জার্মানির উত্থান
১১ এপ্রিল ২০১২শুক্র থেকে সোমবার বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার সকালে ইউরোপের পুঁজিবাজার ছিল পড়তির দিকে৷ বিশেষ করে ব্যাংকগুলির শেয়ারের মূল্য বেশ বড় মাত্রায় নেমে যায়৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরো এলাকার ঋণ সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তা এখনো কাটছে না৷ তার উপর বাজেট ঘাটতির মাত্রা কমাতে স্পেন তড়িঘড়ি করে ব্যাংকগুলির রাষ্ট্রীয় শেয়ার বিক্রি করছে৷ ইটালির ব্যাংকগুলি মার্চ মাসে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক – ইসিবি থেকে রেকর্ড ২৭,০০০ কোটি ইউরো ঋণ নিয়েছে৷ পর্তুগালের ব্যাংকিং জগতও ভীষণভাবে ইসিবি'র উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে৷ এসব ঘটনার ফলে বাজারে তারল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ তাছাড়া বিশ্বায়নের এই যুগে কোনো এলাকার আর্থিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ যেমন ইউরোপের দুর্বলতার কারণে চীনের রপ্তানি বাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ সেদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদাও কমতির দিকে৷ অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ধীর গতির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতির হার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না৷ এই সব খবর পেয়ে ইউরোপের পুঁজিবাজারও চিন্তিত, কারণ এই দুই দেশের সঙ্গে ইউরোপের রপ্তানি বাণিজ্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷
মোটকথা ইউরো এলাকা সম্পর্কে বাজার এখনো উদ্বিগ্ন৷ ভবিষ্যত সংকট কাটাতে জরুরি তহবিলের মতো রক্ষাকবচের সিদ্ধান্তকে বাজার স্বাগত জানিয়েছিল বটে৷ কিন্তু ইউরো এলাকার দুর্বল দেশগুলি এই মুহূর্তে কী করছে, সেটাও উপেক্ষা করতে পারছে না আর্থিক জগত৷ তার উপর ফ্রান্সের অর্থনীতি আপাতত মন্দা এড়াতে পারলেও বছরের প্রথম তিন মাসে ঘুরে দাঁড়াতে পারে নি৷ পেট্রোলিয়ামের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলেও ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খাচ্ছে৷ ইউরো'র বিনিময় মূল্যের হেরফেরের ফলে ক্ষতির সঠিক মাত্রা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই প্রবণতা অবশ্যই অপ্রত্যাশিত এক সংকট বয়ে এনেছে৷ পেট্রোলিয়ামের দাম ইউরো মুদ্রায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে৷ আইএমএফ'এর পূর্ববাণী অনুযায়ী ২০১২ সালে ইউরো এলাকার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ০.৫ শতাংশ কমে যাবে৷
এই অবস্থায় একমাত্র সুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে জার্মানি থেকে৷ মঙ্গলবারই জার্মানির রপ্তানি সংক্রান্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে যে জার্মান অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ বিশেষ করে গত মাসেই শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের হার ১.৩ শতাংশ কমে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল৷ কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে যে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানির রপ্তানির মাত্রা ছিল ৯,১৩০ কোটি ইউরো৷ অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় রপ্তানির হার ৮.৬ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ বিশেষজ্ঞরা এমনটা ভাবতেই পারেন নি৷ অতএব ইউরো এলাকার রক্ষাকর্তা হিসেবে জার্মানির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেল বলা চলে৷ সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে ইউরোপের আর্থিক ও অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি স্থির করার ক্ষেত্রে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল'এর সরকার আরও শক্তিশালী কণ্ঠে সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ অনেকের ধারণা, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা থেকে শুরু করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে জার্মানির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গোটা ইউরোপে অনুসরণ করার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