1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউ পর্যবেক্ষক না পাঠানোর মানে কী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন ( ইইউ)। নির্বাচনের পরিবেশ "পর্যবেক্ষণ উপযোগী নয়” বলে ছোট আকারের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে পারে বলে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4WeKg
ইউরোপের পতাকা (প্রতীকী ছবি)
ইউরোপের পতাকা (প্রতীকী ছবি)ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং-এ ইইউর পর্যবেক্ষণ দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, "তারা বাজেট স্বল্পতার কারণে পাঠাচ্ছে না।”

প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে  এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।” আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন. "নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক পাঠানো বা না পাঠানোর ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে দেশের জনগণের ওপর।”

অন্যদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা নিজেরাইতো দেখতে পাচ্ছি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। তাহলে এখানে ইইউ পর্যবেক্ষক দল এসে কী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে?”

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আগে বাংলাদেশে আসা প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত জুলাই মাসে ছয় সদস্যের একটি প্রাক-নির্বাচন অনুসন্ধান দল বাংলাদেশ সফর করে। তারা নির্বাচন কমিশন ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে। তারা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলেন। তারা অনুসন্ধান করে ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের কাছে প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেন। তার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে বুধবার চিঠি দিয়ে নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান জোসেপ বোরেল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও চিঠির কপি দিয়ে বিষয়টি জানানোর হয়েছে। চিঠিতে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ উপযোগী নয় বলে জানানো হয়েছে। আরো বলা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পুরণ করা হবে কী না তা এই মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। আর বাজেটের স্বল্পতার কথাও বলা হয়েছে। তবে ইইউ বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার জন্য বিকল্প বিবেচনায় রাখছে। সেক্ষেত্রে  নির্বাচনের সময় ছোট আকারের একটি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠাতে পারে তারা। পূর্ণাঙ্গ টিমে দুইশরও বেশি সদস্য থাকে। তারা সাধারণত নির্বাচনের আগে , নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরে পর্যবেক্ষণ করেন।

‘ইইউর পর্যবেক্ষক দল মনে করছেন না যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে’

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং-এ জানান,"বাজেট স্বল্পতার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ টিম পাঠাবে না বলে জানিয়েছে।”

তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মেইলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন ইমেইলটি পাঠিয়েছেন।

সেই মেইলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "২০২৩-২৪ অর্থ বছরে তাদের পূর্ণাঙ্গ একটি মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানোর আর্থিক বিষয় ছিল, বাজেট স্বল্পতার কারণে তা নামঞ্জুর করা হয়েছে। তাই  আপাতত পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।”

নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কার কথা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "চিঠির ভাষায় এ জাতীয় কিছুর উল্লেখ নেই। শুধু তারা অবহিত করেছেন যে, তারা পূর্ণাঙ্গ টিম পাঠাবেন না। কাজেই ছোট দল পাঠাবেন, নাকি এই দেশে যারা আছেন তারাই করবেন সেটি বলেননি। তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।”

এদিকে বিএনপি মহানচিব মির্জা ফখরুল ইসলা আলমগীর বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর এই ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হচ্ছে, দেশে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।”

তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। এই বিষয়টি পরীক্ষিত। তাদের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না এবং জনগণ যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও সরকার যখন বিদেশিদের কাছে গিয়ে বলেছে এদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে, কোনো ধরনের সমস্যা নেই। তখন বিদেশিরা প্রাক পর্যবেক্ষক টিম পাঠিয়েছে। তারা সমস্ত কিছু সার্ভে করেছেন এবং সকল ধরনের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এখন স্পষ্ট করে বলেছেন, এ দেশে টিম পাঠানোর কোনো পরিবেশ নেই।” 

আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন,"পৃথিবীর কোনো দেশের নির্বাচন কি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর নির্ভর করে? বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। কোনা দেশের পর্যবেক্ষক আসলো কী আসলো না তার ওপর সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নির্ভর করে না। নির্ভর করে দেশের মানুষের ওপর। তারা যদি মনে করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলা যাবে। বাইরের দেশের কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না।”

‘কোনো দেশের নির্বাচন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর নির্ভর করে?’

তিনি বলেন,"আগামী নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। নির্বাচন অবাধ হবে।”

বিএনপি মহাসচিবের প্রতিক্রিয়ার জবাবে তিনি বলেন, "মির্জা ফখরুলরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাস্ট্রোলজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি তো নিজেকে স্বাধীন দেশের নাগরিক ভাবেন না। পরাধীন ভাবেন। এই কারণেই এসব কথা বলছেন।”

তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "ইইউর পর্যবেক্ষক দলের না আসার তাৎপর্য হলো, তারা মনে করছেন না যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন বাকি আছে চার মাস। একটি দল নির্বাচনে আসবে কী না তা নিশ্চিত নয়। সরকারি দল নির্বাচনের বহু আগেই অ্যাগ্রাসিভলি নির্বাচনের ক্যাম্পেইন করছে। সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাবিধ উক্তি করছে, এটা সেটা করছে। গ্রেপ্তার করা হচেছ। জেলে যাচ্ছে, বিচার হচ্ছে। এই সব মিলিয়ে আমরা নিজেরাও তো পরিবেশ দেখছি না। এই পরিবেশে পূর্ণাঙ্গ দল এসে কী নির্বাচন দেখবে!”

তার কথা,"নির্বাচন কমিশন যে কী করছে তাও আমি বুঝি না। নতুন কতগুলো দলকে রেজিষ্ট্রেশন দিচ্ছে। যারা না পাচ্ছে তারা কোর্টে গিয়ে আদেশ এনে রেজিষ্ট্রেশন নিচ্ছে। কোনো নির্দেশনা ছাড়াই ডিসি সাহেবরা প্রিজাইডিং অফিসারদের তালিকা করছেন। এই অথরিটি তাদের কে দিয়েছেন?”

তিনি বলেন,"সরকারি দল যে বলছে তাদের ( ইইউ পর্যবেক্ষক) আসা না আসার ওপর ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করেনা। কিন্তু এর আগে যে দুইটি নির্বাচন হয়েছে দেশের মানুষ কী তা গ্রহণ করেছে? পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিতে পারলে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে কেন? এবার তো আবার ব্যালটে নির্বাচন হবে। তাহলে তো আরো মহা আনন্দ হবে ভোট কারচুপির।”

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকেরা এসেছিলেন। ২০১৪  এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসোননি।