গৃহযুদ্ধের দিকে মিশর
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩সিরিয়া ইস্যু যখন কিছুটা থিতিয়ে পড়েছে, তখন আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মিশর৷ মোহাম্মদ মুরসির পতনের পর কেরদাশায় আশ্রয় নেয় ইসলামপন্থিরা৷ এ সপ্তাহের প্রথমে ঐ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় নিরাপত্তাবাহিনী৷ তাই বৃহস্পতিবার ভোরেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে সেখানে অভিযান শুরু করে৷ এ সময় দু'পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন গিজা প্রদেশের সহযোগী নিরাপত্তা পরিচালক জেনারেল নাবিল ফারাগ৷ সেখান থেকে রকেট চালিত গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ১৫ জনকে আটক করে নিরাপত্তাবাহিনী৷ প্রসঙ্গত, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে মুরসি সমর্থকদের সহায়তা এবং ঐ অঞ্চলে সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে৷ গত মাসে ঐ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১১ জন পুলিশ সদস্য৷
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, তালিকাভুক্ত ১৪০ ব্যক্তিকে খুঁজতে কেরদাশায় হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে৷ ঐ এলাকা থেকে সব জঙ্গি এবং অপরাধীদের বের করা না পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনী বিশ্রাম নেবে না৷
অতঙ্কে ভীত সংখ্যালঘুরা
মিশরের দক্ষিণাঞ্চলের আর একটি শহর দালগায় আতঙ্কের সাথে দিন কাটাচ্ছেন খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা৷ ১ লাখ ২০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে ২০ হাজারই খ্রিষ্টান৷ এরই মধ্যে কট্টর ইসলামপন্থিরা প্রায়ই তাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যে নিরাপত্তাবাহিনী আর বেশিদিন তাদের রক্ষা করতে পারবে না৷
মুরসির পতনের পর ইসলামি কট্টরপন্থিরা ঐ এলাকাটিতে জড়ো হতে থাকে৷ সেসময় তারা খ্রিষ্টানদের বাড়িঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়েছে, লুট পাট চালিয়েছে৷ গত আগস্টে মুরসি সমর্থকদের উপর নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের পর তাদের সহিংসতা চরমে রূপ নেয়৷ খ্রিষ্টানদের ৪০টি বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয় তারা৷ দালগার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় হামলা চালানো হয়, চালানো হয় লুটপাট৷ সেসময় ৫০টি পরিবার দালগা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়৷
নিরাপত্তা ব্যর্থ, ভয়াবহ পরিস্থিতি
দালগার স্থানীয় এক খ্রিষ্টান অধিবাসী জানালেন, মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সমতা নেই বলে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল তাদের, মুরসি ক্ষমতায় এলে যা আরো বেড়ে যায়৷ আর ৩রা জুলাই মুরসির পতনের পর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে৷ তাদের ধারণা, নিরাপত্তাবাহিনী তাদের সবসময় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷
গত সোমবার দালগার নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান চালায় নিরাপত্তাবাহিনী৷ ১৩০ জন আটক হয়৷ শহরে প্রবেশ করতে এবং বের হতে প্রতিটি মানুষ ও যানবাহন তল্লাশি করে পুলিশ৷ বাসায় বাসায়ও চলে তল্লাশি৷ তবে স্থানীয় ইসলামপন্থিদের দাবি, জঙ্গি অভিযানের নামে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে৷ এমনকি শহরটিকে হত্যাযজ্ঞের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এক কট্টরপন্থি৷
স্থানীয় গির্জার যাজক ফাদার আব্রাহাম জানান, গত কয়েক দশকে ঐ এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনো লক্ষণ দেখেননি তিনি৷ কিন্তু ২০১২ সালের জুন মাসে মুরসি ক্ষমতা নেয়ার পর চিত্রটা পুরো বদলে যায়৷ বদলে যায় স্থানীয় ইসলামপন্থিদের আচরণ৷ তারা ঔদ্ধত্য আচরণ করতে থাকে, যেন প্রত্যেকেই এক একজন মুরসি৷
ফাদার বলেন, অনেক মুসলিম পরিবার তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলেও তারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না৷ তবে এখনও তার বিশ্বাস বড় বড় পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের সহায়তায় এ সহিংসতা বন্ধ হওয়া সম্ভব৷ এমনকি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এবং স্থানীয় বেশ কিছু গণমাধ্যম যখন তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল, তখন ইসলামপন্থিদের একটি মিছিল তাদের এই বলে ধাওয়া করে যে গণমাধ্যম সব সময়ই তাদের বিপক্ষে৷
গত ৩রা জুলাই মুরসির পতনের পর এ পর্যন্ত দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে মিশরে, যাদের বেশিরভাগই মুরসি সমর্থক৷ নিহত হয়েছে শতাধিক পুলিশ৷
এপিবি/ডিজি (এপি/রয়টার্স/ডিপিএ)