পানির নীচে নতুন বরফ আবিষ্কার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০উত্তর মেরু অঞ্চলের শীতকাল মানেই মাসের পর মাস ধরে একটানা অন্ধকার অবস্থা৷ সূর্যের মুখ দেখার উপায় নেই৷ তার উপর উত্তর মেরুকে ঘিরে শীতকাল সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান এখনো খুবই সীমিত৷ অথচ পৃথিবীর জলবায়ুর উপর এই অঞ্চলের গভীর প্রভাব রয়েছে৷
কয়েক দশক ধরে সেখানে বরফের পরিমাণ কমে চলেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া সেখানে আর কী ঘটছে, সে বিষয়ে এখনো খুব কম জানা গেছে৷ সমুদ্রবিজ্ঞানী হিসেবে ক্রিস্টিয়ান হাস জানতে চান, সমুদ্রের বরফ কীভাবে বদলাচ্ছে? পানির উপর বরফ কীভাবে বাড়ছে ও গলছে?
আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ান হাস-এর কাছে উত্তর মেরু অঞ্চলের শীতকাল গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘শীতকালে বরফ জমে এবং গ্রীষ্মকালেও তা টিকে থাকে৷ গ্রীষ্মকাল এবং সেইসঙ্গে গোটা জলবায়ু প্রণালীর উপর বরফের যথেষ্ট প্রভাব থাকে৷’’
শীতকালে মেরু অঞ্চলের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করতে হলে সেই বৈরি শীতল পরিবেশে থাকতে হবে৷ এক আন্তর্জাতিক গবেষকদল সেটাই করেছে৷ অক্টোবর মাস থেকে ‘পোলার স্টার’ নামের জাহাজ উত্তর মেরু সাগরে বরফের মধ্যে ভেসে বেড়িয়েছে৷
মাসের পর মাস ধরে শীতের অন্ধকারে জাহাজটি বিচরণ করেছে৷ উত্তর মেরু অঞ্চলে এত বড় অভিযান এর আগে কখনো চালানো হয়নি৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘বাতাসে মাইনাস ৩০ থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম তাপমাত্রার অনুভূতি থাকলে কাজ করা খুব কঠিন ও বিপজ্জনক৷ কারণ তখন গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হয়৷’’
ক্রিস্টিয়ান হাস ও তাঁর সহকর্মীরা শীতের মাসগুলিতে মেরু অঞ্চলের বরফ নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ কেন সেই বরফ সঙ্কুচিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তাঁরা৷ তাঁরা বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে নমুনা নিয়েছেন, তাপমাত্রা ও বরফের গতিবিধি পরিমাপ করেছেন৷ বরফ কেটে পাতলা চাকতি তৈরি করেছেন৷
নতুন আবিষ্কার নয়, নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল এই অভিযানের উদ্দেশ্য৷ বরফের নিখুঁত জীবনী রচনা করেছেন তাঁরা৷ কিন্তু এ সবের মধ্যে নতুন আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে৷ ডুবুরি রোবট সেই সাফল্যের দাবিদার৷ বরফের নীচে সমুদ্রের পানির উপর রোবট পাতলা বরফের স্তর দিয়ে তৈরি চকমকে মেঘ খুঁজে পেয়েছে৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘এই প্লেটলেট আইস মানুষের হাতের মতো বড় পাতলা বরফের স্তর, যেগুলি নানাভাবে ভাসমান বরফের নীচে লেগে থাকে৷ সাবমেরিন যখন অনেক সময় ধরে অন্ধকারে হেডলাইট জ্বালিয়ে দূর থেকে আলো ফেলে, তখন সেই বরফ চকমক করতে থাকে৷ কাছে গেলে বোঝা যায়, সেগুলি আসলে বরফের ক্রিস্টাল বা স্ফটিক৷’’
দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে আগেই পানির নীচে এমন চকমকে বরফের স্তর দেখা গিয়েছিল৷ উত্তর মেরু অঞ্চলে গবেষকরা প্রথমবার প্লেটলেট আইসের খোঁজ পেলেন৷ ভসমান বরফের নীচে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম, অর্থাৎ হিমাঙ্কের নীচে হলেই এমন বরফ সৃষ্টি হতে পারে৷ কন্ডেনসেশন পয়েন্ট পেলেই পানি সঙ্গে সঙ্গে জমে গিয়ে প্লেটলেট আইস হয়ে ওঠে৷
গবেষকরা যে দড়ি ও পরিমাপের যন্ত্র পানিতে ডুবিয়েছেন, সেগুলির গায়েও প্লেটলেট আইস সৃষ্টি হয়েছে৷ প্লেটলেটগুলির মাঝে অনেক ফাঁকা অংশ রয়েছে৷ অর্থাৎ গোটা স্তর ছিদ্রে ভরা থাকে৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘সে কারণে শুধু ক্ষুদ্র জীব ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ নয়, সেখানে জু প্ল্যাংকটন অর্থাৎ ক্রিলের মতো ক্ষুদ্র চিংড়ি জাতীয় প্রাণীও দেখা যায়৷ এমন অ্যাম্ফিপড জাতীয় প্রাণী অ্যালজির খোঁজে প্লেটলেট আইসের মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছে, এমনটাও আমরা লক্ষ্য করেছি৷ সেই আবরণ এমন প্রাণীগুলিকে পোলার কড মাছের মতো বড় প্রাণীর হামলা থেকেও রক্ষা করে৷’’
মেরু অঞ্চলের এমন ‘নতুন আবিষ্কার’ সম্পর্কে আরও ভালো করে গবেষণা চালাতে হবে৷
লেয়া আলব্রেশট/এসবি
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...