শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য, ওবায়দুল, হানিফের মৃদু হুঙ্কার
২৪ এপ্রিল ২০২৪এখনো কমপক্ষে ১১ জন প্রার্থী আছেন যারা মন্ত্রী বা এমপির ছেলে বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয়।
সেরকমই একজন হলেন নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একরামুল কবির চৌধুরীর ছেলে ইশরাক শাবাব চৌধুরী। তিনি সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও তিনি প্রার্থীতা প্রতাহার করেননি। তার সঙ্গে ফোনে কথা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, "আমি নির্বাচনি প্রচারে আছি। এখন কথা বলার সময় নেই।” তবে তার বাবা সংসদ সদস্য একরামুল কবির চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমার ছেলে প্রার্থী আছে, থাকবে। আর এই কারণে আমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে নেবে। অর্ধেক ভোট করার পর (নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা) বললে তো হবে না।”
তার কথা, " উনি (ওবায়দুল কাদের) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি কোনো পোস্টে নাই। আমি এমপি। আর এমপি তো সহজে কেড়ে নিতে পারবে না। এটা নিতে হলে অনেক প্রক্রিয়া আছে। এরপর হয়ত আমাকে কালো তালিকাভুক্ত করবে। আমাকে আর এমপি পদে মনোনয়ন দেবে না। তখন তো আর আমার ভোট করার সময় থাকবে না।”
সেখানে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট দুইজন প্রার্থী। আরেকজন প্রার্থী হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগর সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী৷ তিনি বলেন, "এমপি একরাম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও তার ছেলের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করিয়ে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। কালো টাকার ক্ষমতায় সে কাউকে এখন আর পরোয়া করে না। সে যা খুশি তাই করে। তার ছেলের অনুসারীরা এখন সন্ত্রাস করছে। সে দুইটি হত্যা মামলার আসামি। পুলিশ প্রশাসন তার পক্ষে কাজ করছে। সে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে।”
"দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ব্যবস্থা নেয়া হবে। কখন নেয়া হবে? নির্বাচনের পরে ব্যবস্থা নিয়ে কী হবে!,” বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় এমপি সাহাদারা মান্নানের ভাই ও ছেলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। সারিয়াকান্দিতে প্রার্থী হয়েছেন এমপির ছেলে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাখাওয়াত হোসেন সজল। সোনাতলায় প্রার্থী হয়েছেন এমপির ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বর্তমান চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন।
মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, "আমি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। আমার জনপ্রিয়তা আছে বলে আমি নির্বাচন করছি। আমার বোনের কোনো সহায়তা আমি নিচ্ছি না।” তার কথা, "আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও আমি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো নির্দেশ পাইনি।”
এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী মো. জাকির হোসেন বলেন, "সে (লিটন) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে নেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করেছে। সে বলছে, নেত্রী তো সোনাতলায় ভোট করবে না, আমি করবো। আমার বিষয় আমি বুঝবো। সে নেত্রীর আদেশ অমান্য করে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। তাকে আর আওয়ামী লীগে রাখা উচিত না।” তিনি অভিযোগ করেন, "তার লোকজন এখন আমার কর্মী,সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি শাহাব উদ্দিনের ভাগ্নে শুয়েব আহমদ প্রার্থীতা বহাল রেখেছেন। তিনি বড়লেখা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
নরসিংদীর পলাশের এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের শ্যালক শরিফুল হক প্রার্থী আছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলায় এমপি শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান নির্বাচন করেছে। শাহজাহান খানের সঙ্গে এ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের রীতিমতো বাহাস হয়েছে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগরের ভাই আলী মুনছুর বাবু দামুড়হুদায় প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। আতাউর রহমান ওই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। আতাউর রহমান দাবি করেন, "যারা বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন, তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করতে বলা হয়েছে।” তবে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন," আসলে বিষয়টি সেরকম নয়। ওই উপজেলায় আর একজন মাত্র প্রার্থী আছে৷ তিনি বিএনপির। তাই জেলা আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে প্রার্থী হিসেবে রেখে দিয়েছে। তা না হলে ওই উপজেলা তো বিএনপির হাতে চলে যাবে।”
রাজশাহীর তানোরে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি ফারুক চৌধুরীর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
পাবনার বেড়ায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল বাতেন ও ভাতিজা আবুল কালাম সবুজ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, "অধিকাংশই প্রত্যাহার করেছে। অল্প কয়েকজন এখনো আছেন। এটা তাদের ঔদ্ধত্য নয়, তারা হয়তো মনে করছেন নির্বাচনে জিতলে নেত্রী মাফ করে দেবেন। আর ৩০ এপ্রিল ওয়াকিং কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে কথা হতে পারে।”
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, "যেসব জায়গায় এখনো মন্ত্রী বা এমপিদের আত্মীয়-স্বজন প্রার্থী আছেন, তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তদন্ত করবেন। তারা দেখবে তাদের প্রার্থী থাকার যৌক্তিক কোনো কারণ আছে কিনা। তারা কেন্দ্রে রিপোর্ট দেয়ার পর সেইভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ, কয়েক জায়গায় আমরা দেখেছি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে অপর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যায়। তিনি আবার বিএনপির প্রার্থী।” "আর প্রত্যাহারের নির্দেশটি দেয়া হয়েছে মনোনয়নপত্র দাখিলের অনেক পরে। ফলে সমস্যা হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।
এদিকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের মধ্যে যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, তাদের বিষয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
তিনি বলেন, "যারা প্রত্যাহার করেননি তাদের নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত সরে আসার সুযোগ আছে।”