করোনা কোন মজার ব্যাপার নয়, সতর্ক হোন
২০ মার্চ ২০২০বলছি গত বুধবারের কথা৷ ম্যার্কেল জাতির উদ্দেশ্যে সেদিন ভাষণ দিয়েছেন বটে তবে গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্তের কথা জানাননি৷ তিনি বরং জানিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে জার্মানি৷ আর এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি৷
এই সহযোগিতার মানে কিন্তু এই নয় যে সবাইকে রাস্তায় নেমে হাতে হাত ধরে একে অপরকে সাহায্য করতে হবে৷ আসলে বিষয়টি উল্টো, ম্যার্কেল চাচ্ছেন জনগণ যাতে যতটা সম্ভব ঘরের মধ্যে থাকে, জনসমাগম পরিহার করে, ক্লাবে, বারে, রেস্তরাঁয় যাওয়া বন্ধ করে৷ মোদ্দা কথা, করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে সরকার যেসব পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো মেনে চলে৷ আর এই সহযোগিতাটা পেলে জার্মানির রাষ্ট্রের পক্ষে করোনার কারণে সৃষ্ট কঠিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে৷
ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্যে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলেছেন, সেটা হচ্ছে করোনা এক গুরুতর ব্যাপার, আর তাই এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে৷ আশার কথা হচ্ছে, জার্মানির সাধারণ মানুষও বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে৷ অন্তত যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি, যে শহরে থাকি - সেখানকার আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে তাই মনে হচ্ছে৷ আর মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা ইটালির তুলনায় জার্মানিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার কম রাখতে সহায়তা করছে বলে এখন অবধি বলা যায়৷
তবে, আমার মাতৃভূমির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন মনে হচ্ছে৷ সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে মসজিদে জমায়েতে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে, সেখানে আমাদের দেশে সেরকম কোন উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি৷ উল্টো প্রায় ২৫ হাজার মানুষ একত্র হয়ে করোনা রোধে প্রার্থনার খবর আমরা দেখতে পাই৷
প্রার্থনা মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপার৷ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রার্থনায় অংশ নেবেন - সেটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিটাই এমন যে যেকোন সমাবেশই ক্ষতিকর হতে পারে৷ কেননা, প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে জমায়েত বড় ভূমিকা পালন করে৷ এজন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশ মসজিদের নামাজ পরা থেকে বিরত থাকছেন৷ শুধু মসজিদ নয়, জার্মানিতে গির্জায় প্রার্থনাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার কমাতে আমাদের দেশেও যেকোন ধরনের জনসমাবেশ বন্ধের পাশাপাশি মসজিদে জমায়েতে নামাজ পড়াও আপাতত বন্ধ রাখা উচিত৷ প্রার্থনা ঘরে বসে করাটাই এখন সবচেয়ে নিরাপদ যা বিভিন্ন মুসলমান দেশে করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি আরেকটি বিষয় খেয়াল করেছি৷ কোথাও কোন করোনা রোগী শনাক্ত হলেই তার নাম-পরিচয় জানতে অস্থির হয়ে ওঠেন কেউ কেউ৷ ভাবটা এমন রোগীর পরিচয় জানলেই বুঝি বাকিরা নিরাপদ হয়ে যাবে৷ বিষয়টি আসলে মোটেই সেরকম নয়৷ করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সতর্ক থাকতে হবে৷ নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া এবং একজন ব্যক্তি আরেকজনের কাছ থেকে অন্তত এক মিটার দূরে থাকার মাধ্যমে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করা সম্ভব৷ তাই নিজে সতর্ক হওয়ার কোন বিকল্প নেই৷