ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ
২ মার্চ ২০১৭ইইউ থেকে ব্রিটেনের বিদায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রক্রিয়ায় হয়তো কিছুটা বিলম্ব হবে৷ তবে ‘ব্রেক্সিট'-এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ থেমে যাবে না৷
কিন্তু এতকাল যেমনটা চলে আসছিল, সেভাবেই সব চলবে – এমনটা আশা করা কঠিন৷ কারণ বাকি ২৭টি দেশের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে৷ একাধিক সংকটের ফলে রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ঐকমত্য বার বার ধাক্কা খাচ্ছে৷ চলতি বছর ৬০ বছর পূর্ণ করছে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়া৷ এই অবস্থায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জঁ ক্লোদ ইয়ুঙ্কার সদস্য দেশগুলির শীর্ষ নেতাদের জন্য পাঁচটি মডেলের খসড়া তৈরি করেছেন৷
এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের পর আগামী বছরের শেষে শীর্ষ নেতারা মিলিত হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন – এমনটাই তাঁর প্রস্তাব৷
অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় মরিয়া হয়ে এই পদক্ষেপ নিলেন ইয়ুঙ্কার৷ ইইউ-র ভাবমূর্তি প্রায় তলানিতে ঠেকেছে৷ ব্রাসেলসের ঘাড়ে সব দোষ চাপানোর প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ তবে ইয়ুঙ্কারের মডেল প্রস্তাবগুলি নিয়েও তর্ক-বিতর্ক কম হবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত, কারণ:
– ‘যেমন চলছে চলুক’ নীতি আঁকড়ে ধরে থাকা সবচেয়ে সহজ বিকল্প হলেও এমন অবস্থান নিলে মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধান করা কঠিন হবে৷
– ‘একক সাধারণ বাজার’ মডেলে ফিরে গেলে এতকালের অনেক অর্জন বিফল হয়ে যাবে৷ সে সব বিষয় আবার জাতীয় সরকারগুলির এক্তিয়ারে চলে যাবে৷ কিন্তু তার ফলে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবার আনন্দ থাকলেও অনেক সমস্যারই একক সমাধান সম্ভব নয়৷
– ‘বিভিন্ন গতির ইউরোপ’ মডেল বর্তমান অনেক সংকটের সহজ সমাধান হতে পারে৷ কিছু সদস্য রাষ্ট্র মিলে নির্দিষ্ট বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাবে, বাকিরা সেই কাঠামোর বাইরে থাকবে৷ এর ফলে অবশ্য স্বচ্ছতার অভাব দেখা দেবে, ইইউ-র মধ্যে সাম্য বিনষ্ট হবে৷
– ‘মৌলিক ক্ষমতাগুলি ত্যাগ’ করলে ইইউ আরও দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে বটে, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ইইউ ক্ষমতা ধরে রাখবে, তা নিয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সহজ হবে না৷
– ‘সহযোগিতা কমানোর বদলে আরও সম্প্রসারণ’ করলে ইইউ প্রায় এক ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত হবে৷ কিন্তু বর্তমানে এই ভাবমূর্তিই ইইউ-র বড় সমস্যা৷ অনেকেই মনে করে যে গণতান্ত্রিক বৈধতা ছাড়াই ব্রাসেলসের হাতে বড় বেশি ক্ষমতা চলে গেছে৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চান৷ তাঁর মতে, ইউরোপের মানুষকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে হবে, ইইউ কী করতে পারে এবং কী পারে না৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের হাতে চাঁদ ও সূর্য তুলে দেওয়া সম্ভব নয়, আমরা শুধু টেলিস্কোপ দিতে পারি৷’’ অর্থাৎ বাস্তবের ভিত্তিতে প্রত্যাশার মাত্রা বেঁধে দিয়ে ইইউ-র ভাবমূর্তির উন্নতি করতে চান তিনি৷
আগামী ২৫শে মার্চ ইটালির রাজধানী রোমে ইইউ-র ৬০তম জন্মদিন পালনের সময়ে শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে চলেছেন৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)