কিউবার রাস্তায় বিক্ষোভ, সেনা নামিয়েছে প্রশাসন
১২ জুলাই ২০২১করোনাকালে খাবার মিলছে না। কাজ নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না-- এই অভিযোগে কিউবার একাধিক শহরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। হাতে পোস্টার নিয়ে নেমে পড়েছেন তারা। পোস্টারে লেখা, 'একনায়ক সরকার আর চাই না'। গণতন্ত্র এবং অধিকারের স্লোগান উঠছে মিছিল থেকে। কিউবার কমিউনিস্ট সরকার অবশ্য এই বিক্ষোভ মার্কিন ষড়যন্ত্র বলেই ব্যাখ্যা করেছে। রাস্তায় সেনা নামানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে মেশিনগান। কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং বর্তমানে দেশের প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানাল জানিয়েছেন, যেখানেই বিক্ষোভ হবে সেখানেই যেন কমিউনিস্টরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এক বছর আগেও চিত্রটা এমন ছিল না। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় কিউবার চিকিৎসকরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করতে। এমনকী, অ্যামেরিকাতেও তারা চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্ত কমিউনিস্ট কিউবা। সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে, মৃত্যুর হারও বেশি। দেশ জুড়ে কার্যত লকডাউন চলছে। তারই মধ্যে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।
হাভানা, সান্তিয়াগোর মতো জায়গায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। তাদের বক্তব্য, সামান্য খাবারের জন্য বিশাল লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। এই পরিস্থিতিতে তারা আর বাঁচতে পারছেন না। কমিউনিস্ট শাসনের অবসান চান তারা। কাস্ত্রো রেজিমের হাত থেকে মুক্তি চান। তাদের দাবি, কিউবার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে গেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই শাসকদল এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল একটি বিক্ষোভে আটকে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। বহু অভিযোগও জানানো হয়। মিগুয়েল অবশ্য জানিয়েছেন, মার্কিন মদতপুষ্ট কিছু মানুষ এ কাজ করছে। কড়া ভাবে বিক্ষোভ দমন করা হবে। সমস্ত কমিউনিস্টদের রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এ কথা বলে সংঘাতের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন মিগুয়েল। রাস্তায় রাস্তায় সেনাও নামানো হয়েছে। মেশিনগান নিয়ে সেনার গাড়ি রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে।
অ্যামেরিকার বেশ কিছু রাজনীতিবিদ এবং অ্যামেরিকায় বসবাসকারী কিউবার নাগরিকদের একটি বড় অংশ কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধিতা করেছে। জো বাইডেনকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, কিউবার সেনা যাতে নিজের দেশের নাগরিকদের উপর গুলি না চালায়, তার জন্য চাপ তৈরি করুক অ্যামেরিকা।
বিভিন্ন রাজ্যে মারপিট শুরুও হয়ে গেছে। হাভানায় বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে আহত হয়েছেন এপি-র ফোটোগ্রাফার। তার মুখে আঘাত লেগেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে দুই তরফের মানুষই আহতহয়েছেন বলে খবর মিলেছে।
ফিদেল কাস্ত্রোর হাত ধরে ১৯৫৯ সালে কিউবায় কমিউনিস্ট সরকার তৈরি হয়। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত কমিউনিস্টরাই শাসন করছে কিউবা। অ্যামেরিকার সহায়তায় কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ সংগঠিত হলেও কাস্ত্রোদের সরানো যায়নি। তবে এবারের বিক্ষোভ অন্য মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)