1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেজরিওয়ালের জামিনের সম্ভাবনায় বিরোধী জোটে আশার রেখা

৩ মে ২০২৪

দুই দফার নির্বাচন শেষ। বাকি আর পাঁচ দফা। বিজেপির ৪০০ পার করার স্বপ্ন কি পূরণ হবে? এই প্রশ্নের মধ্যে কেজরিওয়াল ও রাহুলকে ঘিরে চড়ছে ভোটের পারদ।

https://p.dw.com/p/4fUGv
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চ্যালেঞ্জার হিসেবে যারা উঠে এসেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ গত ২১ মার্চ ইডি তাকে গ্রেপ্তার করেছিল আবগারি নীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগেছবি: Hindustan Times/IMAGO

ভারতের সাধারণ নির্বাচনে ভোট নেয়া হবে সাত দফায়। ১৯ ও ২৬ এপ্রিল প্রথম দুই দফায় ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। দেশের ১৯১টি কেন্দ্রে এখনো পর্যন্ত ভোট নেয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ দফায় ৩৫১ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি 'ইন্ডিয়া' জোট গড়ে তুলেছে। এই জোট কয়েকটি রাজ্যে সফলভাবে আসন সমঝোতা করতে পেরেছে।

এর মধ্যে রয়েছে একাধিক বড় রাজ্য। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহারের মতো রাজ্যে সমঝোতা হয়েছে। আবার পশ্চিমবঙ্গ কিংবা কেরালায় ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বোঝাপড়া হয়নি।

কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চ্যালেঞ্জার হিসেবে যারা উঠে এসেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গত ২১ মার্চ ইডি তাকে গ্রেপ্তার করেছিল আবগারি নীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে।

এই গ্রেপ্তারের পর 'ইন্ডিয়া' জোটের শরিকদের মধ্যে বন্ধন কিছুটা শক্তপোক্ত হয়েছে। এর আগে এই জোটের অন্যতম নেতা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন কে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তিনি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ভোটের মুখে সিবিআই, ইডি, আয়কর দপ্তর যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জোরালো করেছে বিরোধীরা।

দিল্লিতে সাতটি লোকসভা আসনে পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া করে ভোট লড়ছে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেস। এই দুই দলের বিরোধিতার সুযোগে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দিল্লির সাতটি আসনেই জয় পায়। এবার পরিস্থিতি বিজেপির জন্য অনেকটাই প্রতিকূল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেজন্যই কি আচমকা কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি? এই পদক্ষেপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত। এ নিয়ে আইনি লড়াই পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্টে। কেজরিওয়াল তার গ্রেপ্তারিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতে।

এই মামলার শুনানিতে চলতি সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ইডিকে প্রশ্ন করেন, "কেন লোকসভা ভোটের মুখে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হল?" তাৎপর্যপূর্ণভাবে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের উদ্দেশে আদালত মন্তব্য করেছে, "জীবন এবং স্বাধীনতা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা অস্বীকার করা যায় না।"

সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, কীভাবে আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়াল জড়িত, সে সম্পর্কে ইডি কি তথ্য দিতে পেরেছে?  কেজরিওয়ালের আইনজীবী দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থা কোনো তথ্য আদালতে পেশ করতে পারেনি।

আজ শুক্রবার ফের এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতিরা বলেছেন, "নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তারা কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন বিবেচনা করতে পারেন, যদি মূল আবগারি মামলাটি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগে।" আগামী ৭ মে সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে আদালতে উপস্থিত হতে বলেছে অতিরিক্ত সলিসিটের জেনারেলকে। সেদিন পরের শুনানি।

যদিও বিচারপতিরা বলেছেন, তারা আবেদন বিবেচনা করবেন, এ কথার মানে জামিন মঞ্জুর করা নয়। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের পর্যবেক্ষণ আম আদমি পার্টি ও বিরোধী শিবিরের পক্ষে যথেষ্ট ইতিবাচক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল জামিন পেয়ে প্রচারে নেমে পড়লে তা বিজেপির কাছে হবে বড় ধাক্কা।

ভোটের হার বিতর্ক

ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। তারাই নির্বাচন পরিচালনা করে। এই সংস্থার বিরুদ্ধে বিরোধীরা সরব হয়েছে ভোটের হার বদলে যাওয়ায়।

