কালিয়াগঞ্জে থানায় আগুন, পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ
২৭ এপ্রিল ২০২৩নাবালিকাকে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ। উত্তেজিত জনতা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আক্রমণকারীদের ধরপাকড়ে পুলিশের অভিযান চলছে। তারই মধ্যে বুধবার রাতে গুলির ঘটনা।
গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর এলাকা। সেখানকার চাঁদগ্রামে পুলিশ অভিযান চালায় রাত দুটো নাগাদ। এই গ্রামেই বাড়ি বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মণের। তার পরিবারের দাবি, তিনটি গাড়ি নিয়ে একদল পুলিশ আসে। তারা বিষ্ণুর খোঁজ করে। কিন্তু বিজেপি নেতা সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না।
পুলিশের সঙ্গে বিষ্ণুর পরিবারের বচসা বাঁধে। এরপরই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিষ্ণুর ভাইপো মৃত্যুঞ্জয় বর্মণ। বিষ্ণু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ''থানায় হামলার সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই। আমি রাতে বাড়ি ছিলাম না। পুলিশ আমাকে না পেয়ে বাবাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন মৃত্যুঞ্জয় বাধা দেয়। পুলিশ তার বুকে গুলি করে।''
মৃত্যু ঘিরে রাজনীতি
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মৃত্যুঞ্জয়ের। পুলিশ দুই রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। বাড়ির সামনে মিলেছে কার্তুজের খোল। এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশকে আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার টুইট, ''মমতার ট্রিগার হ্যাপি পুলিশ কালিয়াগঞ্জে ৩৩ বছরের রাজবংশী যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।''
তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির অভিযোগ খারিজ করেছে। দলের সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, ''বিজেপি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। কালিয়াগঞ্জের নাবালিকা আত্মঘাতী হয়েছে, তাকে বলেছে খুন-ধর্ষণ। পুলিশকে আক্রমণ করছে, থানা জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ রাজ্যের পুলিশ উত্তরপ্রদেশের মতো এনকাউন্টারে মানুষকে মারে না।''
প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর এই তুলনাই টানছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''হাওড়ার ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে মধ্যরাতে পুলিশ গিয়েছিল। আইনজীবী, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচির বাড়িতেও তাই। এ বার কালিয়াগঞ্জের ঘটনা। এই রাজ্যে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটা অন্য রূপ দেখা যাচ্ছে। পুলিশের সংস্কার দরকার।''
কালিয়াগঞ্জে নাবালিকাকে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে নয়া মাত্রা জুড়েছে যুবকের মৃত্যু। মঙ্গলবার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, একটি বাড়িতে ঢুকে তিন পুলিশকর্মীকে মারধর করছে উন্মত্ত জনতা। থানায় হামলার সময় কাছের ওই বাড়িতে কয়েকজন পুলিশকর্মী জনতার রোষের মুখে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে ওই বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়ির জানলা ভেঙে ঢুকে জনতা আক্রমণ করে পুলিশকে।
হিংসায় থমথমে শহর
এই দুষ্কৃতীদের খোঁজে পুলিশি ধরপাকড় চলছে কালিয়াগঞ্জে। কয়েকটি এলাকায় জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্য পুলিশের সাবেক আইজি পঙ্কজ দত্ত। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পুলিশের ভূমিকাও দুর্ভাগ্যজনক। তারা পরিস্থিতি ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে আমার বিশ্বাস। জনতার আস্থা তারা এখনো ফিরে পায়নি।''
সাধারণ মানুষ ও পুলিশ, উভয় ক্ষেত্রেই হিংসার অভিযোগ উঠছে। চিত্রশিল্পী সমীর আইচ এই সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''জনতা সহজে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে না। তারা বিচার পাচ্ছেন না। পুলিশ-প্রশাসনে আস্থা নেই। তাই এ সব ঘটনা আমাদের দেখতে হচ্ছে।''
আদালতের রিপোর্ট তলব
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জানিয়েছেন, তিনি কালিয়াগঞ্জের ঘটনার উপর নজর রাখছেন। আগেই এ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি। বালিকার রহস্যমৃত্যু নিয়ে এ দিন রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্টও। বৃহস্পতিবার আদালত নির্দেশ দিয়েছে, নাবালিকার দেহের ময়নাতদন্তের ভিডিও সংরক্ষণ করতে হবে। আপাতত দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের আবেদন বিচারপতি খারিজ করেছেন। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার পরের শুনানি।