এক আরব-সুন্নি জোটই আইএস-কে পরাস্ত করতে পারবে
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর উপর অ্যামেরিকার নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীর হামলায় অবশ্যই কাজ হয়েছে৷ এই সব জিহাদিদের আরও অঞ্চল জবরদখলের প্রবণতা আপাতত বন্ধ করা গেছে৷ অ্যামেরিকা ও আরব দেশগুলির বিমান হামলা ছাড়া ইরাকি কুর্দি পেশমারগা বাহিনী সিরিয়ার উত্তরের সীমান্তবর্তী শহর কোবানে শহর মুক্ত করতে পারতো না৷ এই সব সাফল্যের ফলে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' অজেয় – এমন ধারণার ভিত্তি নড়ে গেছে বটে, কিন্তু এই সব লাগামহীন সন্ত্রাসবাদীদের পরাস্ত করার কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ কারণ আইএস-এর বিরুদ্ধে পশ্চিমা ও আরব বিশ্বের সংগ্রাম বার বার সমস্যার মুখে পড়ছে৷ প্রায় চার মাস ধরে বিমান হামলা চালানোর পর এই জোটের সামনে আর কোনো কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু অবশিষ্ট নেই, যেখানে এখনো বোমাবর্ষণ করা হয়নি৷ তার উপর আইএস যোদ্ধারা এখন গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয় নেওয়ায় সমস্যা বেড়ে গেছে৷ ফলে আকাশ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে৷
আইএস বিরোধী জোট ভঙ্গুর
এই আন্তর্জাতিক ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং' যখন আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছিল, তখন কোনো রাজনৈতিক ‘কনসেপ্ট' ছিল না৷ এমনকি সামরিক অভিযানের কৌশলগত লক্ষ্য যে কী, তাও স্থির হয়নি৷ এখন তার কুফল দেখা যাচ্ছে৷ অথচ আইএস-এর সন্ত্রাস যে শুধু সামরিক অভিযানের মাধ্যমে পরাস্ত করা সম্ভব নয়, এমনটা আগেই জানা ছিল৷
আসলে শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং' ছিল রাজনৈতিক গোঁজামিলে ভরা৷ কারণ তাতে সৌদি আরব সহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের এমন সব দেশ তাতে যোগ দিয়েছে, যাদের নিজেদের ভাবমূর্তি মোটেই স্বচ্ছ নয়৷ কারণ তারাই মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদি ভাবধারার মাথাচাড়া দেবার পথ প্রশস্ত করেছে এবং আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে সিরিয়ায় ব়্যাডিকাল শক্তিকে মদত দিয়েছে৷ এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে, যে ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং'-এ গুরুত্বপূর্ণ সুন্নি আঞ্চলিক শক্তিগুলির যথেষ্ট অংশগ্রহণ ছিল না৷ কারণ সিরিয়া বা ইরাকের সুন্নিপ্রধান এলাকায় আইএস-এর বিরুদ্ধে স্থলবাহিনীর কার্যকর অভিযান চালানোর জন্য এই মুহূর্তে জোটসঙ্গী পাওয়া যাচ্ছে না৷
পশ্চিমা বিশ্বের এতকালের জোটসঙ্গীরা ‘ভুল' ছিল – এমন একটা ধারণাই দানা বাঁধছে৷ কুর্দিদের স্বার্থ নিজস্ব এলাকার মধ্যেই সীমিত৷ তারা যে সব এলাকা দখল করছে, সেখান থেকে আরবদের তাড়িয়ে দিয়ে সেটিকেও কুর্দিস্তানের অংশ হিসেবে ঘোষণা করছে৷ বল্গাহীন শিয়া মিলিশিয়া ও খুনে বাহিনীও আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের আদর্শ জোটসঙ্গী হতে পারে না৷
উত্তর আফ্রিকার নিরাপত্তাও হুমকির মুখে
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে আইএস জিহাদিরা লিবিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার এবং মিশরের জিহাদিদের সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা করছে বলে তারা মিশর ও টিউনিশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে৷ তাই আইএস জিহাদিরা ২১ জন কপ্টিক খ্রিষ্টানের শিরশ্ছেদ করার পর মিশরের প্রেসিডেন্ট আল সিসি যখন জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিক সামরিক হস্তক্ষেপ দাবি করেন, তখন সেটা বিস্ময়কর হতে পারে না৷
ঠিক এই বিষয়টিকে সম্বল করেই পশ্চিমা বিশ্বের উচিত সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মিশর, তুরস্ক ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি জোট গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো৷ নরমপন্থি ইসলামি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ শিবিরকেই তাতে শামিল করা উচিত৷ ইরান বা আন্তর্জাতিক স্তরে মর্যাদাহীন আসাদ প্রশাসন তার মধ্যে থাকলে চলবে না৷ কারণ এমন জোটে ইরান থাকলে প্রায় সব জিহাদিদের চরম শিয়া-বিরোধিতার রোষ সামাল দিতে হবে৷ ফলে হিতে বিপরীত হবে৷ কারণ শুধু সুন্নি মুসলিমরাই আইএস-কে পরাস্ত করার ও জিহাদিবাদের আদর্শগত ভিত্তি নষ্ট করতে পারে৷ তবে তার আগে পশ্চিমা বিশ্বকে নিশ্চিত করতে হবে, যে ইরাকের ক্ষমতাকেন্দ্রে সুন্নিদের শামিল করতে হবে৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে পশ্চিমা বিশ্ব এর থেকে ভালো সহযোগী আর পাবে না৷