ইউরোপের ভবিষ্যৎ
২৪ এপ্রিল ২০১২বাজারে অনিশ্চয়তা
ইউরো এলাকার অনিশ্চয়তাকে কেন্দ্র করে চলতি সপ্তাহেও ইউরোপের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে৷ সেই পুরানো প্রশ্নই বার বার ফিরে আসছে – অস্বাভাবিক বাজেট ঘাটতি বন্ধ করতে কড়া হাতে রাশ টানা দরকার, না কি বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও অর্থ ঢালা দরকার? দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে বাজেটে ভারসাম্য আনা প্রয়োজন, এ সম্পর্কে সবাই মোটামুটি একমত বটে৷ কিন্তু আপাতত পুঁজিবাজার চাইছে আরও বিনিয়োগ৷ ব্যয় সংকোচের ফলে বেকারত্ব, বিনিয়োগের অভাব, কর বাবদ সরকারি আয়ে ঘাটতির মতো সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠছে৷
সোমবার গোটা ইউরোপ জুড়ে বাজারে বিশাল দরপতন দেখা গিয়েছিল, যার প্রভাব অ্যামেরিকা এবং এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ মঙ্গলবার অবশ্য বাজার আবার সামান্য কিছুটা সামলে নিয়েছে৷ মূলত ব্যাংকিং জগতের উদ্যোগের ফলেই ধাক্কা সামলানো গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
রাজনৈতিক স্তরেও বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সংকট দেখা যাচ্ছে৷ মাত্রাতিরিক্ত বাজেট ঘাটতি কমানোর বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে না পেরে সোমবার নেদারল্যান্ডস'এর সরকার পদত্যাগ করেছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে সমাজতন্ত্রী প্রার্থী ফ্রঁসোয়া ওলঁদ'এর জয় হয়েছে৷ আগামী ৬ই মে প্রেসিডেন্ট সার্কোজি'কে পরাজিত করে ক্ষমতায় এলে বাজেট ঘাটতি সংক্রান্ত কড়া নিয়ম বাতিল করতে চান তিনি৷ নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে পরাজয়ের পর সার্কোজি বলেন, ‘‘ফরাসিরা সংকট সম্পর্কে তাদের রায় দিয়েছে৷ নতুন এই বিশ্ব ব্যবস্থায় তাদের অস্থিরতা, কষ্ট ও আতঙ্কের প্রতিফলন ঘটেছে ব্যালট বাক্সে৷ এই ভয় ও কষ্ট যে কী, তা আমি জানি, ভালভাবেই বুঝতে পারি৷''
ইউরোপীয় ঐক্য নিয়ে সংশয়
এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপ তার ঘোষিত নীতি আদৌ কার্যকর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে৷ তাছাড়া ইউরোপের ‘চালিকা শক্তি' বলে পরিচিত জার্মানি ও ফ্রান্স সার্কোজি'র আমলে সংকটের সময় যে যৌথ নেতৃত্ব দেখাতে পেরেছে, ওলঁদ ও ম্যার্কেল তা চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন৷ অবশ্য জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে মঙ্গলবার বলেছেন, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৫টি দেশ সম্প্রতি যে নিয়ম মেনে নিয়েছে, তাতে কোনো নড়চড় হবে না৷
যত মত, তত পথ
সরকারি ব্যয় সংকোচ ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চাপ সামলাতে ইউরোপের দেশগুলি পথ খুঁজছে৷ আপাতত সবার নজর স্পেন ও ইটালির দিকে৷ দুই দেশেই সরকার অনেক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজেটে বিশাল কাটছাঁট করছে৷ ইটালি সেইসঙ্গে আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গোটা অর্থনৈতিক কাঠামোকে আধুনিক করে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তবে তার সুফল পেতে অনেক দিন সময় লাগবে৷
এই মুহূর্তে চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে স্পেন ও ইটালিকে৷ সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মন্দার কথা স্বীকার করে নিয়েছে৷ গোটা ইউরোপ জুড়ে উৎপাদনের হার কমে চলেছে৷ এমনকি জার্মানিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ তবে জার্মান শিল্প জগত সরকারি ব্যয় সংকোচের মাত্রা আরও বাড়ানোর ডাক দিচ্ছে৷ অ্যামেরিকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একনাগাড়ে ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ'এর মাধ্যমে অর্থ ঢেলেছিল৷ ইউরোপ সেই পথে এগোচ্ছে না৷ ইউরোপে লাগাতার অনিশ্চয়তার ফলে বিনিয়োগকারীরাও স্থির করতে পারছেন না, কোথায় তাঁরা অর্থ লগ্নি করবেন৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, (রয়টার্স, এপি)
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়