সাধারণভাবে ভোটগ্রহণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটদানের চূড়ান্ত হার ঘোষণা করে। এবার অনেকদিন পর তা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফার ভোটের ১১ দিন ও দ্বিতীয় দফার ভোটের চারদিন পর এই হার জানিয়েছে কমিশন।

ভোটগ্রহণের পরে ঘোষিত হারের তুলনায় পরিবর্তিত হার আলাদা। কমিশন মঙ্গলবার প্রথম দুই পর্বের যে ভোটের হার প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ দ্বিতীয় দফার ভোট শেষের পর কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল ভোট পড়েছে ৬০.৯৬ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রে কী করে ৫.৭৫ শতাংশের ভোট বেড়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, কারচুপি করে ভোটে জিততে চাইছে বিজেপি। যদিও কেন্দ্রের শাসক দল এই অভিযোগ খারিজ করেছে।

১০ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। পর্যবেক্ষকদের মতে, গত নির্বাচনে বিজেপি কয়েকটি রাজ্যে চূড়ান্ত ভালো ফল করেছিল, যেখান থেকে আসন বাড়ানো আর সম্ভব নয়।

তাই পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণ ভারতের দিকে নজর দিয়েছে পদ্ম শিবিরের। তা সম্ভব না হলে অংকের হিসেবেই, একক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন বিজেপির পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ভরসা করতে হবে শরিকদের উপর।

অবশেষে রাহুল

বিস্তর জল্পনার পর কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, উত্তরপ্রদেশের দলীয় দুর্গ রায়বেরেলিতে নির্বাচনে লড়বেন রাহুল গান্ধী। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রয়াত রাজীব গান্ধীর পুত্র রাহুল তার মা সোনিয়ার ছেড়ে আসা আসনে লড়তে চলেছেন।

বিজেপি ভেবেছে গান্ধী পরিবারের কেউ দাঁড়াবেন না: সুমন

কদিন ধরেই জল্পনা চলছিল, আমেঠি ও রয়বেরিলি আসনে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী লড়বেন কি না। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুই গান্ধীকে উত্তরপ্রদেশের এই দুটি আসনে ভোট লড়ার অনুরোধ জানান।

তার মতে, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা প্রার্থী না হলে তা ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা দেবে। কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের বিভিন্ন দলের পক্ষে এটা অস্বস্তির কারণ হবে। অবশেষে রাহুল কেন্দ্র বদলে রাজি হলেও প্রিয়ঙ্কা হননি।

আমেঠি কেন্দ্রে তিনবার জিতে সাংসদ হয়েছেন রাহুল। গত লোকসভা ভোটে তিনি হেরে যান বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে। কেরলের ওয়েনাড় কেন্দ্র থেকেও লড়েছিলেন রাজীব গান্ধীর পুত্র। সেখানে জিতে তিনি লোকসভায় যান। এবারও কেরলের একই কেন্দ্রে লড়ছেন রাহুল। আমেঠিতে এবার কংগ্রেস প্রার্থী কিশোরীলাল শর্মা।

কংগ্রেস নেতারা চেয়েছিলেন, উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি কেন্দ্রে প্রার্থী হোন প্রিয়ঙ্কা। এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তার মা সোনিয়া গান্ধী। পরে তিনি রাজ্যসভায় চলে যান। যদিও প্রিয়ঙ্কার বক্তব্য, তারা সকলে সংসদে গেলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির অভিযোগ মান্যতা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন। তিনি রাহুলের উদ্দেশে বলেছেন, "ভয় পাবেন না, পালাবেন না। লড়াই করুন।" তা হলে কি রাহুলের কেন্দ্র বদল কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধী জোটের পক্ষে নেতিবাচক হয়ে উঠবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "বিজেপি ভেবেছিল উত্তরপ্রদেশে গান্ধী পরিবারের কেউ দাঁড়াবেন না। অবশেষে রাহুল যে দাঁড়িয়েছেন, তাতে উত্তর ও মধ্য ভারতে ইন্ডিয়া জোট শক্তিশালী হবে। যদিও রায়বেরিলি সহজ আসন নয়। এই কেন্দ্রে যারা গান্ধী পরিবারের হয়ে ভোট সামলাতেন, তারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।" 

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য