কেনিয়ায় সংরক্ষিত অরণ্যে অভাবনীয় সাফল্য
৩ মার্চ ২০২১কেনিয়ার মধ্যভাগে লেওয়া ওয়াইল্ডলাইফ কনসারভেন্সি সেন্টার পশু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য৷ ২৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জিরাফ, জেব্রা, হাতি, সিংহ, গণ্ডারের মতো কয়েক হাজার পশুপাখি ছড়িয়ে রয়েছে৷
জায়গাটি অনেক কাল ধরে এক ব্রিটিশ গবাদি পশু পালকের ব্রিডিং ফার্ম ছিল৷ তাঁরই বংশধররা লুপ্তপ্রায় গণ্ডার বাঁচাতে গত শতাব্দীর আশির দশকে এক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলেন৷ আজ সেখানে প্রায় ১৭০টি গণ্ডার রয়েছে৷
১২০ জনেরও বেশি রেঞ্জার চোরাশিকারীদের হাত থেকে লুপ্তপ্রায় এই প্রাণীগুলির সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন৷ সঙ্গে রয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের দল, যেগুলি গন্ধ শুঁকে মানুষের পিছু নিতে পারে৷ এলাকা সম্পর্কে ভালো জ্ঞানও রেঞ্জারদের হাতিয়ার৷ চোরাশিকারী দমন ইউনিটের এডওয়ার্ড নদিরিতু বলেন, ‘‘লেওয়ায় কর্মরত ৯৮ শতাংশ রেঞ্জারই আশেপাশের এলাকার মানুষ৷ সেটা অত্যন্ত জরুরি কারণ এর মাধ্যমে সেই সমাজের দায়িত্ববোধের বার্তা যাচ্ছে৷ স্থানীয় মানুষ লেওয়াকে নিজেদের বলেই মনে করে৷ তাই স্থানীয় মানুষ, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷’’
স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সংরক্ষিত এই অরণ্যের সংযোগই লেওয়া কনসারভেন্সিকে তার সবচেয়ে বড় হুমকি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করছে৷ প্রধান নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে জন প্যামেরি মনে করেন, ‘‘সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ তাদের শামিল না করলে সংরক্ষণের উদ্যোগে আমরা জয়ের মুখ দেখবো না৷ চোরাশিকারের ক্ষেত্রে আগে স্থানীয় সমাজ, এমনকি রেঞ্জাররাও সহায়তা করতো৷ শুধু টাকার লোভেই এমনটা হতো৷ সে কারণে আমরা আমাদের কর্মসূচিগুলি স্থানীয় সমাজের কাছে নিয়ে যাচ্ছি, যাতে তাদের মন জয় করে অনেক খবর পেতে পারি৷ এ ক্ষেত্রে তারাই যেন আমাদের চোখ-কান হয়ে উঠতে পারে৷’’
স্থানীয় মানুষ সন্দেহজনক কিছু দেখলে পিউরিটি ওয়ামিউয়ুকে জানিয়ে দেয়৷ তিনি প্রায় সব প্রতিবেশীকেই চেনেন, কারণ সেই অঞ্চলেই তিনি বড় হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে এখানে পাঁচ জন নারী রেঞ্জার হিসেবে কাজ করছেন৷ ২০১২ সালে আমিই প্রথম নারী হিসেবে সেই দায়িত্ব পেয়েছিলাম৷ এই কনসারভেন্সি আমার কাছে সবকিছু৷ লেওয়ায় এক ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি রয়েছে৷ আমার মাও সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন৷ আমার ছেলে স্কুলে যাচ্ছে, সেও লেওয়া শিক্ষা তহবিল থেকে সাহায্য পায়৷’’
লেওয়া ওয়াইল্ডলাইফ কনসারভেন্সি আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ আশেপাশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে৷ সাড়ে চারশো স্কুল পড়ুয়া বৃত্তি পায়, আশেপাশের ফার্মের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হয়৷ নারীদের কল্যাণের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷
টোমাস হাসেল/এসবি