অ্যাপ বন্ধে ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তা
২০ জানুয়ারি ২০১৫টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নির্দেশে রোববার ভোররাত থেকে ভাইবার ও ট্যাংগো বন্ধ রাখা হয়৷ এসব ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা ব্যাপক সন্ত্রাস চালাচ্ছে – এ কথা জানিয়ে সন্ত্রাসীদের রুখতেই প্রথমে ভাইবার ও ট্যাংগো বন্ধ করা হয়৷ তারপর হোয়াটস অ্যাপ, লাইন আর মাই পিপলও বন্ধ করেছে সরকার৷ বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ প্রতিক্রিয়া হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ৷
তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমের ব্লগে সরকারের এ উদ্যোগকে সমর্থনই জানিয়েছেন এম এস বাশার৷ তাঁর লেখার শিরোনাম, ‘‘যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের দেশে বন্ধ বা ব্লক করে দেয়া হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার মেসেজিং সেবা''৷
বাশার জানান, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও তাঁর দেশে ভাইবার বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন৷ এম এস বাশারের ভাষায়, ‘‘নির্বাচিত হলে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ সেবা নিষিদ্ধ করবেন,একথা বলছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন৷ গত ১৪-০১-২০১৫ ইং এক সাক্ষাৎকারে পুনরায় নির্বাচিত হলে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন৷ প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে....৷ এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সেবার নাম উল্লেখ না করলেও ধরে নেওয়া যায় এক্ষেত্রে তিনি প্রতিষ্ঠিত ভাইবার, স্ন্যাপচ্যাটের মতো অ্যাপগুলোকেই ইঙ্গিত করেছেন৷ ... ক্যামেরন আরও জানান, পুনরায় নির্বাচিত হলে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ডেটা শেয়ার করতে রাজি নয় এমন সব এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সেবা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তিনি বিবেচনা করবেন৷ এই অ্যাপগুলো সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের জন্য নিরাপদ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ক্যামেরন৷''
এম এস বাশার মনে করেন বাংলাদেশের সরকারও যে পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার প্রয়োজন ছিল৷ সরকারের এ পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘একজন সাধারণ নাগরিক হয়ে সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই৷ তবে একটি প্রশ্নও রেখেছেন তিনি, আর তা হলো, ‘‘এইগুলি যদি এতই ভয়ানক ও শক্তিশালী হয়ে থাকে, তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব কেন এখনও এরকম পদক্ষেপ নেয়নি? যেখানে আল কায়েদা, আইএস-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তারা যুদ্ধরত অবস্থায় আছেন?''
মুক্তচিন্তা ব্লগে নিজাম দরবেশও ভাইবার ও অন্যান্য অ্যাপ বন্ধ করাকে সমর্থন জানাতে গিয়ে গত কয়েকদিনে যে আগুনে পুড়ে কমপক্ষে ২৭ জন মানুষ মারা গেছেন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷ ‘‘২৭টি অগ্নিদদ্ধ লাশ ও ভাইবারের ভাইব্রেশন: স্যালিউট টু ভাইবার জেনারেশন''-এই শিরোনামের লেখার শুরুটা এমন, ‘‘২৭টি মানুষ পুড়ে পুড়ে ছাই হলো কিন্তু গাছের ২৭টি পাতাও পড়লো না ঝরে৷ মানুষ তার নিরাপত্তার জন্য বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রকে দেয়, কিন্তু ২৭টি গুলিও বের হলো না এই হত্যাকাণ্ড থামাতে৷ ১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৭ জন মানুষও প্রতিবাদ করলাম না৷ ২ কোটিরও বেশি ঢাকাবাসীর ২ জনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালো না, কেউ বললো না – আগুন দিয়ে যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তারা কেউ মানুষ না, সেই অমানুষ পশুদের আক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে, নিজে বাঁচতে আসুন হাতে হাত মেলাই৷ এমনকি ৭ কোটি তরুণ জনগোষ্ঠীর কেউ জাগলো না আগুনের তাপে, অগ্নিদগ্ধ মানুষের গগনবিদারী অসহ্য অমানুষিক চিৎকারে৷ আগুন তো এখনো তার আমার গায়ে লাগে নি! ইডেন কলেজের অগ্নিদগ্ধ তিন ছাত্রী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী – মরুক ওরা, বাসের হেলপার, ড্রাইভার – এগুলো তো মানুষের বাচ্চা না! মরুক ছোটলোকের বাচ্চারা!! আমাদের কী!!''
