্রিকেট নামক মহান অনিশ্চয়তার খেলায় এই বিষয়টি অনিশ্চয়তার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতে এখন যে হারে ক্রিকেটার তৈরি হচ্ছে, তাতে সবচেয়ে বড় কথা হলো, কেউই আর টিমে অপরিহার্য থাকছেন না। পারফর্ম না করলে তাদের পরিবর্ত অপেক্ষা করে আছে, সেটাও তারা জানেন। শুভমন, রিঙ্কুরা তো তা-ও রিজার্ভে আছেন, রিয়ান পরাগ, রুতুরাজরা তো সেখানেও নেই। তাই যারা সুয়োগ পেয়েছেন, তারা বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের উজাড় করে দেবেন। তুরুপের সব তাস বের করে দেবেন, এই আশাটুকু করাই যায়।

কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের বিশ্বকাপের পর সরে যাচ্ছেন। তিনিও ট্রফি নিয়ে বিদায় নিতে চান। ক্রিকেটারদের সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক খুবই ভালো। অল্প কথার মানুষ রাহুল সবাইকে সুযোগ দিতে চান, দেশের হয়ে খেলার জন্য সবাইকে উদ্দীপ্ত করেন, তিনি সম্প্রতি ভারতকে অনেকগুলি সিরিজ জিতিয়েছেন।

ফলে টি-টোয়েন্টির এই বিশাল মঞ্চে ভারতের ভালো না খেলার কোনো কারণও নেই।