1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যাম্পের ‘বাইরে’ পেলেই ভাসানচর

৩ মে ২০২০

কক্সবাজারের ২৯ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর একটি দলকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে৷ এই দলে নারী ও শিশু রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3biTg
ছবি: DW/N. Conrad

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এখন থেকে ক্যাম্পের বাইরে কোনো রোহিঙ্গাকে পাওয়া গেলেই ভাসানচরে পাঠানো হবে৷’’

ভাসানচরে পাঠানো রোহিঙ্গাদের শনিবার সকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী নুনিয়াছড়া প্যারাবন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ তাদের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সাগর পথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে কক্সবাজার নুনিয়াছড়া এলাকায় নামিয়ে দেয় দালাল চক্র৷ পুলিশ এই খবর পেয়ে তাদের মোট ২৯ জনকে উদ্ধার করে৷ 

ডা. এনামুর রহমান

রাতে তাদের নৌবাহিনীর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ভাসানচরে পাঠানো হয়৷ ভাসানচরে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন কাজ করে না৷ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ‘‘তাদেরকে ভাসানচরে নৌবাহিনী নিয়ে গেছে৷ তারা সেখানে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই থাকবে৷ কোনো ভলান্টারি অর্গানাইজেশন না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই৷ সরকারই তাদের সবধরনের সহায়তা করবে৷ সেখানে থাকা, চিকিৎসা, পানি ও খাদ্যের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে৷ সেখানকার আবাসন সুবিধা সুপার টাউনের মত৷’’ 

আরো রোহিঙ্গা শরনার্থীকে ভাসানচরে নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশনা হলো ক্যাম্পের বাইরে যাদেরই ডিটেক্ট করা হবে তাদেরই ভাসানচরে পাঠানো হবে৷ এখানে তারা সরকারি ব্যবস্থাপনায়ই থাকবে৷ সংখ্যা বাড়লে তখন আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কথা বলব৷’’

কক্সবাজরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, ‘‘ভাসানচরে নেয়া ওই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এখন থেকে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কাজ করবে৷ তারা সরকারের তত্ত্বাবধানেই সেখানে থাকবে৷’’ 

রোহিঙ্গাদের জন্য দুর্বল দ্বীপে সবল অবকাঠামো

এদিকে ২৯ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়ার ব্যাপরে রোববার বিকেল পর্যন্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনকে জানানো হয়নি৷ অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দোজা নয়ন বলেন, ‘‘আমাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যেহেতু কিছু জানানো হয়নি তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না৷’’

ভাসানচর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার একটি দ্বীপ৷ মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা এই দ্বীপে সরকার দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা খরচ করে স্থাপনা তৈরির কাজ করছে৷ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এরইমধ্যে সেখানে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে৷ সেখানে এক হাজার ৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ নির্মাণ করা হয়েছে ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্র৷ মূল ভূখন্ড থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভাসানচরকে বাঁচাতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে৷

তবে শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিরোধিতা করে আসছিল৷ বিরোধিতার মুখে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর পরিকল্পনা বাদ দেয় সরকার৷ সেখানে পর্যটন কেন্দ্র করার কথাও বলা হয়েছিল৷ পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম করার কথা৷

ড. সি আর আবরার

তারপরও সংখ্যায় অল্প হলেও রোহিঙ্গাদের কেন সেখানে পাঠানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রধান ড. সি আর আবরার৷ তিনি বলেন, ‘‘মানবাধিকারের দিক বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণেই সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল৷ কারণ সেখানে যত সুযোগ সুবিধার কথা বলা হোক না কেন সেটা গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ শুধু খাওয়া দাওয়া নয় ওভারঅল সুরক্ষার জন্য আরো অনেক কিছু প্রয়েজন যা সেখানে নাই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সুনাম অর্জন করেছে তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ আর যদি সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার বড় পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে এটা নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বসা উচিত৷ তবে আমার মনে হয় তারা কোনোভাবেই সরকারের সাথে একমত হবেনা৷’’

গতমাসে রোহিঙ্গাদের একটি দল সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলে তাদের ৩৯২ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়৷ কিন্তু এরপর বঙ্গোপসাগরে ভাসমান আরেকটি জাহাজে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ করলেও সেই অনুরোধ রাখেনি বাংলাদেশ৷ আর এবার ২৯ জনের দলটিকে ফিরিয়ে না দিয়ে ভাসানচরে পাঠানো হল৷

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার ৪৩টি ক্যাম্পে নয় লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী আছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান