নাবালিকার মৃত্যু: সংবেদনহীন পুলিশ, কমিশনের তরজা
২৫ এপ্রিল ২০২৩উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের গ্রামে এক নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয় গত শুক্রবার। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে তাকে। যদিও পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ওই ছাত্রীর।
নাবালিকার দেহ উদ্ধারের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর নিন্দার ঝড় ওঠে। ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, রাস্তা দিয়ে হেঁচড়ে, চ্যাংদোলা করে দেহ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বিভাগীয় তদন্তের পর এএসআই পদমর্যাদার চার পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
মৃত্যু ঘিরে তরজা
এই মৃত্যু ঘিরে যথারীতি রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি, বামেরা পথে নেমেছে। পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল হচ্ছে। জবাব দিচ্ছে তৃণমূল। প্রায় একই মেজাজে জাতীয় ও রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন এ নিয়ে একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে।
ঘটনার পর তড়িঘড়ি রাজ্যে আসেন জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো। তিনি পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, "২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর আমরা পুলিশের দেখা পেয়েছি।
নাবালিকার মোবাইল ফোন এখনো বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। দেহ দেখার পর কে প্রথম থানায় খবর দেন, সেটাও পুলিশ জানে না।"
খুন না আত্মহত্যা?
নাবালিকার দেহের ময়নাতদন্ত নিয়েও জলঘোলা হয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে নাবালিকার। ধর্ষণের অভিযোগও খারিজ করেছে পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার মহম্মদ সানা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, "মেডিক্যাল বোর্ডের তিন সদস্য যৌন নিপীড়নের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।"
তথ্যপ্রমাণ যাতে লোপাট না হয়, তাই পুলিশ কর্মীরা দ্রুত নাবালিকার দেহ থানায় আনছিলেন। ভাইরাল ভিডিও সংক্রান্ত প্রশ্নে এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন পুলিশ সুপার। রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "দেহ থানায় নয়, মর্গে নিয়ে যাওয়ার কথা। যেখানে দেহ মিলেছে, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করা উচিত।"
চাপানউতোর দুই কমিশনে
নাবালিকার ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ খারিজ করেছেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও। কিন্তু প্রিয়ঙ্ক কানুনগোর বক্তব্য, "আমি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। আত্মঘাতী হওয়া ও যৌন নির্যাতন না হওয়ার দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।"
রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ-এর চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়ের পাল্টা মন্তব্য, "উনি কি জ্যোতিষী? ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, বিষক্রিয়ায় নাবালিকা মারা গিয়েছে। তবু ফের ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে।"
প্রশ্ন নাগরিক সমাজে
এই ঘটনাক্রমে বিস্মিত সমাজকর্মী, অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শিশুর অধিকার রক্ষা করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। দোষারোপের দায় জাতীয় কমিশন কেন নেবে, কেনই বা রাজ্য কমিশন তার মোকাবিলায় বিবৃতি দেবে, এটা বোঝা যাচ্ছে না।"
মানবাধিকার কর্মী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিভিন্ন কমিশন নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনভাবে তারা কাজ করে না। এর ফলে নারী-শিশুর অধিকার রক্ষা করা যাচ্ছে না। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।"
ফের নাবালিকার দেহ
কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এ সব নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময় আরো এক নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছে। মালদহের কালিয়াচকে একটি কৃষিজমি থেকে মঙ্গলবার সকালে দেহ মেলে। এক্ষেত্রেও ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে।