কেন শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচন?
৭ মে ২০১৮নির্বাচন স্থগিতের এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে৷ দু'টি নির্বাচনই স্থহিত হয়েছে সীমানা নির্ধারণ জটিলাতার কারণে৷ এর মধ্যে গাজীপুরের সীমানার জটিলতা নির্বাচন কমিশন আগেই শুনানি করে নিষ্পত্তি করেছিল৷ তারপরও নির্বাচনের ঠিক আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার করা রিটে নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেল৷ রিটকারী সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক ও সাভারের শিমুলিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম৷ আর রিটে দাবি করা হয়, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে নয়, সাভারের মধ্যে থাকতে হবে৷ এই ছয়টি মৌজা হলো: দক্ষিণ বড়ইবাড়ি,ডোমনা, শিবরামপুর,পশ্চিম পানিশাইল, দক্ষিণ পানিশাইল এবং ডোমনাগ৷
গাজীপুরের সাধারণ মানুষ তো বটেই, দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী বিএনপি'র হাসান উদ্দিন সরকার এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷
হাসান উদ্দিন সরকার সোমবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের তিন মাসের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজের কাছে৷ তবে আপিলের নথি যথাসময়ে না পৌঁছানোয় শুনানি হয়নি৷
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের তিন মাসের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন৷ সোমবার তিনি হাইকোর্টে যান৷ হাইকোর্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেও চাই চলমান প্রক্রিয়ায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হোক৷ তাই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আমিও আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’
গাজীপুরের সাংবাদিক অপূর্ব রায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা হতাশ হয়ে পড়েছেন৷ দেশের একটি বড় সিটি কর্পোরেশন গাজীপুর৷ ভোটাররা চেয়েছিলেন ভোট দিয়ে তাঁদের মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্বাচন করবেন৷ কিন্তু তা আটকে গেল৷ প্রার্থীরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন৷’’
এদিকে রবিবার আদালত গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয়ার পরপরই নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করে৷ বিএনপি'র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাড়ি ঘেরাও করে সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি পুলিশ৷ ওই বাড়ি থেকে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ ১৮ জনকে আটক করা হয়৷ ছয় ঘণ্টা পর অবশ্য নোমানকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
অপূর্ব রায় আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শিমুলিয়ার ছয়টি মৌজা নিয়ে যে জটিলতা আছে তা সাধারণ মানুষ জানতো না৷ এমনকি প্রার্থীরাও জানতেন না৷ তাঁরা তাই স্থগিতের আদেশে প্রথমে অবাক হন৷ কারণ, এর আগে শুনানি করে নির্বাচন কমিশন ওই জটিলতা নিরসন করেন৷’’
আর এতে সমালোচনা তীব্র হয়৷ বিএনপি দাবি করে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় দেখেই একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে দিয়ে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করানো হয়েছে৷
তবে রিটকারী সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক ও সাভারের শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘‘আমার ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা গাজীপুরের মধ্যে নয়৷ তারপরও ওই মৌজার বাসিন্দাদের গাজীপুর সিটির ভোটার করা হয়েছে৷ আমি ২০১৩ সাল থেকে এর বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে আসছি৷ বারবার খারিজ হয়েছে, আবার মামলা করেছি৷ গাজীপুরের তফসিলের পাঁচ দিন আগে আবার খারিজ হলে রবিবার আমি আবার রিট করে ফল পাই৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিতের জন্য নয়, আমার ছয়টি মৌজা গাজীপুরের বাইরে রাখার জন্যই আমি রিট করেছি৷’’
শুধু গাজীপুর নয়, গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনও তফসিল ঘোষণার পর স্থগিত হয়ে যায়৷ আর সেটাও স্থগিত হয় সীমানা জটিলতার মামলায়৷ কিন্তু এর আগেরবার একই সীমানায় নির্বাচন হয়েছে৷ তখন মামলা হয়নি৷
সাবেক নির্বাচন কমিনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা ও গাজীপুর পরপর দু'টি নির্বাচন সীমানা জটিলতায় স্থগিত হয়ে গেল৷ আর নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আপিল না করে নির্বাচন স্থগিতের আদেশ মেনে নেয়৷ এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ আইনে আছে এরকম ঘটনায় যথেষ্ট সময় নিয়ে শুনানি করতে হবে৷ আর নির্বাচন কমিশনকে তার বক্তব্য পেশের সময় দিতে হবে৷ নির্বাচন কমিশনকেও শুনানিতে অংশ নিতে হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন তো নিশ্চিত হয়েই তফসিল ঘোষণা করেছে৷ তারপরও ঢাকা ও গাজীপুরে তারা তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি৷ তাদের শুনানি না করে আদালত নির্বাচন স্থগিত করতে পারে না৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা করেছে কিনা আমার জানা নাই৷ তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করছে বলে মনে হয়৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সাধারণত যে প্রার্থী পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা করেন, তিনি বা তাঁর লোকজন এ ধরনের রিট করেন৷ আবার কেউ নির্বাচন স্থগিত করিয়ে বছরের পর বছর পদে থাকতে চায়৷ তবে জেনুইন কারণেও রিট হয়৷ কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ তারা সতর্ক এবং দায়িত্বশীল হলে জটিলতা অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব৷’’
১৫ মে গাজীপুরের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল৷ একই দিনে খুলনা সিটির নির্বাচন হচ্ছে৷