উপজেলায় শিওর শট নিয়ে যত ঝামেলা
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯এবারের উপজেলা নির্বাচন হবে পাঁচ ধাপে৷ এরই মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১২৯ উপজেলায় নির্বাচন হবে ১৮ মার্চ৷ পরের তিন ধাপের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা না হলেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সর্বশেষ পঞ্চম ধাপের নির্বাচন হবে ১৮ জুন৷ পাঁচ ধাপে মোট ৪৮৭টি উপজেলার নির্বাচন হবে৷
এবারের উপজেলা নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে৷ কিন্তু নির্বাচনে শুধু বিএনপি'র প্রাধান্যে জাতীয় ঐক্যফন্টই নয়, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, চরমোনাই পীরের দলসহ আরো অনেক দল যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা অংশ নিচ্ছেনা৷ ফলে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিজয় নিশ্চিত এমন ধারণা তৈরি হয়েছে৷ যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা সে কারণে আওয়ামী লীগের একটি মহলের দাবি ছিল নির্বাচন দলীয় মনোনয়নমুক্ত করে দেয়া হোক৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না হলেও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন দলীয় মনোনয়নমুক্ত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ৷
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের, ‘‘নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উন্মুক্তভাবে অংশ নিতে পারবেন প্রার্থীরা৷ বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, নির্বাচনটা একটু জমজমাট হোক৷''
তবে তিনি এও বলেন, ‘‘বিএনপির অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবেন, এ খবর আমরা পেয়েছি৷''
শনিবার প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদে ৮৭ প্রার্থীর তালিকাও প্রকাশ করা হয়৷
৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করেছেন বা চেষ্টা করেছেন তাদের এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিচ্ছেনা আওয়ামী লীগ৷ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় তাদের এই শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন নিয়ে এরইমধ্যে অনেক অভিযোগ উঠেছে৷ আর এ কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থীও মনোনয়ন পাচ্ছেন না৷ আর মনোনয়ন বঞ্চিতরা উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন৷ আওয়ামী লীগ মনোনীতদের জন্য ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার এই সুযোগ অনেকেই নিতে চাচ্ছেন৷ ৮৭ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷
তবে সবচেয়ে বড় অভিযোগ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে৷ তার উপজেলায় তাদের অধিপত্য বজায় রাখতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে যাতে মনোনয়ন দেয়া হয় তার জন্য সবচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও তারা প্রভাবিত করছেন৷ আগে সিদ্ধান্ত ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন৷ কেন্দ্র তা থেকে একজনকে মনোনয়ন দেবেন৷ অনেক উপজেলায় এমপিরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে তাই উপজেলা আওয়ামী লীগকে একক প্রার্থীর নাম পাঠাতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ আছে৷ আর সে কারণেই কেন্দ্র এখন ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সুপারিশের বাইরে থেকেও মনোনয়ন দিচ্ছে৷
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মনিরুজ্জামান মনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এমপি'র লোক যদি ইয়াবা ব্যবসায়ীও হয় তাতে দোষ নেই৷ তাকেই মনোনয়ন দেয়ার জন্য সব চেষ্টা করছেন তারা৷ তারা তাদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে, রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে উপজেলা চেয়ারম্যান যাতে তার লোক হয় সেটাই চাইছেন৷ আর সে কারণে সদ্য বা কয়েক বছর আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াদের জন্যও মনোনয়নের তদবির হচ্ছে৷''
তবে তিনি এও বলেন যে, ‘‘প্রথম দফায় মনোনয়ন পাওয়া ৮৭ জনের মধ্যে মাত্র ১৬ জন এখন উপজেলা চেয়ারম্যান৷ অনেক উপজেলা চেয়ারম্যানই এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না৷ মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আমলনামা দেখে মনোনয়ন দিচ্ছেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটাই দেখার বিষয়৷''
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে নানা অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘‘সেটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার৷ সব বিবেচনা করেই মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে৷ সার্বিক শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আওয়ামী লীগের জন্য শিওর শট হয়ে দাড়িয়েছে৷ মনোনয়ন পেলেই যেন পাশ৷ তাই অনেকেই প্রার্থী হতে চাইছেন৷ আবার মনোনয়ন না পেলেও ছেড়ে দিতে চাইছেন না৷ ফলে স্থানীয় পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল প্রকট হচ্ছে, এবং আরো হবে৷ এবার এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলই হতে পারে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই সুযোগে মনোনয়ন বাণিজ্য যে হবে না তা নয়৷ তবে তার চেয়ে কার কত যোগাযোগ বা কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তার ওপর নির্ভর করে মনোনয়ন হবে৷ জনপ্রিয়তা খুব বেশি গুরুত্ব পাবে বলে মনে হয় না৷''