ঈদে আনন্দের মধ্যেও আছে কষ্ট
২৬ জুন ২০১৭সোমবার রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রধান জামাত৷ মোনাজাত করা হয় দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায়৷ ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশের উন্নয়নে যারা ভূমিকা রাখছেন তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়৷ নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলির মধ্যদিয়ে ভাব বিনিময় করেন৷
তবে পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধ্বসে বাড়ি-ঘর হারা মানুষরা ঈদ করেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে৷ রাঙ্গামাটির সাংবাদিক সত্রং চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আশ্রয়কেন্দ্রে তাঁদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন৷ ভালো-মন্দ খাবার দেয়া হয়েছে তাঁদের সবাইকে৷ কষ্টের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন তারা৷''
রাঙ্গামাটিতে সেনানিবাসের ঈদ জামাতে অংশ নেন পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনেকে৷ নামাজ শেষে পাহাড় ধসে নিহতদের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়৷ গোসল করে মিষ্টিমুখ না করেই নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন সুমন৷ ফিরে এসে পেয়েছেন সেনাবাহিনীর দেয়া সেমাই৷ নামাজ থেকে ফিরে দুই ছেলেকে নিয়ে সেমাইম খেয়ে তিনি বলেন, ‘‘এবার এ রকম ঈদ করতে হবে কে ভাবতে পেরেছিল৷ রান্না করতে পারেনি আমার স্ত্রী৷ মিষ্টি না খেয়ে ঈদের নামাজ পড়লাম এই প্রথম৷ কিছুই করার নেই৷ দুই ছেলেকে নানীর বাড়ি থেকে টুপি-পাঞ্জাবি দিয়েছে৷ ওদের খাইয়ে দিয়ে নিচে গিয়ে মোবাইলে ছবি তুলবো একটু পরে৷''
চট্টগ্রামে রিকশা চালান ইউসুফ৷ পাহাড় ধসের খবর পেয়ে এসে দেখেন কিচ্ছু নেই৷ এখন পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজেছেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে৷ ঈদের জামাতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পারেননি, কারণ, সরবরাহ করা সেমাই, নাস্তা জোগাড়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাঁকে৷ ধসে পড়া এক পাহাড়ের পাশের এই মসজিদেও হয় ঈদের জামাত৷ তিনি আরও জানান, এই আশ্রয়কেন্দ্রের কয়েকজন কাছের মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলন৷ তবে এই সহায়-সম্বল স্বজনহারা মানুষগুলোর দুর্দশা ভোলেনি রাঙামাটির সর্বসাধারণ৷ শহরের সব মসজিদেই নিহতদের আত্মার শান্তি, গুনাহ মাফ এবং দুঃস্থদের কল্যাণ কামনায় হয়েছে বিশেষ মোনাজাত৷
আগের দিন রবিবার সকালে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাহাড় ধসে দুর্গতদের মাঝে ঈদের নতুন কাপড় বিতরণ করা হয়েছে৷ রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত পরিবারের সব সদস্যের মাঝে নতুন কাপড় বিতরণ করা হয়৷ রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনী তাদের পরিচালনাধীন ৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে পাহাড়ধ্বস হওয়ার পর আশ্রিতদের মাঝে নতুন পোশাক বিতরণ করে৷
চট্টগ্রামের সাংবাদিক গাজী ফিরোজ শিবলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চট্টগামের যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেছে৷ তবে তাঁদের বাড়িঘর এখনও মাটির নিচে৷ কষ্ট নিয়েই আশ্রয়কেন্দ্রে তাঁরা ঈদ উৎযাপন করেছে৷ তবে রাঙ্গামাটিতে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান৷ সেখানকার মানুষ সবকিছু মিলিয়ে কষ্টে আছে৷''
এদিকে দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ঈদ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন৷ শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ গঠনে ঈদুল ফিতরের আবেদন চিরন্তন৷'' সোমবার ঈদের সকালে বঙ্গভবনে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি৷
দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সোমবার গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আল্লাহর রহমতে প্রত্যেকটি ঈদের জামাত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ দেশের মানুষ আজকে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন৷ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে৷ আশা করি, মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে৷ বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল৷''
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘‘এবার থামেন, ১০ বছর তো অনেক দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন, গুম করেছেন৷ দেশ বাঁচাতে এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন৷'' রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এক শ্রেণির বিত্তশালীরা বিদেশে গিয়ে মার্কেট করছে৷ আরেক শ্রেণি দুর্যোগের মধ্যে পড়ে আছে৷ হাওরে এই ঈদের সময় দুর্ভিক্ষ চলছে৷ তাঁরা একবেলাও খেতে পারছে না৷ বিশেষ করে হাওড়ের আগাম বন্যায় সেখানে বিপর্যয় নেমে এসেছে৷''
আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