1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তর মেরু সাগরে বরফের রহস্য

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

উত্তর মেরু অঞ্চলে বরফ চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেলেও সমুদ্রের গভীরে বরফের ভারসাম্য মোটামুটি অটুট রয়েছে৷ বিস্তারিত গবেষণায় এই এলাকার প্রকৃতি সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/3j8uM
ছবি: AWI/Stefan Hendricks

অভিযানের মাঝেই ক্রিস্টিয়ান হাস বিপুল পরিমাণ সংগৃহিত তথ্য নিয়ে মূল ভূখণ্ডে ফিরে এসেছেন৷ সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি৷ উত্তর মেরু অঞ্চলে বরফের পরিবর্তনের রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে তিনি এরই মধ্যে কিছু প্রাথমিক উত্তর পেয়েছেন৷ হাস বলেন, ‘‘সেই অঞ্চলে পৌঁছনোর পর বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করলাম, যে অক্টোবর মাসে বরফ মাত্র ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পুরু ছিল৷ শীতকালে, অর্থাৎ, এর পরের পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সেই স্তর বেড়ে প্রায় ২ মিটার ছুঁয়েছে৷ মোটকথা বরফের চাদর প্রায় চার গুণ বড় হয়েছে৷ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ৷’’

উত্তর মেরুর বরফ নিয়ে গবেষণা

এতদিন জানা ছিল, যে শুধু বরফের উপরিভাগ ছোট হচ্ছে৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, যে গত ৪০ বছরে বরফের অংশ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে৷ তবে স্যাটেলাইট বরফের গভীরতা মাপতে পারে না৷ নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘আমরা এখন যা দেখলাম, তা হলো গ্রীষ্মের শেষে মরসুমের শুরুতে বরফ বেশ পাতলা ছিল৷ ৩০ বছর আগে নব্বইয়ের দশকে সাইবেরিয়ার মেরু অঞ্চলে পরিমাপ করে পাওয়া তথ্যের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা হয়ে গেছে৷ তবে বরফ এত বেড়ে গেছে দেখে আমরা বেশ অবাক হয়েছি৷ অর্থাৎ, শীতের শেষে বরফের চাদরে তেমন কোনো পরিবর্তন হয় নি বলা চলে৷ গ্রীষ্মে শুধু বরফের উপরিভাগে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন চোখে পড়ে না, বরফের গভীরতার ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যায়৷ শীতকালে বরফ সেই ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামলে নেয়৷’’

গ্রীষ্মের শেষে বরফ এত পাতলা হয়ে যাবার কারণে শীতে যে আবার পুরু হতে সাহায্য করে, সেটা বেশ অদ্ভুত বিষয়৷ হাস মনে করেন, ‘‘অপেক্ষাকৃত পাতলা বরফ মহাসাগরকে আরও দ্রুত ও আরও সহজভাবে উত্তাপ হারাতে বাধ্য করে৷ এর ফলে আবার আরও বরফ সৃষ্টি হয়৷ শীতের শেষে বরফের পুরুত্ব তিরিশ বছর আগের মতোই হয়ে যায়৷’’

এমন প্রবণতা সত্ত্বেও গ্রীষ্মে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে৷ সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ২০৫০ সালে উত্তর মেরু অঞ্চলে সম্ভবত কোনো বরফই দেখা যাবে না৷ 

ভাসমান বরফের নীচে কী ঘটছে?

জার্মানির ব্রেমারহাফেন শহরে আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের বরফ ল্যাবে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার স্থিতিশীল শীতল পরিবেশ রাখা হয়৷ এরই মধ্যে সেখানে উত্তর মেরু অভিযানে সংগৃহিত বরফের কিছু নমুনা আনা হয়েছে৷ পোলারাইজড লাইটের নীচে বরফের স্ফটিক চমচক করছে৷ সমুদ্রবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘একমাত্র এমন পাতলা স্তর প্রস্তুত করলেই বরফের বিবর্তনের প্রক্রিয়া চোখে দেখা যায়৷ শান্ত পরিবেশে ধীরে ধীরে উপর থেকে নীচে বরফ সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা জানা যায়৷ সে ক্ষেত্রে এমন লম্বা থামের মতো ক্রিস্টাল সৃষ্টি হয়৷ বর্তমানে শক্তিশালী ঢেউ ও পানির আলোড়নের কারণেও বরফ সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে ছোট, গোল ক্রিস্টাল তৈরি হয়৷’’

ভবিষ্যতে উত্তর মেরু সাগর আরও উত্তাল হয়ে উঠবে বলে ক্রিস্টিয়ান হাস মনে করেন৷ তখন আর লম্বা থামের মতো বরফের স্ফটিক তৈরির উপায় থাকবে না৷ কারণ পরিবর্তনশীল বরফের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর মেরু সাগরের অবস্থাও বদলে যাচ্ছে৷

সে ক্ষেত্রে দানাদার বরফ আরও বেশি দেখা যাবে৷ সে কারণেও উত্তর মেরু অঞ্চলকে আরও ভালো করে বোঝা প্রয়োজন৷ হাস বলেন, ‘‘ছোট ক্রিস্টাল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে বড় কোনো কাঠামো আসলে ছোট ছোট উপাদান দিয়ে তৈরি৷ পৃথিবী, মহাকাশ ও ছোট অণু থেকে সেগুলির উৎপত্তি৷ সে সবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷’’

বিশাল পরিমাণ বরফ থেকে ছোট ও চকমকে এক জগত পৃথিবীর উত্তরতম প্রান্তে বিকশিত হচ্ছে৷

লেয়া আলব্রেশট/এসবি

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...