জুলিয়ান আসাঞ্জ
২১ জুন ২০১২জুলিয়ান আসাঞ্জ৷ উইকিলিক্স'এর প্রতিষ্ঠাতা এই ব্যক্তি একাই গোটা দুনিয়ার সামনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুলে দিয়েছিলেন একাধিক আন্তর্জাতিক গোপন নথি৷ যার থেকে এই আধুনিক দুনিয়ার কারুরই বুঝতে অসুবিধে হয়নি, কূটনৈতিকতার নেপথ্যে কী ধরণের অনাচার চলে৷ বিশেষ করে মার্কিন বিদেশ নীতির ধান্ধাবাজ মুখোশটি স্পষ্ট করে খুলে দেওয়ায় আসাঞ্জ'এর ওপর ওয়াশিংটনের তীব্র ক্ষোভ গোপন থাকেনি আর৷
সেই আসাঞ্জ'কে এরপর প্রথমে ফাঁসায় সুইডেন৷ ২০১০ সালে তিনি দুই মহিলার ওপর যৌন নিগ্রহ চালিয়েছিলেন, এই মর্মে মামলা আনা হয় আসাঞ্জ'এর বিরুদ্ধে৷ অন্যদিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের তীর তো ছিলই৷ তাদের বক্তব্য, আসাঞ্জ সে দেশের গোপন নথি পাচার করেছেন, যাকিনা আসলে একজন চরের কাজ৷ সুতরাং, মার্কিন অভিযোগে আসাঞ্জ একজন গুপ্তচর এবং তাঁর বিরুদ্ধে বহুধা অভিযোগ সেদেশে৷ স্রেফ হাতে পেলেই আসাঞ্জ'কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়াটা শুধুই ওই ‘হাতে পাওয়ার' অপেক্ষা৷
আসাঞ্জ নিজেও সেটা বেশ বোঝেন৷ সুইডেনের ওই দুই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে সেদেশের মামলার শুনানিতে তাঁকে সুইডেনে নিয়ে যাওয়া এবং তার পরেই বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় আসাঞ্জ'কে অ্যামেরিকার হাতে তুলে দেওয়া, এটাই সুইডেনের লক্ষ্য৷ অতএব আসাঞ্জ খুঁজছিলেন এমন একটা দেশ, যাদের সঙ্গে অ্যামেরিকার বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই৷ যেখান থেকে তাঁকে অ্যামেরিকায় টেনে নিয়ে গিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবেনা৷
তেমন দেশ হল ইকুয়েডর৷ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে গিয়ে তাই উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতা সেদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে মঙ্গলবার আর্জি জানিয়েছেন৷ ইকুয়েডর সরকার জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে৷ সুতরাং আসাঞ্জ'এর ভবিষ্যত এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ইকুয়েডরের এ বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর৷
এদিকে সিডনিতে বুধবার আসাঞ্জ'এর মা ক্রিস্টিন আসাঞ্জ তাঁর পুত্রের এই ইকুয়েডরে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন৷ বলেছেন, ‘ইকুয়েডর বা কোনো তৃতীয় বিশ্বের দেশ যদি আমার ছেলের পাশে দাঁড়ায়, সেটা মঙ্গলের হবে৷' পাশপাশি ক্রিস্টিন একথাও বলেছেন, আসাঞ্জ যে দেশের নাগরিক সেই অস্ট্রেলিয়া কোনোভাবেই তাঁর পুত্রকে সাহায্য করছে না৷ প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ার বামপন্থী গ্রিন দলের সিনেটর স্কট লুডলাম সংবাদসংস্থা এএফপি'কে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরে একমাত্র তাঁদের রাজনৈতিক দল উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতার পাশে রয়েছে৷ কিন্তু ইকুয়েডর সরকারের কাছে আসাঞ্জ যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন, সেটি ভালো করে পড়ে দেখে তাঁর ধারণা হয়েছে যে, নিজের আসল দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রতি কোনো আস্থাই নেই জুলিয়ান আসাঞ্জ'এর৷ পাশাপাশি আসাঞ্জ এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনোভাবে তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড শোনানো বা যাবজ্জীবন কারাগারে নিক্ষেপের চেষ্টা যে ওয়াশিংটন করছে, সে বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল আর চিন্তিত৷
এক্ষেত্রে নিজের স্বদেশের বা অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতির প্রতি কোনোরকমের আস্থা রখতে ব্যর্থ জুলিয়ান আসাঞ্জ স্বয়ং৷ প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়া সরকারের তরফে অর্থমন্ত্রী ওয়েন সোয়ান সংবাদসংস্থা এএফপি'কে জানিয়েছেন, আসাঞ্জ কাণ্ডের বিষয়ে পূর্বাপর কোনো তথ্যই তাঁদের কাছে নেই৷ ওয়াশিংটন তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এনেছে তাও অস্ট্রেলিয়া সরকার জানেনা৷ লন্ডনের অস্ট্রেলীয় দূতাবাসে গিয়ে একজন প্রবাসী অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হিসাবে কিছু সহায়তা আসাঞ্জ পেতে পারেন৷ কিন্তু ওই পর্যন্তই৷ এর বাইরে কোনো বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সোয়ান৷
এসইউবি / ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)