দল চাইলেও, গ্রেপ্তার হলে কেজরি মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারেন?
৭ নভেম্বর ২০২৩দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আপ সোমবার একটা ঘোষণা করেছে। সেটা হলো, কেজরিওয়ালকে যদি মদের লাইসেন্স-কেলেঙ্কারি মামলায় সিবিআই গ্রেপ্তার করে, তাহলেও তিনি ইস্তফা দেবেন না। জেলে বসেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালাবেন কেজরিওয়াল।
সোমবার আপ-এর বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকের পর দিল্লির মন্ত্রী অতিশি জানিয়েছেন, ''দলের সব বিধায়ক কেজরিওয়ালকে বলেছেন, দিল্লির মানুষ কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। যদি ইডি তাকে গ্রেপ্তারও করে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়বেন না। জেলে বসেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালাবেন।''
কেন বিধায়করা এরকম কথা বলেছেন, তার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অতিশি। তিনি বলেছেন, ''আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। তারা বলছেন, আপের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। সেজন্যই সব বিধায়ক তাকে বলেছেন, গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি যেন ইস্তফা না দেন।''
অতিশির দাবি, ''কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হলে আমরা আদালতে গিয়ে আবেদন জানাব, মন্ত্রিসভার বৈঠক জেলে করতে দিতে হবে।''
আইন কী বলছে?
আইন বলছে, আদালতে শাস্তিপ্রাপ্ত কেউ সরকারি পদে থাকতে পারবে না। এর আগে শাস্তি পাওয়ার পর জয়ললিতা ও লালুপ্রসাদ যাদব মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জেলে গেছিলেন। কেজরিওয়াল শাস্তিপ্রাপ্ত নন। তাকে ইডি গ্রেপ্তার করতেই পারে, তবে শাস্তি দেয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে আদালতের উপর। কিন্তু এরপরেও নৈতিকতা বলে একটা বিষয় আছে। প্রবল চাপের বিষয় আছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদের মর্যাদার প্রশ্ন আছে।
প্রবীণ সংবাদিক সুনীল ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''গ্রেপ্তার করা হলে কেজরিওয়ালকে ইস্তফা দিতেই হবে। অতীতে জেলে যাওয়ার আগে সব মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন। নৈতিকতা বলে একটা বিষয় আছে। দ্বিতীয়ত, তিনি ইস্তফা না দিলে লেফটোন্যান্ট গভর্নর তাকে ইস্তফা দিতে বলতে পারেন। নির্দেশ না মানলে সরকার ফেলেও দিতে পারেন।''
জেলে যাওয়ার কিছুদিন পর মনীশ সিসোদিয়াকে পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়েছে।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা যায়?
ইডি সম্প্রতি জেরার জন্য কেজরিওয়ালকে ডেকে পঠিয়েছিল। কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ইডি-র কাছে যাননি। তিনি দাবি করেছিলেন, ইডি-র এই সমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই এই সমন প্রত্যাহার করতে হবে। ইডি অফিসে না গিয়ে তিনি মধ্যপ্রদেশে দলের নির্বাচনী প্রচারে চলে যান। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করার পথে ইডির কোনো আইনগত বাধা নেই।
লোকসভার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল পিডিটি আচারিয়া ফিনান্সিাল এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ''সংবিধান অনুযায়ী, পদে থাকর সময় রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের দেওয়ানি বা ফৌজদারি কোনো অপরাধেই গ্রেপ্তার করা যায় না। কার্যকাল শেষ হলে অবশ্য করা যায়। তাছাড়া অন্য কারও এই সাংবিধানিক সুবিধা নেই।''
তবে মুখ্যমন্ত্রীর মতো পদাধিকারীকে গ্রেপ্তার করাটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও থাকে। তাছাড়া আদালতে প্রমাণ করতে হবে, ওই মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলে প্রমাণ নষ্ট করতে বা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''কেজরিওয়ালকে এখনো জেলে যেতে হয়নি। যদি হয়, তাহলে তার পদ আঁকড়ে থাকাটা কতটা শোভন সেটা মাতায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও আইনি লড়াইয়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ফলে গ্রেপ্তার হলে ইস্তফা দেয়াটাই উচিত। না হলে, তার ভাবমূর্তিই ধাক্কা খাবে।''
রাজ্যপাল প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালদের আত্মানুসন্ধান করা দরকার। তাদের মনে রাখা উচিত, মানুষ তাদের নির্বাচিত করেনি। এই পর্যবেক্ষণ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের।
পাঞ্জাব সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছে, রাজ্যপাল বিধানসভায় পাস হওয়া পাঁচটি বিলে সম্মতি দিচ্ছেন না। দীর্ধদিন ধরে ঝুলিয়ে রেখেছেন। এর আগে তামিলনাড়ু ও কেরালা সরকারও একই অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হ.য়েছিল।
সুপ্রিম কোর্ট সলিসিটার জেনারেলকে বলেছে, বিধানসভায় বিল পাস হওয়ার পর রাজ্যপাল কী করছেন, সেই বিষয়ে কোর্টকে রিপোর্ট দিতে।
পাঞ্জাব সরকারের অভিযোগ, বিধানসভায় ২৭টি বিল পাস করা হয়েছে। ২২টি বিলে রাজ্যপাল অনুমতি দিয়েছেন। পাঁচটি বিল নিয়ে তিনি কিছুই করছেন না। কেবল কালক্ষেপ করছেন।
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বিরোধী দলশাসিত রাজ্যে এই সমস্যা ভয়ংকর জায়গায় চলে যাচ্ছে। প্রতিটি বিরোধী দলশাসিত রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের গোলমাল লেগেই রয়েছে। রাজ্যপালরা অভাবিত আচরণ করছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ।
সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''রাজ্যপাল পদটা তৈরি করা হয়েছিল রাজ্য সরকারকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখতে। কিন্তু কালক্রমে তাদের ভূমিকা বদলে গেছে। রাজনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে।''
এর আগে রাজ্যপাল পদ তুলে দেয়া নিয়েও প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। তবে জয়ন্ত মনে করেন, ''রাজ্যপাল পদ থাকা দরকার। একইসঙ্গে জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিল যাতে না আটকায় সেটাও দেখা জরুরি। সংসদে যেমন অর্থবিল পাস করার ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কোনো ভূমিকা নেই। তেমনই কিছু বিল বিধানসভা পাস করলে রাজ্যপালের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই, এই ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।''