এবছরের প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড পেলেন যারা
১৮ নভেম্বর ২০২১২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে দেখা দেয় এক অজানা রোগ, যা আক্রমণ করছিল শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষমতাকে৷ সেই সময় কেউ ধারণাও করতে পারেননি হয়তো যে সেই রোগ এক বিশ্বব্যাপী অতিমারির আকার ধারণ করবে৷
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাংবাদিক ঝাং ঝান শাংহাই থেকে উহানে পৌঁছান এই নতুন রোগ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যে৷ নিজের কাজের ক্ষেত্রে অসীম সাহস দেখানোর ফলে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংস্থা ২০২১ সালের প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ডের জন্য বেছে নিয়েছে তাকে৷
ঝাং ঝানের কাজ, যা মূলত সোশাল মিডিয়া থেকেই জনপ্রিয় হয়, তুলে ধরে করোনা অতিমারির প্রভাবে হাসপাতালে, শ্মশানে বাড়তে থাকা ভিড়ের চিত্র৷ তিনি বলেন শহরের বাসিন্দাদের উদ্বেগের কথা৷ ফলে, চীনা কর্তৃপক্ষের রোষের মুখেও পড়তে হয় ঝানকে৷
২০২০ সালের ১৪ মে পর্যন্ত একটানা নির্ভীক প্রতিবেদন চালিয়ে চান তিনি৷ কিন্তু ১৪ মে আচমকা নিখোঁজ হয়ে পড়েন ঝাং ঝান৷ একদিন পর জানা যায় যে তাকে গ্রেফতার করে শাংহাইতে নিয়ে আসা হয়েছে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই৷
‘অকারণে বিবাদ ও অশান্তি সৃষ্টির’ দায়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঝাং ঝানকে চার বছরের কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়৷ প্রতিবাদে, এই ৩৮ বছর বয়েসি সাংবাদিক অনশনে বসেন, যা আজও চলছে৷ তার ওজন কমে এখন মাত্র ৪০ কিলোগ্রাম৷ কারাবাসে তাকে পেটের ভেতর নল ঢুকিয়ে জোর করে খাওয়ানো হয়৷ এই নল যাতে তিনি না বের করতে পারেন, সে জন্য তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয় সব সময়৷
এই পুরস্কার দেবার মাধ্যমে ঝাং ঝানের কাজের দিকে আলোকপাত করতে চায় রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷
তথ্য উদ্ধার করে পুরস্কার
কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নাগরিক ও সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি চালায়, তা জানতে অনুসন্ধান চালায় ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ গোষ্ঠী৷ এগারোটি রাষ্ট্রের মোট ৮০ সাংবাদিকের এই দল তার নাম রেখেছে নজরদারি সফটওয়ার ‘পেগাসাস’-এর আদলে৷
উল্লেখ্য, এই গোষ্ঠীর তৎপরতার ফলেই প্রকাশ্যে আসে পেগাসাস সফটওয়ারের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের নানা তথ্য৷
সরকার প্রযুক্তির সাহায্যে আড়ি পাতলে তা গোটা বিশ্বের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বারবার জনতার সামনে তুলে ধরেছে ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট'৷ ‘ইমপ্যাক্ট' বিভাগে তাই এবছরের প্রেস ফ্রিডস অ্যাওয়ার্ড পেলেন এই গোষ্ঠী৷
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের জার্মান বিভাগের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টিয়ান মির বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এইসব প্রযুক্তি৷ এবং এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনের প্রতি হুমকিও বয়ে আনতে পারে৷’’
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সমালোচনা করেন যিনি
ফিলিস্তিনের সাংবাদিক মাজদোলিন হাসোনার সাংবাদিকতার ধরন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন, দুই পক্ষেই সমালোচিত হয়ে থাকে৷
ডয়চে ভেলেকে হাসোনা বলেন, ‘‘ইসরায়েল যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, আমি তার সমালোচনা করি৷ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়ের যেসব অবিচার করছে, আমি তার সমালোচনা করি৷ অন্যদিকে, আমি ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষের ভেতরে থাকা দুর্নীতিরও সমালোচনা করি৷ যেভাবে তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রোধ করে, তার সমালোচনা করি৷ এবং এসব করি বলেই দুই পক্ষই আমার ক্ষতি করতে চেষ্টা করে৷’’
২০১৫ সালে তুর্কি সংবাদসংস্থা টিআরটির সাথে যুক্ত হয়ে ইস্তাম্বুলে পাড়ি দেন হাসোনা৷ তার আগে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমে কাজ করা ছাড়াও ১১ মাস তিনি ডুজ নিউজে কাজ করেন৷ ডুজ নিউজ ডয়চে ভেলে একাডেমি, জার্মান সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন ও নাবলুস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ প্রকল্প৷
২০১৯ সালে নিজের দেশে গেলে তাকে ‘নিরাপত্তাজনিত' কারণে আটক করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ৷ এরপর থেকে পশ্চিম তিরে আটকে থাকলেও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের সাংবাদিকতার কাজ৷
২০২১ সালের জুনমাসে ফিলিস্তিনি সরকারের সমালোচক নিজার বানাতের মৃত্যু হয়৷ তার পরিবারের মতে, কারাবাসে মারধর করার ফলে প্রাণ হারান তিনি৷ এই বিষয়ে প্রতিবেদন করলে হাসোনাকেও মারধর করা হয়৷
‘স্বাধীনতা' বিভাগে এবছরের প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড পেলেন মাজদোলিন হাসোনা৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ডের গুরুত্ব আমার কাছে অনেক৷ এই পুরস্কার যে কোনো সাংবাদিককে দেওয়া হয় না৷ এটা দেওয়া হয় সেই সব সাংবাদিকদের, যারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শিকার৷ যারা অন্য সবার মতো স্বাধীনভাবে কাজ করার, বাঁচার দাবি করেন৷’’
টমাস লাটশান/এসএস