ভাসানচর নিয়ে ধোঁয়াশা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০রবিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের এ সম্ভাবনার কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন৷ শুক্রবার তিনি ভাসানচর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভাসানচরে রোহিঙ্গা নয়,দেশের গৃহহীন মানুষদের থাকার সুযোগ দেয়া হবে৷’’
তবে এ বিষয়ে এখনো সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘এটা আমার চিন্তা৷ সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি৷ আমার দেখে খুব পছন্দ হয়েছে৷ ভাবলাম খামোখা অন্য লোকদের এখানে থাকতে দেব কেন৷’’
‘‘বরং আমাদের দেশের লোকদের জন্য খুলে দিলে পরের দিনই তারা ওই দ্বীপ দখল করে ফেলবে৷ এখানে বিরাট লেক আছে, রিসোর্ট হতে পারে৷ অত্যন্ত সুন্দর জায়গা৷ শুধু রোহিঙ্গা পাঠানোর বিষয়টি না ভেবে আমরা বিকল্প চিন্তা করতে পারি৷’’
তিনি ভাসানচরকে আরো উন্নত এবং সুন্দর করার কথাও বলেন৷
অথচ মাত্র একদিন আগে ঢাকায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শেষ হলে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে৷
‘‘সেনাবাহিনী টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া শুরু করেছে, যাতে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারেন৷’’
ভাসানচর নিয়ে এক দিনের ব্যবধানে দুই মন্ত্রীর দুই ধরনের বক্তব্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে৷ তাহলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার সিদ্ধান্ত কি বাতিল হয়েছে?
সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এখনো রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ওপরই জোর দিচ্ছেন৷ ভাসানচর নিয়ে তিনি নতুন করে কিছু বলেননি৷’’
ভাসানচর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার একটি দ্বীপ৷মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা এই দ্বীপে সরকার দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা খরচ করে স্থাপনা তৈরির কাজ করছে৷ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এরইমধ্যে সেখানে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে৷ সেখানে ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ নির্মাণ করা হয়েছে ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্র৷ মূল ভূখন্ড থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভাসানচরকে বাঁচাতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে৷ ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরির পরিকল্পনাও আছে৷
পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্পের কাজ চলছে৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী বলেন, ‘‘ভাসানচরে ওইসব স্থাপনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী নিজে নজর রাখছেন৷ ওখানে রোহিঙ্গাদের নেয়া হবে না এমন কোনো সিদ্ধান্ত তিনি জানাননি৷ এটা নিয়ে আর কোনো ডেভেলমপমেন্ট নেই, যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে৷
‘‘যেহেতু রোহিঙ্গারা ওখানে যেতে চাইছে না, জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর,আইওএম, ডাব্লিউএফপির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার বিষয়ে রাজি হলো না৷ এটা নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী এখন রোহিঙ্গাদের রিপ্যাট্রিয়েশন চাইছেন৷ তাদের নিজ দেশে ফেরত পঠানোর ওপরই বেশি জোর দেয়া হচ্ছে৷’’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রীর বক্তব্যেও ভাসানচর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হচ্ছে না৷ বরং তার এই বক্তব্যে আরো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ (রামরু)-র সাবেক প্রধান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড.সি আর আবরার৷
তিনি বলেন, ‘‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর উদ্যোগটাই ছিল অস্বচ্ছ৷ আমরা ঠিক জানি না, ওখানকার পরিস্থিতি কী৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ তারা সেখানে গেলে মাছ ধরে আর গরু চড়িয়ে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন৷
‘‘সরকারের মন্ত্রীরা যা বলছেন তাতে স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না৷ তারা হয়তো ব্যক্তিগত মত দিচ্ছেন৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন মিয়ানমারের ওপর সর্বোচ্চ চাপ রয়েছে৷ তাই আমাদের এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে চাপটা আবার আমাদের দিকে ফিরে আসে৷’’
গত সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...