করোনা কি তরুণদের অলস করে দিচ্ছে?
১৩ জানুয়ারি ২০২১আমার কিন্তু তেমনটা মনে হয় না৷ যদিও করোনার কারণে অনেক তরুণ চাকরি হারিয়েছে কিংবা কাজ কমে গেছে৷ ইনডোর খেলাধুলা বা ডিসকোগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ পড়াশোনা বাড়ি থেকেই হচ্ছে৷ এবার স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়, তবে প্রাণশক্তিতে ভরপুর তরুণ প্রজন্ম সময় কাটাচ্ছে কিভাবে ? কী করছে তারা? আমার জানা মতে জার্মানিতে বেশিরভাগ তরুণ ছেলে-মেয়ে নিজেদের ফিট রাখতে এবং আকর্ষণীয় দেখাতে নিয়মিত জিমে যায় এবং বিভিন্ন খেলাধুলা করে থাকে৷ লকডাউনে বিভিন্ন জিম থেকে অনলাইন কোর্সের অফার দিয়েছে, যা কিনা নিজের ঘরে থেকেই করা সম্ভব, আমার পরিচিতদের কেউ কেউ জুম-এ অংশ নিয়ে এরকম ব্যয়াম করছে৷ আবার কিছু দামী জিম থেকে ব্যায়াম করার হালকা কিছু যন্ত্রপাতি বাড়িতে নেওয়ার সুযোগও দিচ্ছে, যেন তারা ঘরে থেকেই সেগুলো জিমের মতো ব্যবহার করতে পারে৷
আসলে তরুণ তরুণীরা আগে থেকে অনলাইনে কাজ করায় অভ্যস্ত বলে অনলাইন বিষয়ক কোনো কাজে অংশ নিতে ওদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না৷ আমার বন্ধু মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জারা একটি দোকানে পার্টটাইম চাকরি করে, আগামী মাস থেকে দোকান বন্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ মেয়েটির চাকরি থাকবে না৷ কিন্তু এতে ও যে খুব চিন্তিত তা মনে হলো না৷ ওর ভাষায়, "পড়াশোনা, চাকরি মিলিয়ে সবসময় একই নিয়মে চলেছি, এখন বাধ্যতামূলক কাজগুলো না করে নিজের মতো করে চলব, নেটফ্লিক্স দেখব, স্যোশাল মিডিয়ায় বা আলসেমি করে সময় কাটাব৷” মেয়েটি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই হাত খরচ চালাতে বিভিন্ন দোকানে কাজ করছে৷
সপ্তাহে একদিন আমার বাসার কাজে সহায়তা করে কসোভো থেকে আসা শিরিয়া৷ জার্মানিতে জন্ম নেওয়া ওর ২৫ বছর বয়সি ছেলে আরলিন্ড কিছুদিন আগেই গাড়ির টেকনেশিয়ান হিসেবে তিন বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে৷ গত কয়েক বছর থেকে প্রতি শুক্রবার রাতে ও নিয়মিত ডিসকোতে যায়৷ আর ডিসকোতে খরচ করার টাকা টুকটাক কাজ করে ওকেই জোগাড় করতে হতো৷ কিন্তু এখন সারারাত ডিসকোতে নাচানাচি করতে না পারলেও আরলিন্ডের মোটেই খারাপ লাগছে না বরং পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পেরে ওর নাকি ভালো লাগছে৷ অস্থির প্রকৃতির এই ছেলেটির এমন আচরণ কিছুটা হলেও আমাকে বিষ্মিত করেছে!
তরুণ প্রজন্ম সবসময়ই সবকিছু তাড়াতাড়ি এবং সহজেই অ্যাডাপ্ট করতে পারে যা এই পরিস্থিতিতে তরুণদের সাথে কথা বলে বা শুনে আমার আবারও মনে হলো৷ তাছাড়া করোনার মতো কঠিন পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে যার যার বাসার পরিবেশেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে আমি মনে করি৷ তবে যারা একা থাকে এবং যাদের সন্ধ্যা বা রাতে নিয়মিত বাইরে যাওয়া বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে রেস্তোরাঁ বা অন্য কোথাও দেখা করার অভ্যাস তারা কিছুটা সমস্যায় পড়ছে, বলাই বাহুল্য তারা একাকী বোধ করছে৷
লকডাউনে বাসায় থাকার কারণে অনেকেই নতুন নতুন রান্নার রেসিপি পরীক্ষা করছে, তাদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সি বেনেটও একজন৷ বন শহরের বাসিন্দা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সেরা ছাত্র বেনেটের এবার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার কথা ছিলো কিন্তু ড্রাইভিং স্কুল বন্ধ৷ ওরও কিন্তু এতে মন খারাপ হয়নি৷ ছেলেটির রান্নায় আগ্রহ আগে থেকেই ছিলো আর এখন সময় বেশি থাকায় এবার ক্রিসমাসের কেক বিস্কুট নিজেই বানিয়েছে এবং অন্যদেরও দিয়েছে৷
প্রতিবেশির ছেলে কাই, ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে, তারই অংশ হিসেবে তাকে বাস, ট্রাক চালানোর লাইসেন্স করতে হবে৷ সে পরীক্ষাই ছিল সামনে, আপাতত পরীক্ষা স্থগিত কিন্তু তা নিয়ে মোটেই ভাবছে না কাই৷ এখন সে নিজের মতো করে হেসে খেলে সময় কাটাচ্ছে৷ আর মাঝে মাঝে দুই একজন করে বন্ধু সাথে নিয়ে হাটতে যায়, স্কের্টবোর্ড চালায়৷ কাইয়ের ভাষায়, "দল বেধে ঘরের ভেতরে না থাকলেই হলো৷ করোনাকালে সচেতন থাকা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই, তাই সময়টাকে অন্যভাবে উপভোগ করাই সঠিক পন্থা৷”
বর্তমান পরিস্থিতির সাথে নবীন-প্রবীণদের চেয়ে তরুণ প্রজন্ম অনেকটাই সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে বলেই আমার মনে হয়৷