‘এভারেস্টে চড়া পর্বতারোহণ নয়’
৩ জুন ২০১৩সুইজারল্যান্ডের উয়েলি স্টেক ও ইটালির সিমোনে মোরো, দু'জনেই নাম-করা পর্বতারোহী৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আবার এক ব্রিটিশ অ্যালপাইন ফটোগ্রাফার৷ এই তিনজনের সঙ্গে শেরপাদের প্রায় হাতাহাতি বাধে গতমাসে মাউন্ট এভারেস্টের ঢালে৷ বিরোধটা স্বভাবতই বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে চড়ার অধিকার ও তার নগদ মূল্য নিয়ে৷
ওদিকে মেসনার গেছিলেন কাটমান্ডু – প্রত্যাশা মতোই – হিলারি-তেনজিংয়ের এভারেস্ট বিজয়ের ৬০ বছর পূর্তির উৎসব উপলক্ষ্যে৷ এবং প্রত্যাশা মতোই তাঁকে গতমাসের হাতাহাতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়৷ মেসনার রেখেঢেকে কথা বলার পাত্র নন৷ তিনি সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইউরোপীয় পর্বতারোহীদের ‘‘পরগাছা'' বলে অভিহিত করেছেন৷
‘‘পরগাছা''
মেসনারের যুক্তি হলো, শেরপারা দড়িটড়ি লাগিয়ে সব ব্যবস্থা করে রেখে তারপর দেখে, কিভাবে শ'য়ে শ'য়ে মানুষ এভারেস্টে চড়ছে, যেন হাইকিং করতে এসেছে৷ সকলেই চড়ার সময় শেরপাদের বসানো দড়ি, মই ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে৷ মেসনার আরো খোলসা করে বলেছেন, ‘‘পর্বতারোহীরা যাঁরা খুম্বু আইসফল-এ শেরপাদের বসানো মই ব্যবহার করেন, পরে দড়ি ছাড়া এভারেস্টে চড়েন এবং দাবি করেন যে তাঁরা বিশেষ কিছু করেছে, তাঁরা হলো পরগাছা৷ সকলেই শেরপাদের সৃষ্ট অবকাঠামো ব্যবহার করেন, কিন্তু সকলে তার জন্য পয়সা দিতে রাজি নন৷''
ইউরোপীয়দের সঙ্গে বিরোধ সম্পর্কে শেরপাদের ভাষ্য হলো, ইউরোপীয়দের বলা হয়েছিল বাণিজ্যিক পর্বতারোহীদের জন্য লোৎসে ফেসে দড়ি বসানো হচ্ছে৷ এখন যেন তাঁরা বেস ক্যাম্পেই থাকেন৷ অপরদিকে ইউরোপীয়দের দাবি, তাঁরা তো আর শেরপাদের লাগানো দড়ি ব্যবহার করেননি৷ কাজেই তাঁদের নিজের মর্জি মতো চড়ার অধিকার ছিল৷
পর্বতারোহণ, না ট্যুরিজম?
বিরোধ যা নিয়েই হোক, তার পর সেই বিরোধ নিয়ে হাতাহাতি যেন পর্বতারোহণের মতো একটি সুন্দর, ছিমছাম স্পোর্টে হঠাৎ ‘গার্মেন্টস' ঢুকে যাওয়া! বিত্তশালী পশ্চিমি পর্বতারোহীরা আসছেন এভারেস্টে চড়তে৷ শেরপারা সে তুলনায় অতি কম পারিশ্রমিকে তাঁদের সাহায্য করছেন, পথ দেখাচ্ছেন, মালপত্র বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ এই তো সুপ্রচলিত প্রণালী৷
কিন্তু এভারেস্ট বিজয়ের ৬০ বছর পরে এভারেস্ট আরোহণের ধারাপ্রকৃতি বদলে গিয়েছে, আসল সমস্যাটা সেখানেই৷ রাইনহোল্ড মেসনার, যিনি প্রথম অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্টে চড়েছেন; যিনি প্রথম অক্সিজেন ছাড়া বিশ্বের যে ক'টি শৃঙ্গের উচ্চতা আট হাজার মিটারের বেশি, তাদের মধ্যে সবগুলি, অর্থাৎ চোদ্দটিতেই চড়েছেন; যিনি প্রথম একা, অর্থাৎ সঙ্গী ছাড়াই একটি আট হাজারের মিটারের শৃঙ্গ, নাঙ্গা পর্বতে চড়েন; যিনি পায়ে হেঁটে দক্ষিণ মেরু এবং গোবি মরুভূমি পার হয়েছেন – সেই রাইনহোল্ড মেসনার এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন: ‘‘হিলারি আর তেনজিং ৬০ বছর আগে যা করেছেন, তা ছিল আশ্চর্য৷ ইতিমধ্যে এভারেস্ট ট্যুরিস্টদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''
এভারেস্টে চড়া আজ পর্বতারোহণ নয়, ট্যুরিজম, বললেন মেসনার৷
এসি/ডিজি (এএফপি)