করোনায় মৃত প্রায় এক লাখ
১০ এপ্রিল ২০২০এক লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গেল বিশ্বব্যাপী করোনা মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও মৃত্যু দেখলো অ্যামেরিকা। এই মুহূর্তে মৃতের সংখ্যার নিরিখে ইটালির পরেই মার্কিন বিশ্ব। মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৬৯১ জনের। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় অ্যামেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য হলেও কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ৩২ হাজার নতুন রোগী পাওয়া গিয়েছে। যা মঙ্গল এবং বুধবারের তুলনায় সামান্য কম।
অ্যামেরিকায় কি তা হলে করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা উচিত হবে না। কারণ এর আগে চীন, ইটালি এবং স্পেনেও দেখে গিয়েছে এক দিন বা দু'দিন সংক্রমণ সামান্য কমলেও ফের তা উঠতে শুরু করেছে। তবে কোনও কোনও গবেষকের রিপোর্ট বলছে, সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে আগের চেয়ে সামান্য উন্নতি হয়েছে অ্যামেরিকার। তাঁরা বলছেন, এক সপ্তাহ আগেও হিসেব বলছিল করোনায় দেশের অন্তত এক থেকে দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলের রিপোর্ট বলছে, মোট মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজারের মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব। বস্তুত, বৃহস্পতিবার তার প্রথম আভাস মিলেছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া সহ অধিকাংশ মার্কিন প্রদেশ থেকেই রিপোর্ট এসেছে যে, বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। তবে উদ্বেগ বাড়িয়েছে শিকাগো। একটি জেলে ৪৫০ জন বন্দির শরীরে নতুন করে করোনার সংক্রমণ মিলেছে। বাকি বন্দিদের মধ্যেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সংক্রমণ সামান্য কমলেও স্বস্তির সুযোগ নেই। অ্যামেরিকা জুড়ে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে এখনও পর্যন্ত ৬৬ লাখ মানুষ বীমা সংস্থাগুলির কাছে বেকারত্বের সুযোগ সুবিধা দাবি করেছে। কাজ চলে যাওয়ার নোটিস জমা পড়েছে ৬৯ লাখ। আগামী কয়েক সপ্তাহে সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৮ সালে মহা মন্দার সময়েও এই পরিমাণ মানুষ কাজ হারাননি। এই ঘটনাই স্পষ্ট করে দেয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই মনে করছে শক্তিশালী দেশগুলি।
করোনা এবং মন্দা নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতি সংঘের নিরাপত্তা পরিষদও বৈঠকে বসেছিল। এই প্রথম করোনা নিয়ে বৈঠক করলো নিরাপত্তা পরিষদ। মন্দার মোকাবিলা কী ভাবে করা সম্ভব, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে সেখানে। মন্দা নিয়ে চিন্তিত ইউরোপীয় ইউনিয়নও। এর মোকাবিলায় একটি বিপুল তহবিল তৈরির প্রচেষ্টাও শুরু করেছে ইইউ।
এ দিকে বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও যুক্তরাজ্যে করোনা মৃত্যু আটশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে প্রায় আট হাজার লোকের। তবে আনন্দের খবর, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে সরিয়ে সাধারণ বেডে রাখা হয়েছে। তাঁর পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যুক্তরাজ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে খানিকটা কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে ভোট দিতে যান জনগণ। শুধু তাই নয়, প্রায় তিন হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য বিশেষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অন্য দিকে চীন জানিয়েছে, নতুন করে আরও তিন জনের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে। তবে নতুন সংক্রমণ বিদেশিদের মাধ্যমেই দেশে ঢুকেছে বলে ফের দাবি করেছে চীন প্রশাসন। ইটালি এবং স্পেনের পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো। ইটালিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজারের সামান্য বেশি। স্পেনে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার মানুষের। ফ্রান্সে মারা গিয়েছেন ১২ হাজার ২১০ জন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)