সংকটে আম আদমি পার্টি
১৮ ডিসেম্বর ২০১৩কেন্দ্রশাসিত দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনি ফলাফল প্রকাশের দশ দিন পরেও সরকার গঠনের সম্ভাবনা অনিশ্চিত৷ কারণ প্রধান তিনটি দল বিজেপি, আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস কেউই সরকার গড়ার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি৷ ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় কোনো দলই সরকার গঠনের মতো অবস্থায় না থাকায় দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজিব জং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো তাঁর রিপোর্টে বিধানসভা জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেছেন৷ দিল্লি বিধানসভার মেয়াদ শেষ হয় ১৭ ডিসেম্বর৷ তবুও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবিষয়ে তাড়াহুড়ো করার পক্ষপাতি নন৷ আম আদমি পার্টি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়বে কিনা তা দেখার পরই রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রশ্ন আসবে৷ যদিও ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সরকারি তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে৷
দিল্লি বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৩১টি আসন, আম আদমি পার্টি ২৮টি এবং কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৮টি আসন৷ এর প্রেক্ষিতে বিজেপি প্রথমেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছে তারা বিরোধী আসনে বসার পক্ষপাতি৷ দ্বিতীয় বৃহত্তম দল আম আদমি পার্টি পড়েছে এখন উভয় সংকটে৷ বিশেষ করে কংগ্রেস যখন নিজে থেকেই আম আদমি পার্টিকে বাইরে থেকে সমর্থন করতে চেয়েছে৷ আর কংগ্রেসের সমর্থন আম আদমি পার্টিকে ঠেলে দিয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে৷ কংগ্রেসের যুক্তি, ভোটারদের ঘাড়ে নতুন নির্বাচনের বোঝা চাপাতে চায় না তারা৷ এতে জনগণের অর্থের অপচয় হবে৷ প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন করাতে হবে এবং সরকার গঠন করতে হবে৷
কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা উচিত হবে কিনা সেটা নিয়ে কেজরিওয়াল পড়েছে দোটানায়৷ কারণ প্রাক-নির্বাচনি প্রচারে কংগ্রেস বা বিজেপি থেকে দূরে থাকার কথা জোর গলায় বলেছিলেন কেজরিওয়াল৷ এখন কংগ্রেসের হাত ধরলে সেটা হবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল৷ অথচ আন্না হাজারের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন থেকে জন্ম নেয়া এবং প্রথমবার নির্বাচনে নেমে এক বছরের এক নবীন পার্টির কাছে সরকার গঠনের সুযোগও হাতছাড়া হতে দিতে চাইছে না কেজরিওয়াল৷ সেক্ষেত্রে তিনি বিজেপি ও কংগ্রেসের কাছে পার্টির ১৮ দফা শর্ত মেনে নেবে বলে মুচলেকা দেবার দাবি তুলে চিঠি পাঠান৷ বিজেপি তা খারিজ করে দিলেও কংগ্রেস তাতে রাজি হয়৷ কারণ কংগ্রেসের মতে, ১৮ দফা শর্তের মধ্যে ১৬টি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তেই কার্যকর করা যায়, তারজন্য বিধানসভার অনুমোদন দরকার হয় না৷ অন্য দুটি যেমন, দুর্নীতি-বিরোধী লোকপাল বিল এবং দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যে উন্নীত করার বিষয়টি সংসদের বিবেচ্য৷
এমতাবস্থায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কেজরিওয়াল তাঁর দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ নির্বাচনি ক্ষেত্রের মানুষদের এবিষয়ে কী মত তা জানার কথা বলেন এবং তার ভিত্তিতে নেয়া হবে সরকার গড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনীতি হলো অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার এক আর্ট৷ কেজরিওয়াল কীভাবে সেটা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়৷