করোনা বিষয়ে জার্মানি হতাশ করেছে
৫ এপ্রিল ২০২১গত মে মাসে জার্মানি ক্রমান্বয়ে ও সতর্কতার সঙ্গে প্রথম বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছিল৷ এরপর আমি প্রায় দুই মাস পর আমার ফ্ল্যাটে বাস করা সঙ্গীর সাথে পাবে গিয়েছিলাম৷ বিয়ারের বিশাল গ্লাসের সঙ্গে আমার হাসিমুখের ছবি দেখে নিজ দেশ লকডাউনে থাকা স্কটল্যান্ডের এক বন্ধু আমাকে এই বার্তা পাঠিয়েছিল, ‘‘ইশ্, আমি যদি এই মুহূর্তে জার্মানিতে বাস করতে পারতাম!''
বন্ধুর এমন মনে হওয়ার কারণ, সেই সময় ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানিতে করোনায় মৃত্যুর হার কম ছিল৷ করোনা সামলাতে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল যদিও তা ফ্রান্স বা স্পেনের মতো কড়া ছিল না৷ জার্মানির ব্যবস্থাগুলো কার্যকর মনে হচ্ছিল৷ ‘শর্ট-টার্ম ওয়ার্ক স্কিম' ব্যবস্থার কারণে আমার পরিচিত কেউ চাকরি হারিয়েছেন বা বড় আর্থিক সংকটে পড়েছেন, এমনটা দেখিনি৷ শর্ট-টার্ম ওয়ার্ক স্কিম মানে হলো, সংকটের সময় কোনো কোম্পানি চাইলে তার কর্মীদের কাজের সময় (কর্মঘণ্টা) কমিয়ে দিতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী বেতন দিতে পারে৷ সেক্ষেত্রে কর্মীদের স্বাভাবিক বেতনের বাকি অংশটুকু দেবে সরকার৷ এতে করে কোম্পানি তার দক্ষ কর্মীদের ছাঁটাই না করে ধরে রাখতে পারে৷ ফলে সংকট কেটে যাওয়ার পর খুব দ্রুতই আবার স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারে৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়ায় করোনা মোকাবিলায় তাকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেতৃবৃন্দের চেয়ে বেশি বিশ্বস্ত ও নিরাপদ মনে হয়েছিল৷
কিন্তু শীতকাল আসার পর পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে৷ অক্টোবর থেকে অন্যান্য জায়গার মতো জার্মানিতেও করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ কিন্তু তারপরও আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম৷
কারণ করোনার ছোঁয়াচে সংস্করণ ছড়িয়ে পড়তে থাকায় জার্মানি সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল৷ সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পাওয়া করোনার টিকাটিও এখানেই আবিষ্কৃত হয়েছিল - অভিবাসী এক দম্পতি সেটি করেছিলেন৷ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলেও আমার মনে হয়েছিল বিশ্বের প্রায় যে-কোনো দেশের তুলনায় আমি এখানে বেশি নিরাপদ৷
কিন্তু এখন এপ্রিলের এই সময়ে এসে আমার সেই শান্তির অনুভূতিটা অনেক দূরের মনে হচ্ছে৷ কারণ বিধিনিষেধ আরোপ করতে গিয়ে জার্মানি হিমশিম খাচ্ছে৷ টিকাদান কর্মসূচিতে ধীর গতি দেখা যাচ্ছে৷ এই সময়ে খবর দেখা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে- কিন্তু চোখকে সরিয়েও রাখতে পারছিনা৷
আমি দেখেছি থিয়েটার, রেস্টুরেন্ট, মিউজিয়াম বন্ধ রেখে সরকার স্কুল খুলে দিয়েছে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে অফিসে যেতে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে৷ আমি দেখেছি স্পেন ও গ্রিসের দ্বীপগুলোতে হাজার হাজার জার্মান ছুটি কাটাতে গেছেন৷ কিন্তু ফেরার সময় তাদের উপর কোয়ারান্টিনের তেমন শর্ত আরোপ করা হয়নি৷ আমি দেখেছি ম্যার্কেল ও ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা রাত তিনটা পর্যন্ত মিটিং করে ইস্টারের সময় পাঁচদিনের কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন এবং তারপর নাটকীয়ভাবে চ্যান্সেলর সেটি বাতিল করে ক্ষমা চেয়েছেন, স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ওটা ‘ভুল' ছিল৷
এদিকে, আমি দেখছি স্কটল্যান্ডে আমার মা-বাবা (দুজনেরই বয়স ৬৫-র নীচে) টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ আমি দেখছি, টিকাদানে ধীর গতি সত্ত্বেও জার্মানির কয়েকটি রাজ্য ইস্টার সপ্তাহান্তে টিকা দেয়ার কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে৷ আমি দেখছি যুক্তরাষ্ট্র ১০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার বিষয়টি উদযাপন করছে: যা জার্মানির পুরো জনসংখ্যার চেয়ে বেশি৷
জার্মানির বর্তমান ব্যর্থতার জন্য অনেক কারণ দেখানো যেতে পারে৷ যেমন জার্মানির আমলাতন্ত্র ও অনমনীয়ভাব, পর্যাপ্ত ডিজিটালাইজেশন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফেডারাল ব্যবস্থা সমস্যা তৈরি করছে কিংবা ইইউর নিয়মকানুন বাধা হয়ে উঠেছে৷
এসব কারণের একটি বা সবগুলো সত্য হতে পারে৷ কিন্তু আমি ও আমার মতো অনেক অভিবাসী হতাশ অনুভব করছি৷ আমার মনে হয়েছিল এই মহামারির সময়ে জার্মানি আশার বাতিঘর হয়ে উঠবে৷ এই কারণে নয় যে, দক্ষতার জন্য জার্মানি সারা বিশ্বে পরিচিত, জার্মানি একটি আধুনিক ও অগ্রগতিশীল রাষ্ট্র, সেজন্যও৷
কিন্তু এই সংকটে জার্মানি আমাকে হতাশ করেছে৷
এলিয়ট ডুগলাস/জেডএইচ