মিশরকে অস্ত্র বিক্রি নয়
২৩ আগস্ট ২০১৩ইইউ-র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিশরের জনগণের উপর দমন নীতি কার্যকর করতে প্রয়োগ করা হতে পারে, এমন অস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানি আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে৷ শুধু সামরিক বাহিনী নয়, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতেও এমন সব মারাত্মক হাতিয়ার তুলে দিতে চায় না ইউরোপীয় দেশগুলি৷ অথচ এতকাল প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মিশর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের লেনদেনের মাত্রা কম ছিল না৷ ২০১১ সালেই মিশরকে প্রায় ৩০ কোটি ৩০ লক্ষ ইউরো মূল্যের অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল ইইউ দেশগুলি৷ একই বছর ফ্রান্স ও স্পেন প্রায় ১০ কোটি ২০ লক্ষ ইউরো মূল্যের বিমান বিক্রি করেছিল মিশরকে৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান এলমার ব্রক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড ও সামরিক বাহিনী – কোনো পক্ষেরই সহায়তা করা উচিত হবে না৷ তাঁর মতে, দুই পক্ষের কেউই সংলাপের জন্য প্রস্তুত নয়৷ তাই ইইউ-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পক্ষে কিছু করার সম্ভাবনা খুবই সীমিত৷ তাছাড়া বর্তমান সংকটে যে মাত্রার আবেগ ও হিংসা দেখা যাচ্ছে, তাতে ইইউ কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের মাধ্যমে কিছুই করতে পারবে না বলে মনে করেন ব্রক৷
‘মিশরের মানুষ চায় ইতিবাচক বার্তা'
এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও এলমার ব্রক মনে করেন, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে ইইউ মিশরের পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে একটি অবদান রেখেছে৷ এর ফলে যদি দুই পক্ষ হিংসা কমিয়ে সংলাপের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে ভালোই হবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা ক্যাথরিন অ্যাশটন ১৭ ও ২৯শে জুলাই মিশর সফর করেছেন৷ দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র উঠে আসে নি৷ বরং হিংসা আরও বেড়ে গেছে৷ জার্মানি সহ কিছু দেশ মিশরের জন্য উন্নয়ন সাহায্য কমানোর কথা ভেবেছিল, কিন্তু তার ফলে সাধারণ মানুষের বেশি ক্ষতি হবে – এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না৷ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে ইইউ প্রকল্পগুলি চালিয়ে গেলেই বরং মিশরের মানুষের কাছে সঠিক বার্তা যাবে বলে মনে করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আরেক সদস্য মিশায়েল গালার৷
ব্রাদারহুড আরও ব়্যাডিকাল হয়ে উঠলে বিপদ
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য মিশায়েল গালার আরও মনে করেন, মুসলিম ব্রাদারহুড-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে৷ তখন তাদের আরও ব়্যাডিকাল হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দেবে৷ তিনি চান, ইইউ মিশরের দুই বিবাদমান পক্ষের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দিক৷ দুই পক্ষকেই জাতীয় স্বার্থে সংলাপের পথ খুঁজতে হবে এবং গণতন্ত্রের পথে ফিরে যেতে হবে৷ ইইউ কোনো পক্ষপাতিত্ব করবে না৷ মিশর যাতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে, সেই কাজে মিশরের জনগণকে সহায়তা করা হবে৷
মিশরের উপর চাপ সৃষ্টি করার আরেকটি হাতিয়ারও আছে৷ সেটি হলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী হিসেবে ইউরোপ মিশরের অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে আসতে পারে৷ উন্নয়ন সাহায্যের ক্ষেত্রেও মিশরের সবচেয়ে বড় সহযোগী ইইউ৷ ফলে মিশরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ইইউ চাপ বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে বৈকি৷