ইউরোপে প্রবেশের হাই-টেক ব্যবস্থা
২ মার্চ ২০১৩খোলামেলা ও আকর্ষণীয় অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের কাছে ইইউ এক উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায়৷ বহিরাগতরা যাতে সহজেই ইউরোপে প্রবেশ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা চালু করতে চায় এই রাষ্ট্রজোট৷ ইইউ-র স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনর সেসিলিয়া মাল্মস্ট্র্যোম বলেছেন, এই লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বর্ডার্স' নামের এক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে৷ যারা ঘনঘন ইউরোপে আসেন, তাঁরা এই পদক্ষেপের ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন৷
ইউরোপীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে ইউরোপের অর্থনীতিতে প্রায় ২৭,১০০ কোটি ইউরোর বাড়তি অবদান রেখেছেন ইউরোপের বাইরের মানুষ৷ তাই পর্যটক, ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী ও গবেষকরা যাতে যত সহজে সম্ভব ইউরোপে প্রবেশ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন মাল্মস্ট্র্যোম৷ তাছাড়া আজকের আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে পাসপোর্টের উপর হাতে করে ছাপ মারার পদ্ধতিও আর খাপ খায় না বলে মনে করেন তিনি৷
‘স্মার্ট বর্ডার্স' প্রকল্পের আওতায় থাকছে দুটি ব্যবস্থা, যার পোশাকি নাম ‘রেজিস্টার্ড ট্রাভেলার্স প্রোগ্রাম' বা ‘আরটিপি' ও ‘এন্ট্রি-এক্সিট সিস্টেম' বা ‘ইইএস'৷ বিমানবন্দর, স্থল সীমানা, বন্দরের প্রায় ২,০০০ প্রবেশপথে প্রায় ১০০ কোটি ইউরো মূল্যের এই পদক্ষেপ চালু করা হবে৷ ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সব সদস্য দেশে এই প্রকল্প রূপায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
যারা ঘনঘন ইউরোপে যাতায়াত করেন, ‘আরটিপি' ব্যবস্থার আওতায় তাঁরা একবার নিজেদের নথিভুক্ত করতে পারবেন৷ তারপর সেই তথ্য যাচাই করার পর তাঁরা মাশুল দিয়ে একটি বিশেষ ‘চিপ' হাতে পাবেন৷ সীমান্তে বিশেষ যন্ত্রে সেই চিপ ধরলেই হলো, অবাধে প্রবেশ করা যাবে ইউরোপে৷
‘ইইএস' ব্যবস্থার আওতায় বহিরাগতদের বায়োমেট্রিক তথ্যসহ ভিসার মেয়াদ নথিভুক্ত থাকবে৷ কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সেই তথ্য জমা থাকার ফলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে মেয়াদ ফুরানোর পর অবৈধভাবে ইউরোপে থাকা কঠিন হবে৷ এই সব তথ্য জমা রাখার বিষয়ে কিছু বিতর্ক অবশ্য এখনো চলছে৷ কিছু মহল সেই তথ্যের অপব্যবহারের আশঙ্কা করছে৷ নতুন এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও কিছু প্রশ্ন উঠছে৷ যেমন বহিরাগত কোনো ব্যক্তি ইলেকট্রনিক চিপ নিয়ে ইইউ-তে প্রবেশ করার পর তিনি কোথায় যাচ্ছেন, তা বোঝার কোনো উপায় থাকবে না৷ তাছাড়া কেউ যদি অসুস্থতার মতো কারণে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ইউরোপে থাকতে বাধ্য হন, তাঁকেও অপরাধী হিসেবে ধরে নেওয়া অন্যায় হবে বলে সমালোচকরা মনে করেন৷ গোটা প্রকল্পের বিশাল ব্যয়ভার ইউরোপের পক্ষে সত্যি বহন করা সম্ভব কি না, তারও সদুত্তর পাওয়া যায়নি৷