ইসরায়েল-হিজবুল্লা সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি চূড়ান্ত
২৭ নভেম্বর ২০২৪দীর্ঘ আলোচনার পর ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যামেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর অর্থ, দ্রুত এই চুক্তি কার্যকরী হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে এই চুক্তিপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০০৬ সালে এই প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই ইসরায়েল এবং হিজবুল্লার ৩৬ দিনের লড়াই বন্ধ হয়েছিল।
কী আছে চুক্তিতে
চুক্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ইসরায়েল ধীরে ধীরে লেবানন থেকে তাদের সৈন্য ফিরিয়ে নেবে। অন্যদিকে হিজবুল্লার যোদ্ধাদেরও লিটানি নদীর উত্তরে সরে যেতে হবে। অর্থাৎ, ইসরায়েলের সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে তাদের চলে যেতে হবে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে লেবাননের সেনা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যাবে এবং খেয়াল রাখবে যাতে হিজবুল্লা সেখানে নতুন করে তাদের সামরিক কাঠামো তৈরি করতে না পারে।
দক্ষিণ লেবাননে দেশের সেনা ১০ হাজার সৈন্য় মোতায়েন করবে। এই অঞ্চলটি হিজবুল্লার শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লা বউ হাবিব একথা জানিয়েছেন।
একটি ত্রিপাক্ষিক মঞ্চ তৈরি করা হবে। যেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী, ইসরায়েলের সেনা এবং লেবাননের সেনা থাকবে। অ্যামেরিকা এবং ফ্রান্স এই মঞ্চে মধ্যস্থতা করবে। অ্যামেরিকার নেতৃত্বে এই মঞ্চ গঠিত হবে।
একই সঙ্গে জো বাইডেন জানিয়েছেন, দুই দেশের মানুষ নিজেদের সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীতে ফিরে যেতে পারবেন। লড়াই চলাকালীন যারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবারও আক্রমণ অব্যাহত
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা যখন এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখনো লেবাননে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে গেছে ইসরায়েলের সেনা। এই প্রথম মধ্য বৈরুতেও আক্রমণ চালানো হয়। আক্রমণের আগে বেসামরিক মানুষদের বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়। দক্ষিণ বৈরুত এবং শহরতলিতেও আক্রমণ হয়েছে। দক্ষিণ শহরতলির বেসামরিক মানুষকেও নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার ভোর চারটে থেকে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি কার্যকর হবে। তার আগে শেষবারের মতো বৈরুতজুড়ে আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল।
সংঘর্ষ-বিরতি স্বাগত
লেবাননের কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাটি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার কথায়, ''এই চুক্তি শান্তি ফিরিয়ে আনবে। মানুষ আবার নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন।'' প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, লেবাননের সরকার জাতিসংঘের সমস্ত নিয়ম যাতে পালিত হয়, সে দিকে খেয়াল রাখবে। শুধু তা-ই নয়, দেশের সেনা বাহিনী যাতে তাদের দায়িত্ব পালন করে, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। লেবাননের পার্লামেন্টে হিজবুল্লার রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা আছেন। বুধবার তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
মাক্রোঁর বক্তব্য
এই চুক্তি রূপায়নের পিছনে ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকার হাত আছে। তারাই মধ্যস্থতা করেছে। ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা চুক্তি চূড়ান্ত করার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার আশা, এই চুক্তি গাজাতেও সংঘর্ষ-বিরতির রাস্তা খুলে দেবে। গাজার লড়াই বন্ধের জন্যও মধ্যস্থতা করছে ফ্রান্স।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)