1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরবানির অর্থনীতি রক্ষা পাবে কিভাবে

১৮ জুলাই ২০২১

করোনায় এই অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়েছে৷ ক্ষতির মুখে এর সঙ্গে জড়িত খামারি, গৃহস্থ, চামড়া ব্যবসায়ী এবং গরিব মানুষ৷ চামড়ার দাম কম থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এতিম ও অসহায় মানুষেরা৷

https://p.dw.com/p/3wdoa
সিলেটের কাজীর বাজারে কোরবানির পশুর হাটের ছবিটি ১৭ জুলাইর৷ছবি: Md Rafayat Haque Khan/ZUMA Press/picture alliance

এ বছর দেশে গরু ছাগলের উৎপাদন বেড়েছে৷ কিন্তু কোরবানির বাজারে চাহিদা কম থাকায় যারা এই সময়ে গবাদি পশু বিক্রি করেন তারা বেশ অসুবিধায় আছেন৷ রোববার থেকে শুরু হয়েছে গরুর হাট৷ ঈদকে সামনে রেখে গবাদি পশু লালন পালনকারী গৃহস্থ থেকে খামারিরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন কোরবানির হাটে তাদের পশু বিক্রির জন্য৷

পশু বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তা

ঢাকার আফতাব নগর হাটে এখলাস উদ্দিন মাত্র একটি গরু নিয়ে এসেছেন গাজীপুরের কাপাশিয়া থেকে৷  এক বছর আগে ৮০ হাজার টাকায় তিনি সেটি কিনেছিলেন৷ এরপর তার বিনিয়োগ এক লাখ টাকার বেশি৷ গরুটির দাম চাইছেন তিনি চার লাখ টাকা৷  জানালেন এই দামে বিক্রি করতে না পারলে তিনি লোকসানে পড়বেন৷

গাবতলীর হাটে মনিকগঞ্জের সাটুরিয়া এলাকা থেকে ৫০টি গরু নিয়ে আসা খামারি হাজি মো. মাহবুবুর রহমানও শঙ্কায় আছেন৷ তিনি এখনো পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না৷ গত বছর করোনার মধ্যে প্রথম কোরবানিতে তাকে গরু ফেরত নিয়ে যেতে হয়েছে৷ এবারও সেরকম হলে অনেক ক্ষতি হবে বলে জানান৷

গত বছর করোনায় ৯৪ লাখ ৫০ হাজার গবাদি পশু কোরবানি হয়েছে৷ তার মধ্যে ৪০ লাখ গরু৷ তবে তার আগের বছর স্বাভাবিক সময় কোরাবানি হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ গবাদি পশু৷ তার অর্ধেকই ছিলো গরু৷ করোনার কারণে কোরবানি দেয়া কমেছে৷ তার মধ্যে আবার গরু বাদ দিয়ে ছাগল কোরবানি দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ এবার কোরবানি আরো কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ( খামার)  জিনাত সুলতানা জানান, ‘‘করোনার কারনে কোরবানির গরু বিক্রি কমে গেছে৷ এই তিন-চারদিনের হাটে সব গরু বিক্রিও হয় না৷ করোনার আগে এই ঢাকা শহরে একেকটি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে আমরা ২০-২৫টি গরু দেখতাম৷ এখন সেটা দেখা যায় না৷ ফলে খামারি এবং গৃহস্থ যারা গরু বিক্রি করেন তারা উভয়ই ক্ষতির মুখে পড়ছেন৷ আর মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে৷”

তিনি জানান, তাদের ধারণা অনুযায়ী এবার পাঁচ থেকে ১০ ভাগ গবাদি পশু বিক্রি কম হবে৷ গরু বিক্রি আরো কম হবে৷

জিনাত সুলতানা বলেন, ‘‘যারা খামারি তাদের কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই৷ আর গৃহস্থও প্রণোদনা পান না৷ তাই করোনায় তাদের ক্ষতি হলে তা কাটানের কোনা উপায় আপতত নেই৷”

গরু লালন পালনের সময় অবশ্য তারা কৃষি ঋণ পান৷ কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই৷

চামড়া নিয়ে শঙ্কা
এদিকে কোরবানি কম হওয়ায় চামড়াও পাাওয়া যায় কম৷ বাংলাদেশে চামড়ার বড় একটি অংশ সংগ্রহ করা হয় এই কোরবানির সময়৷ কিন্তু তারচেয়েও বড় সংকট তৈরি হয়েছে কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে৷ বাংলাদেশে কোরবানির চামড়া প্রধানত দান করা হয়৷ এই চামড়া এতিম খানা ও মসজিদ মাদ্রাসায় দেন মুসলমানরা৷ গরিব মানুষকেও দান করেন৷ চামড়া বিক্রির টাকায় এইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের একটি অংশ নির্বাহ করা হয়৷ বিশেষ করে এতিম ও গরিব মানুষ এখান থেকে কিছু অর্থ পান৷ কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে করোনার অজুহাত দেখিয়ে দাম কমিয়ে দেয়ার তারা বঞ্চিত হচ্ছেন৷

বাংলাদেশে করোনায় চামড়া রপ্তানি বাধা কাটিয়ে উঠেছে৷ তারপরও সিন্ডিকেট করে কাঁচা চামড়ার দাম কমানো হচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা এক থাকলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারত না৷ এবার চামড়া বিক্রি হবে না বলে গুজব ছাড়ানো হয়েছে৷ গত বছর চামড়া জমিয়ে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে৷''

এবছর অবশ্য সরকার কাঁচা চামড়ার দাম বিছুটা বাড়িয়েছে৷ গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়৷ তার মধ্যে ৬০ ভাগ চামড়া আসে এই কোরবানির ঈদে৷ বছরে রপ্তানি হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকার চামড়া৷এই করোনায় যেহেতু চামড়া সংগ্রহ ১০-১৫ ভাগ কম হবে তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জিনাত সুলতানা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য