যাঁরা ভাইবার বন্ধ হওয়ায় বেশি ক্ষুব্ধ তাঁদের সমালোচনা করে নিজাম দরবেশ লিখেছেন, ‘‘ভাইবারের ভাইব্রেশন যেই বন্ধ হলো, হঠাৎ করে ঘুমিয়ে থাকা ৯০ লক্ষ তরুণ-তরুণী কেঁপে উঠলো৷ আচ্ছা ভাইব্রেশন বন্ধ হলে কেঁপে উঠে কেন? ভাইব্রেশন বন্ধ হলে তো ঘুম ভালো হবার কথা! ও আচ্ছা, এরাই বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী, যারা আগামী দিনে দুর্নীতিমুক্ত উন্নত একটা দেশ বানাবে৷ তরুণরাই বদলে দেবে দেশ, সেই আশায় দিন গুনছি আমরা সবাই! আগুন দিয়ে যারা পোড়ায় তারাও তরুণ৷ যাদের কাজ নারী-শিশুর বিপদে এগিয়ে যাওয়া, তারাই কিনা পেট্রোল বোমা দিয়ে নারী শিশু আর গরিব মানুষদের পুড়িয়ে মারে, তারা তো খুব খারাপ তাই না? আর তুমি এইসব নারী-শিশুর অগ্নিদগ্ধ মানুষদের দেখেও না দেখার ভান করো, তোমার ঘুম আসে, কিন্তু সেই তুমি কেঁপে উঠো ঠিকই ভাইবারের ভাইব্রেশন বন্ধ হলে? তোমার প্রতিবাদে ঝড় ওঠে, সেই প্রতিবাদে কেঁপে ওঠে দেশ! যারা পেট্রোল দিয়ে মানুষ পোড়ায়, নিষ্ঠুর বর্বর সেই সব নষ্ট তরুণদের সাথে আমাদের তাহলে তফাৎ কোথায়?''
নিজাম দরবেশ আরো লিখেছেন, ‘‘মানুষ হত্যায় তুমি ঘুমাও, আর সেই ঘুম ভাঙে ভাইবারের ভাইব্রেশন বন্ধ হলে! ৭ কোটি তরুণ তরুণী কি লাগে একশ ঘাতক পেট্রোল বোমাবাজদের জীবনের ভাইব্রেশন থামিয়ে দিতে ? ভাইবারের ভাইব্রেশন নিয়ে না ভেবে একটু কি ভাবা যায় না, বার্ন ইউনিটের অগ্নিদগ্ধ মানুষটির কথা? যে চিৎকার করে বলে, ‘স্যার , আমারে গুলি করে মেরে ফেলেন স্যার, একটা গুলি করেন স্যার, একটা গুলি প্লিজ, সইতে পারছি না স্যার, আল্লাহর দোহাই লাগে, স্যার আমাকে গুলি করে মেরে ফেলুন!' সেই চিৎকারে কি ঘুম ভাঙবে না? শ'খানেক পেট্রোল বোমাবাজদের কে থামাবে? তুমি কি নিশ্চিত যে পেট্রোল বোমায় তুমি বা তোমার প্রিয় মানুষগুলো বেঁচে যাবে?''
নিজাম দরবেশ তাঁর লেখাটি শেষ করেছেন এভাবে, ‘‘তুমি অগ্নিদগ্ধ মানুষের সীমাহীন কষ্টের সুতীব্র চিৎকারে ঘুমিয়ে পড়ো আর জেগে উঠো ভাইবারের ভাইব্রেশন বন্ধ হলে! ফেসবুকে পোড়ানোর ছবি দাও লাইকের আশায়! ট্যাংগোতে অ্যাকাউন্ট খুলে ডার্লিংকে ভিডিও চ্যাটে একটু খোলামেলা না দেখে ঘুমাতে পারো না! তোমার এই কাঁপাকাঁপি বন্ধ হবে তোমার কোনো প্রিয়জনও যখন ঝলসে যাবে আগুনে আর চিৎকার করে বলতে থাকবে, ‘স্যার, আমারে গুলি করে মেরে ফেলেন স্যার, একটা গুলি করেন স্যার, একটা গুলি প্লিজ, সইতে পারছি না স্যার, আল্লাহর দোহাই লাগে, স্যার আমাকে গুলি করে মেরে ফেলুন!''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন